প্রভাবশালীদের কারণে বার বার জ্বলে উঠে পুরান ঢাকা!

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-24 15:38:36

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ওই ঘটনায় ৭১ জন নিহত আর আহত হয় শতাধিক মানুষ। ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগুনের উৎপত্তিস্থলের আশপাশের বেশ কয়েকটি কেমিকেল ও প্লাস্টিক কারখানা থাকায় আগুনের ভয়াবহতা ও প্রাণহানি বৃদ্ধি পেয়েছিল।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা গেছে, চুড়িহাট্টার ট্র্যাজেডির পর ডিএসসিসি'র পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে প্লাস্টিক ও কেমিকেল কারখানা সরানোর। এরপর বেশ কয়েকটি কারখানাও সরানো হয়, কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পর এ অভিযানের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। ফের জ্বলে উঠে পুরান ঢাকা। চুড়িহাট্টার পর বেশ কয়েকটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে বিভিন্ন প্লাস্টিক কারখানায়।

সর্বশেষ বুধবার (১৪ আগস্ট) লালবাগের পোস্তা এলাকায় 'টিপু হাজী' নামে একটি ভবনে আগুন লাগে। ভবনটির নিচ তলায় একটি প্লাস্টিক, পলিথিন ও জুতার কারখানা ছিল এবং ওপরের তলায় ছিল গুদাম। অগ্নিকাণ্ডে দুই তলা ভবনটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

এ ঘটনার পর বিভিন্ন মহলে আবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বারবার কেন জ্বলে উঠে পুরান ঢাকা। এর পিছনে দায়ী ব্যক্তি কারা।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) লালবাগের পোস্তা'র ঢাল এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটির আশপাশের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা জানা গেছে, পুরান ঢাকা বারবার জ্বলে উঠার জন্য দায়ী হাতেগোনা কয়েক জন প্রভাবশালী। তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে টাকা পয়সা দিয়ে অবৈধভাবে আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন পণ্যের কারখানা ও গুদামের জন্য ভবন ভাড়া দেয়। এলাকার অন্যসব বাসিন্দারা বারবার অভিযোগ দিলেও তারা কোনো কথা কানে নেয় না। স্থানীয় বাসিন্দাদের নানাভাবে ভয়ও দেখায় তারা।

আগুনে পুড়ে যাওয়া পোস্তায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, 'টিপু হাজী'র বাড়ির সামনে তিনটি বড়বড় ট্রান্সফরমার লাগানো। ধারণা করা হচ্ছে ট্রান্সফরমার থেকেই আগুনের সূত্র ঘটে। এই ভবনটি ছাড়াও এর আশপাশের রয়েছে প্রায় ৩০ টির মতো প্লাস্টিকের কারখানা। পোস্তা মূলত আবাসিক এলাকা হলেও এখানে গড়ে উঠেছে এসব দাহ্য পদার্থের কারখানা। শুধু তাই নয় এই এলাকায় রয়েছে চামড়া শিল্প।

টিপু হাজীর ভবনটির দক্ষিণ পাশে লাগোয়া দুই তলা একটি ভবনের মালিক চামড়া ব্যবসায়ী ফজলুল রহমান। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লাগার ঘটনায় মনে হয়েছিল আমার বিল্ডিংটাও পুড়ে যাবে। কি ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এর আগেও একবার পাশের আরেকটি কারখানায় আগুন লেগেছিল। তখন আমার ভবনের উপর তলা পুড়ে গিয়েছিল।

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, 'ইসলামবাগের আগুনের পর স্থানীয়রা ঐক্যবদ্ধভাবে কারখানা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিবাদ করি। কিন্তু কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ভয় দেখিয়ে আমাদের চুপ করায়। সর্বশেষ টিপু হাজীর ভবনটির কারখানার জন্য ট্রান্সফরমার লাগানোর সময় আমরা বাধা দেওয়া চেষ্টা করি। কিন্তু প্রভাবশালীরা আবারও নিজেদের প্রভাব দেখায়। প্রভাবশালীদের কারণেই বার বার জ্বলে উঠে পুরান ঢাকা।

পোস্তা'র স্থানীয় বাসিন্দা মো. সৈয়দ হান্নান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, অনেক বার শুনেছি পোস্তা এলাকা থেকে কারখানা উঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গুটিকয়েক জনের বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি। এসব কারখানার জন্য আমাদের জীবন আজ ঝুঁকিতে। কোনদিন আগুন লেগে সব শেষ হয়ে যাবে সেই আতঙ্কে থাকি আমরা।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পুরান ঢাকায় আগুন লাগলেই কারখানা স্থানান্তরণের কথা উঠে। এর আগে সিটি করপোরেশন চুপ থাকে। সিটি করপোরেশনকে এই নীতি থেকে সরে আসতে হবে। না হলে নিমতলী ও চুড়িহাট্টার মতো আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর