মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের অবাঞ্ছিত জেরার মুখে রোগীরা

, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-30 19:13:05

ঢাকা: রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। হাসপাতালের প্রবেশমুখে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে চার-পাঁচ জন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। বর্হি:বিভাগ থেকে ডাক্তার দেখিয়ে বের হতেই রোগীকে ঘিরে ধরলেন। রোগীর কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ‘কি ঔষধ দিয়েছে, কোন কোম্পানির –এ রকম নানা প্রশ্ন।  আর সুযোগ পেয়েই অনেকেই নিজ কোম্পানির নাম জুড়ে দিলো ব্যবস্থাপত্রে!

সোমবার (২৮মে) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এমন দৌরাত্ম দেখা যায়। মানুষের কাছে এরা সাধারণত রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে পরিচিত। এদের খপ্পরে পড়ে সাধারণ রোগী ও তার স্বজনরা অনেকেই বিরক্ত হন। পড়েন বিভ্রান্তিতেও।

তারা জানান, ডাক্তার দেখিয়ে বের হলেই ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ঘিরে ধরে। তারা যেন অলিখিত চেকপোস্ট তৈরি করে রেখেছে। হাসপাতালে আসলে সবাইকে এ চেকপোস্টে পড়তেই হবে।

সোহরাওয়ার্দী বোনের চিকিৎসার জন্য এসেছেন তুষার আহমেদ। মেডিকেল প্রতিনিধির হাতে পরে বিরক্ত তুষার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভালো চিকিৎসা হয় বলেই  বোনকে দু‘বার এ হাসপাতালে আনলাম। দু‘বারেই আমাকে রিপ্রেজেন্টেটিভের জেরা মুখে পড়তে হয়েছে। যা অনেকটা মানসিক অত্যাচারের পর‌্যায়ে পড়ে। এই হাসপাতালের সমস্যা হল, এখানে অন্যায় দেখার কেউ নেই।  

তুষারের সঙ্গে কথা বলার শেষ পর‌্যায়ে চর্ম ও যৌন বিভাগ থেকে  চিকিৎসককে দেখিয়ে  বের হন মানিক মিয়া (৩২)।
 
মুহূর্তেই তাকে ঘিরে ধরল কয়েকজন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। এক প্রকার জোর করেই তার কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মোবাইল ফোনে ছবি তুললেন।রোগীকে দাঁড় করিয়ে রেখে তাদের মধ্যে চলতে থাকে ‘চিকিৎসক কি ঔষুধ লিখেছেন’- তা নিয়ে আলোচনা। 

মানিক মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, ‘এটা কোন কথা হতে পারেনা, আমার ব্যবস্থাপত্র আমার ব্যক্তিগত বিষয়। দেখলেন তো, একপ্রকার জোর করেই ওরা দেখলো। এই ভাবে চলতে থাকলে মানুষ এই হাসপাতালে তো আসবে না ।

মানিক মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিনিধিদের দিকে তেড়ে যান।কিন্তু ততক্ষণে তারা চুপচাপ হয়ে হাসপাতালের করিডরে মানুষের দলে মিশে যায়।

ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপর বিরক্ত রোগীর স্বজন মামুন জানান, রিপ্রেজেন্টেটিভ  হঠাৎ করে সবাই এক সঙ্গে জেঁকে ধরে। এদের ভদ্রলোক বলে মনে হয় না। রোগী ও তার স্বজনদের প্রতি এক ধরনের অন্যায় –অবিচার করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

বর্হি:বিভাগে দায়িত্বরত আনসার সদস্য বাসেত (৩৯) বলেন, ‍‍‍‍'হাসপাতাল থেকে আদেশ আছে, এদের সরিয়ে দেওয়ার। আমি সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করি। কিন্তু অনেক সময় সম্ভব হয় না। গায়ে হাত তোলা তো আর যায় না'।

কোম্পানির প্রতিনিধির কারণে হয়রানিমুলক ঘটনাও ঘটে -বলে জানান তিনি। বাসেত বলেন, ‘আমি নিজেও দেখি, এরা রোগীকে কিভাবে হয়রানি করে। মাঝে মাঝে ঝগড়া হয়, এমনকি মারামারিও হয়’।

রোগী হয়রানি ও ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্মের বিষয়ে  হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ঔষুধ কোম্পানির লোকজন ঝামেলা করে- এ অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। তাদের দৌরাত্মও বন্ধ করতে পারতাম। যদি পর্যাপ্ত লোকবল থাকত। পুরো হাসপাতাল জুড়ে আমাদের মাত্র ৮-১০ জন সরকারি আনসার সদস্য রয়েছে। এ কারণে অনেক সময় রোগী নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয় না।

এরপরও চিকিৎসা সেবার উন্নয়নের পাশাপাশি রোগী ও তার স্বজনরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়-এ বিষয়টি নজরে রাখা হবে বলে জানান তিনি।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর