ভবন খাচ্ছে খোলা জায়গা, বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে ঢাকা

ঢাকা, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 03:34:40

জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অনেক শহরের চেয়ে এগিয়ে। ছোট এই শহরে অন্তত কোটি লোকের বসবাস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের জন্য নয় বর্গমিটার খোলা জায়গা বা মাঠ থাকা দরকার। তার ধারের কাছেও নেই রাজধানী। বর্তমানে প্রত্যেক লোকের জন্য ১ বর্গ মিটারের কম জায়গা রয়েছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যহানি অন্যতম কারণ।

রাজধানীবাসীর জন্য যেটুকু খোলা জায়গা বা মাঠ আছে, তাতেও সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকারে নানা বাঁধা। ফলে ছোট্ট শিশু থেকে সব বয়সী মানুষ গৃহবন্দী হয়ে একঘেয়েমি পীড়াদায়ক জীবন যাপন করছেন।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ২৩৫টি খেলার মাঠ রয়েছে। এই মাঠগুলো নানাভাবে দখলে রয়েছে। এরমধ্যে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত মাঠ আছে মাত্র ৪২টি। জনসাধারণের মাঠ হওয়া সত্ত্বেও নানা কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংগঠনের দ্বারা ওই মাঠের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকে। এরকম মাঠের সংখ্যা ১৬টি। রাজধানীতে প্রাতিষ্ঠানিক মাঠ রয়েছে ১৪১টি। এসব মাঠ ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রিত থাকে। যেখানে চাইলেও কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া আবাসিক কলোনির মাঠ রয়েছে ২৪টি এবং ১২টি ঈদগাহ মাঠ রয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স রাজধানীর খেলার মাঠ ও খোলা জায়গা নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে। এতে এই চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে দুই সিটি করপোরেশনকে দখলকৃত খেলার মাঠ ও খোলা জায়গা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে বলা হয়েছে।

কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজধানীর যেসব প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুল কলেজ তাদের মাঠ জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত করেছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে সেটাকে সবার জন্য উন্মুক্ত করা যায়, সেই চেষ্টা করব।

মহানগরীর এই ভারসম্যহীনতা নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘একটা মান সম্মত শহরের জন্য যে পরিমাণ খোলা জায়গা ও মাঠ দরকার তার ধারের কাছেও নেই রাজধানী ঢাকা। তবে যেগুলো আছে সেগুলোও যদি যথাযথ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যায়, তাহলেও সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান বের হবে। বিশেষ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক মাঠগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা যেতে পারে। মেয়রগণ চাইলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করতে পারেন।’

‘মাঠ ও জনসংখ্যার তুলনামূলক চিত্র দেখলেই বোঝা যাবে কতটুক অসুস্থ নগরীতে বাস করছি আমরা। রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা, মধুবাগ, চৌধুরী পাড়া এলাকায় পাঁচ লাখ লোকের বসবাস, মানদণ্ড অনুযায়ী এই এলাকার জন্য ৭৯টি মাঠ থাকার কথা, দুঃখের বিষয় একটিও নেই।’

মোহাম্মদপুর ওয়ার্ড-৩০ এ লোক বাস করেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৩৩ জন। আর ওই এলাকার ৩৩নং ওয়ার্ডে বাস করেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭৯ জন। মোহাম্মদপুর এলাকার আয়তন ১৬৭৭ একর। মানদণ্ড অনুযায়ী ৬৩টি মাঠ থাকার কথা, নেই একটিও।

Dhaka

নতুন শহর হিসেবে পরিচিত উত্তরা ওয়ার্ড-১ মোট বাস করেন ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। এই এলাকার আয়তন ১৪৩০ একর। মাঠ থাকার কথা ৩৮টি, আছে মাত্র ছয়টি। অর্থাৎ এখানেও মাঠের ঘাটতি রয়েছে। ধানমন্ডির জনসংখ্যা ঘনত্ব ও আয়তন অনুযায়ী ১০টি মাঠ কম রয়েছে। এরকম প্রতিটি এলাকাতেই মাঠের স্বল্পতা রয়েছে।

দিন দিন এভাবে মাঠ দখল ও খোলা জায়গায় ভবন গড়ে ‍ওঠায় রাজধানী ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। উঠছে উঁচু ভবন বিলিন হচ্ছে খেলার মাঠ-খোলা জায়গা। ভারসাম্য হারাচ্ছে রাজধানী ঢাকা।

তবে আশার কথা হচ্ছে, দুই সিটি করপোরেশনই খেলার মাঠ ও পার্ক উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেই সব প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বেশ কিছু মাঠ পার্কের উদ্বোধন করা হবে।

এরমধ্যে রয়েছে পান্থকুঞ্জ পার্ক, গুলিস্তানের ওসামানী উদ্যান, আজিমপুরের আব্দুল আলীম খেলার মাঠ। এরকম বেশ কিছু মাঠ পার্কের উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে রাজধানীবাসীর বসবাসে কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে দুই সিটি করপোরেশন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর