সারা বছর ময়লা পানির নিচে থাকে ডিএনসিসির যে রাস্তা

ঢাকা, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-19 20:23:19

বৃষ্টি হলে রাস্তায় একটু পানি জমবে এটা স্বাভাবিক। আবার রোদ হলে সেই পানি শুকিয়ে যাওয়াটাও সাধারণ নিয়ম। কিন্তু যে জায়গা বৃষ্টি ছাড়াই সব সময় পানির নিচে থাকে, সে জায়গা নিয়ে স্থানীয়রা রসকিতা করে বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই যে রাস্তায় পানি জমে, সে রাস্তায় আর কি হবে?

কেউ বলেন, ১২ মাসই রাস্তাটি পানির নিচে থাকে। তাও আবার মানুষের পয়োবর্জ্য, ড্রেনের ময়লা পানি। দুর্গন্ধে পুরো এলাকা দূষিত হচ্ছে। এই রাস্তার পাশেই রয়েছে প্রতিভা আইডিয়াল নামে একটি স্কুল। যে স্কুলে কয়েকশ’ কোমলমতী শিশুরা লেখাপড়া করে।

প্রাচীরের নগরীতে এমনিতেই মুক্ত বাতাস পাওয়া দুষ্কর। যাও একটু আসবে সেই বাতাসও দুর্গন্ধময় হওয়ায় স্কুলের জানালা বন্ধ করে রাখাতে হয়। ফলে ভ্যাপসা গরমেই ক্লাস করতে হচ্ছে বাচ্চাদের। এই দুর্গন্ধের কারণে অনেক বাচ্চা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রতিভা আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণব কুমার মালো বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কি বলার আছে? আমাদের স্কুলে ৩০০ ছাত্রছাত্রী আছে। আমাদের কিছু ছাত্রছাত্রী আছে যারা এই ময়লা পানি ডিঙিয়ে আসে। আবার কেউ দুর্গন্ধ আর ময়লা পানি ডিঙিয়ে আসতে পারে না। এখানে বৃষ্টি লাগে না, এমনিতেই সারা বছর ময়লা পানি থাকে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা- কেউ দেখে না।’

শ্যামলী হাউজিংয়ের স্থায়ী বাসিন্দা আনিস আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনের কাছে আগে কয়েকবার অভিযোগ করেছি। সিটি করপোরেশন থেকে লোক পাঠালে তারা এসে কোনো রকম পরিষ্কার করে যান। আবার দুই-চার দিন গেলে যা তাই হয়ে যায়। আমরা কি তাদের ট্যাক্স দেই না? তাহলে কেন এমন অবস্থার মধ্যে থাকব?’

রাস্তায় নোংরা কাদা, ছবি: বার্তা২৪.কম

 

এই বাড়িওয়ালা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মেয়র তো আসলে ধনী এলাকার জন্য, আমাদের জন্য না। তিনি কি এসব বিষয়ে খোঁজ রাখেন না? আর মিডিয়ায় প্রচার করে কি হবে? এসব মেয়র সাহেব দেখেন নাকি?’

এই এলাকার ভাড়াটিয়া টিটু বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখানে আসলে বৃষ্টি নামতে হয় না। আমি দুই বছর ধরেই দেখছি, সব সময় রাস্তাটি ময়লা পানির নিচে থাকে। সিটি করপোরেশন কিছু দিন আগে রাতে এমন কার্পেটিং করেছিল যে সেটা ধুয়ে গেছে। আর দেখেন, রাস্তার ভেতর থেকে কীভাবে ময়লা পানি বের হচ্ছে? সিটি করপোরেশন বলে ওয়াসার আর ওয়াসা বলে ড্রেন আমাদের না। আসলে এটা কে দেখবে সেটাই কেউ জানে না। আমরা যারা এখানে আছি, তারাই বিপদে পড়েছি। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারি না, দুর্গন্ধের কারণে আত্মীয়-স্বজন বাসায় আসতে চায় না।’

বলছিলাম মোহাম্মদপুর এলাকার শেখেরটেক-৬ নম্বর রোডের শেষ মাথায় শ্যামলী হাউজিং রাস্তার কথা। প্রতিভা আইডিয়াল স্কুলের সামনে থেকে পশ্চিম দিকে ৬০ গজ রাস্তা, মা ফার্মেসি, উত্তর দিকে ফাতেমী ফার্মেসির সামনের পুরো রাস্তাটাই ময়লা পানির নিচে। এখানে দুই একটি বাড়ির সুয়্যারেজ লাইন থেকে মানুষের বর্জ্য সরাসরি রাস্তার ওপর এসে পড়ছে।



বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ আহসানের সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাউজিংগুলোর মধ্যে আমাদের অবস্থা দুর্বল। কেননা তারা যখন হাউজিং করেন তখন আমাদের কাছ থেকে স্যুয়ারেজ ড্রেনের অনুমোদন ছাড়াই করেন। এখানে শুধু শ্যামলী হাউজিং না, অন্যান্য হাউজিংগুলোতেও একই অবস্থা। তারপরও ধারাবাহিকভাবে আমাদের কাউন্সিলররা প্রতিবছর একটা-দুইটা করে রাস্তা দেন, সেগুলো উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়ে আমরা স্যুয়ারেজ লাইন, ড্রেন করে দেই। তারপরও যে রাস্তার কথা বলা হচ্ছে, আমাদের লোক পাঠাব, তারা সরেজমিন দেখে এলে আমাদের কিছু করণীয় থাকলে করব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর