২০০ বছরের পুরনো ফুলচৌকি মসজিদ, নেই সংস্কার

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-09-01 08:02:14

ফুলচৌকি মসজিদ। মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি। উত্তরের বিভাগীয় জেলা রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ফুলচৌকি গ্রামে মসজিদটির অবস্থান। গ্রামের নামেই নামকরণ হয়েছে মসজিদটির।

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তালিকাভুক্ত এই মসজিদটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হলেও দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কার হয়নি। চাকচিক্যে ভাটা পড়েছে। পথের ধুলা-বালিতে বদলে গেছে রঙ। এমন অবস্থায় দূর থেকে মিনার না দেখে বোঝার উপায় নেই এটি মসজিদ।

প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এ স্থাপনার সংস্কার ও প্রচারের অভাবে কমে গেছে পর্যটকদের আনাগোনাও। তবে এ মসজিদে নিয়িমিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়। তাই মসজিদটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত মসজিদটির জীর্ণতার মাঝেও আছে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ। দূর থেকে যতটা না সুন্দর দেখায়, তার চেয়েও বেশি সুন্দর কাছে থেকে দেখতে।

মসজিদটি আয়তকার এবং প্রতিটি কোণায় গোলাকার কিউপলা যুক্ত স্তম্ভ রয়েছে। যার নিচের অংশ কলসাকৃতি। মসজিদের সামনে খোলা অঙ্গন (সাহান) অনুচ্চ প্রাচীর বা বেষ্টনী দ্বারা আবৃত।

মসজিদের প্রবেশদ্বারের পূর্বপাশ ঘেঁষে একটি পরিকল্পিত ফুল বাগান ছিল। বাগানটিতে সৌন্দর্যময় স্থাপত্য রাখা হয়েছিল। বর্তমানে স্থানীয়রা সেই জায়গাটি কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত করছে। মসজিদের পাশে ইমামের থাকার জন্য মিনার বিশিষ্ট একটি কক্ষ বা ঘরও আছে।

এই মসজিদ প্রাঙ্গণে শায়িত আছেন বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রাণপুরুষ শহীদ নবাব নুরুউদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জং। তিনি দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের (২য়) আপন চাচাতো ভাই ও ভগ্নিপতি। ইংরেজ শাসন উৎখাতে তিনি ১৭৬০ থেকে ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্যবার সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

জমিদারির লোভে 'দিবা ও নিশি' নামক দুইজন বিশ্বাসঘাতকের ষড়যন্ত্রে নুরুউদ্দিন বর্তমান লালমনিরহাটের আদিতমারীর মোগলহাটে বৃটিশ সেনাদের অতর্কিত হামলায় আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে তাঁর নির্মাণাধীন রাজধানী ফুলচৌকিতে নেওয়া হয়। আহত অবস্থায় ১৭৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ফুলচৌকির নিজ বাসভবনে মারা যান।

এখানে আরও অনেক যোদ্ধার সঙ্গে ঘুমিয়ে আছেন রংপুরের একজন ঐতিহাসিক ও নবাব নুরুউদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জংয়ের বংশধর হায়দার আলি চৌধুরী। তার বিখ্যাত ইতিহাস খ্যাত বই ‘পলাশী যুদ্ধোত্তর আযাদী সংগ্রামের পাদপীঠ’।

 

ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ফুলচৌকি মসজিদটি রংপুর শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে মিঠাপুকুরের গড়েরমাথা নামক স্থান হয়ে পশ্চিম দিকে বিরামপুর-দিনাজপুর সড়কে শুকুরেরহাট হয়ে সেখান থেকে আরও ২ কিলোমিটার পশ্চিমে ফুলচৌকি গ্রামে এর অবস্থিত।

ফুলচৌকি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী আজহার আলী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা জন্মের পর থেকে এই মসজিদ দেখে আসতেছি। বাপ-দাদারাও দেখেছেন। মসজিদটি প্রায় দুইশ’ বছরের পুরনো হলেও সরকার থেকে কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। আমরা স্থানীয়রা টাকা-পয়সা দিয়ে মসজিদের কাজ করি।’

মসজিদটিতে নিয়মিত মুসল্লি ইব্রাহিম ব্যাপারী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গ্রামবাসীরা পুরনো এই মসজিদটির সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এবং সরকারি দফতরে অনেকবার সহযোগিতা চেয়েছেন, কিন্তু কেউ কোনো সহযোগিতা করেননি।’

এ ব্যাপারে ময়েনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুল আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে এখানে সরকারিভাবে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে মসজিদটির সংস্কারের তেমন কোনো বরাদ্দ আসেনি। এলাকাবাসীরা মিলে মসজিদটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এটি সংস্কার করে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো হলে দূর দূরান্তের দর্শনার্থীরাও আসবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর