জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কপালে ভাঁজ

, জাতীয়

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, (মেলান্দহ) জামালপুর থেকে | 2023-09-01 08:16:38

স্বস্তি ফিরে পাবার আশায় গুড়ে বালি। পানি কমে আসায় জামালপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশায় উল্টো হতাশা ছড়াচ্ছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টি।

এ পরিস্থিতিতে ফের বন্যার অবনতির আশঙ্কায় কপালে ভাঁজ পড়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বর্ষণে বেড়েই চলেছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি।

বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি এখনও বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। এর মাঝে শোকের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে সরিষাবাড়ীতে পানিতে ডুবে পাঁচ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা।

এমন পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত জামালপুর জেলার দুর্গত এলাকায় সফর শুরু করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. এনামুর রহমান। তার সঙ্গে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভায় যোগ দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

কুড়িগ্রামের রৌমারি থেকে চর রাজীবপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুরে আসতে প্রতিমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের ভয়ার্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।

ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে আকাশে মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের ঝলক। ক্ষণে ক্ষণে বজ্রপাত। চারদিকে অথৈ পানি। এর মাঝে দিকভ্রান্ত হয়ে স্পিডবোট চালক ঘাটের সন্ধান না পেয়ে ভুল ঘাটে ভেড়ান।

সব মিলিয়ে অনিরাপদ যাত্রা শেষে বৃহস্পতিবার রাতে জামালপুরে পৌঁছান প্রতিমন্ত্রী। রাত ১২টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চলে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/26/1564111044903.jpg
জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় জানানো হয়, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, হাজরাবাড়ী, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার ফলে বীজতলা, আউশ ধান, পাট ও শাক সবজির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় জেলার অর্ধেকের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বন্যার্ত মানুষের সংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৩৪০ জন।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি চাহিদা হিসেবে ৫শ’ মেট্রিক টন জিআর চাল, নগদ সহায়তা হিসেবে ১৫ লাখ টাকা আর ২০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দের আবেদন জানানো হয়েছে।

সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, গত ১৯ জুলাই গাইবান্ধা থেকে জামালপুর জেলার বন্যা কবলিত ইসলামপুরে আসার কথা থাকলেও শুকনো জায়গার অভাবে তাদের বহনকারী বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার সেখানে অবতরণ করতে পারেনি। যে কারণে পূর্ব নির্ধারিত দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যা আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন এবং সেখানে ত্রাণ বিতরণে সেদিন তিনি যোগ দিতে পারেননি।

তবে বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা থেকে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত চর অঞ্চল পরিদর্শন শেষে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে গভীর অন্ধকারের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিরাপদ যাত্রা সত্ত্বেও জামালপুর এসেছেন প্রতিমন্ত্রী।

এ জেলায় সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের তরফেও বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানকার দুর্গত মানুষদের জন্য বাড়তি চাহিদা হিসেবে আরও ৩০০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকাসহ বাড়তি শুকনো খাবার বরাদ্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বন্যার্তদের দুঃখ দুর্দশায় পাশে দাঁড়িয়েছে মানবতার জননী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার। ভবিষ্যতেও বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন কার্যক্রমে সরকার দুর্গত মানুষের পাশে থাকবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর