রাজশাহীর চিড়িয়াখানায় প্রথম বাচ্চা দিল ময়ূর, ব্যর্থ ঘড়িয়াল

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 23:22:07

রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় প্রথমবারের মতো ডিম দিয়েছিল একটি ঘড়িয়াল এবং একটি ময়ূর। ঘড়িয়াল ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা ফোটাতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সফল হয়েছে ময়ূর। ময়ূরের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার ঘটনা রাজশাহী চিড়িয়াখানায় এবারই প্রথম। দর্শনার্থীরা বিষয়টি জানার পর বাচ্চা দেখতে ভিড় করছে ময়ূরের খাঁচার চারপাশে। এ নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

জানা গেছে, ঘড়িয়ালের ডিম থেকে বাচ্চা হলে এটিও প্রথমবারের মতোই হতো। তবে দুর্ভাগ্যবশত ঘড়িয়ালের ডিম নষ্ট হয়ে চিড়িয়াখানার পুকুরের পানিতে ভেসে ওঠে। সম্প্রতি এমন ঘটনার পর চিড়িয়াখানার কর্মীদের যখন মন খুব খারাপ, ঠিক তখনই ময়ূরের ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। বাচ্চাটির বয়স এখন ১০-১২ দিন।

চিড়িয়াখানা সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী চিড়িয়াখানায় আগে দু’টি মাদি ঘড়িয়াল ছিল। আর ঢাকায় ছিল দুটি পুরুষ ঘড়িয়াল। কিন্তু পুরুষের সঙ্গে নারী কিংবা নারীর সঙ্গে পুরুষ না থাকায় মহাবিপন্ন এই প্রাণিটির প্রজনন হচ্ছিল না।

ঘড়িয়ালদের এই বিরহ কাটিয়ে প্রজননের সুযোগ করে দিতে ২০১৭ সালের আগস্টে চিড়িয়াখানা ও বন বিভাগের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) আন্তঃচিড়িয়াখানা ঘড়িয়াল বিনিময় করে। সরকারের ‘ঘড়িয়াল কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যানের’ অংশ হিসেবে দুই চিড়িয়াখানার মধ্যে এই ঘড়িয়াল বিনিময় সম্পন্ন হয়।

এর মাধ্যমে রাজশাহী থেকে একটি মাদি ঘড়িয়ালকে ঢাকায় পাঠানো হয় এবং ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়ালকে রাজশাহী আনা হয়। এরপর রাজশাহীর মাদি ঘড়িয়ালটির নাম দেওয়া হয় ‘পদ্মা’। আর পুরুষটির নাম হয় ‘গড়াই’। প্রায় ৩০ বছর বয়সী পদ্মা ও গড়াইয়ের সংসার শুরু হয়। প্রায় ২০ মাস পর সম্প্রতি পুকুরে একটি ডিম পান চিড়িয়াখানার কর্মীরা। কিন্তু ডিমটি ছিল নষ্ট। তাই ভেসে উঠেছিল পানিতে।

চিড়িয়াখানার পশু পরিচর্যাকারী মো. বাবর আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, লক্ষণ দেখেই তারা বুঝেছিলেন পদ্মা ডিম দিয়েছে। কিন্তু ডিম দেওয়ার জন্য তারা পুকুরের মাঝের অংশে বালু দিলেও সেখানে পদ্মা ডিম পাড়েনি। ডিম দিয়েছিল পানির নিচেই। সম্প্রতি ডিমটি পানিতে ভেসে ওঠে। প্রথমবার ডিম দেওয়ার কারণে ডিমটি নষ্ট হয়ে গেছে বলে তার ধারণা। তবে পুকুরে এখনো কোনো ডিম আছে কিনা, তা নিশ্চিত নন তারা।

বাবর আলী বলেন, ‘ডিমটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সকলেরই মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে সবাই এটার দেখভাল করছি। ওদেরকে নিজেদের সন্তান মনে হয়। তবে ঘড়িয়ালের ডিম নষ্ট হওয়ার দুই দিন পরই ময়ূরের বাচ্চা ফোটায় সবাই বেশ খুশি।’

ময়ূরের দেখভালে নিয়োজিত সাইদুর রহমান জানান, রাজশাহী চিড়িয়াখানায় অনেক আগে বেশকিছু ময়ূর ছিল। সেগুলো একে একে মারা যায়। তাই তিন বছর আগে ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ও একটি মাদি ময়ূর আনা হয়। এরপর এবারই প্রথম মাদি ময়ূরটি দু’টি ডিম দেয়। এর মধ্যে একটিতে বাচ্চা ফুটেছে। অন্যটি নষ্ট হয়ে গেছে। চিড়িয়াখানায় এবারই প্রথম কোনো ময়ূরের বাচ্চা ফুটলো।

চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে জানান, দেশের চিড়িয়াখানায় এখন মাত্র ১১টি ঘড়িয়াল আছে। আর বিভিন্ন নদীতে ৫৮টি ঘড়িয়াল দেখতে পাওয়া গেছে। তাই চিড়িয়াখানায় ডিম থেকে ঘড়িয়ালের বাচ্চা ফোটানো নিয়ে তারা বেশ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাচ্চা ফোটেনি। তবে ময়ূরের বাচ্চা ফোটয়ি তারা বেশ খুশি।

ভবিষ্যতে ঘড়িয়ালেরও বাচ্চা ফুটবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর