বিদ্যুৎ বিভাগে ১২৪ কোটি টাকার অডিট আপত্তি

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 20:57:56

কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের ১২৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ২৪৪ টাকার অডিট আপত্তি ধরা পড়েছে। এই টাকার মধ্যে কোনোটি দীর্ঘদিন বিল পরিশোধ না করা সত্ত্বেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা, প্রকল্পে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে নির্ধারিত হারের চেয়ে কম ভ্যাট আদায় করা, এক প্রকেল্পের টাকা অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করাসহ একাধিক আর্থিক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে।

দীর্ঘদিনের এই অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি না করায় মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি হিসেবে দেখছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। অল্প সময়ের মধ্যে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছি, সেই সময়ের মধ্যেই টাকা আদায় করতে হবে। দীর্ঘদিন সরকারি টাকা অনাদায় থাকবে, এটা হতে দেব না। এর মধ্যে কিছু টাকা আদায় হয়েছে। বাকিগুলো আগামী এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার কথা বলা হয়েছে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির কারণে দীর্ঘদিন বিল পরিশোধ না করা সত্ত্বেও ৪২০ জন গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে অনিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করায় সংস্থার মোট ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৪ টাকা অডিট আপত্তি হয়েছে। এই অনাদায়ী টাকা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আদায় করে প্রমাণসহ অডিট অফিসে জমা করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল হতে নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে  ভ্যাট কর্তন করায়  সরকারের ২৩ কোটি ৮৮ লাখ ৪১ হাজার ২৫২ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ায় সরকারের এক কোটি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ২৮৮ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখে গ্রাহক উধাও। ঐ সকল নিখোঁজ গ্রাহকদের নিকট হতে পাওনা বিদ্যুৎ বিল আদায় না করায় আর্থিক ক্ষতি ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৩ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এই টাকা আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আদায় করার জন্য মন্ত্রণালয়কে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

এছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে এক প্রকল্পের অর্থ অন্য প্রকল্পে ও এসটিভি হিসাব হতে সিডি ভ্যাট খাতে অর্থ স্থানান্তর করায় ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ভাউচারে প্রদর্শিত অতিরিক্ত অর্থ চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করায় ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩৬ হাজার ৭৬৮ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

বৈঠকে অনুমোদিত লোডের অতিরিক্ত লোড ব্যবহার করা সত্ত্বেও ট্যারিফ বিধি মোতাবেক বিল প্রস্তুত ও আদায় না করায় ভ্যাটসহ ৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৯ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুস শহীদ, মো. আফছারুল আমীন, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জহিরুল হক ভূঁঞা মোহন, মনজুর হোসেন, আহসানুল ইসলাম (টিটু) ও ওয়াসিকা আয়েশা খান অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের  ২০১২-১৩ অর্থবছরের হিসাব  সম্পর্কিত  মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের  বার্ষিক অডিট রিপোর্ট ২০১২-১৩ এর অডিট আপত্তির অনুচ্ছেদ ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, অডিট অফিসের ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর