সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রধান সড়কেই বর্জ্যের ছড়াছড়ি

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-31 01:37:17

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে রাজধানীতে যত্রতত্র পড়ে থাকছে কঠিন বর্জ্য। খোদ সিটি করপোরেশনে আওতাভুক্ত ওয়ার্ডগুলোর প্রধান সড়কেই বর্জ্যের ছড়াছড়ি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবল সংকট ও যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সিটি করপোরেশন এলাকার বাড়ির আঙিনা, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, সরকারি-বেসরকারি নির্মাণাধীন বিভিন্ন স্থাপনা, হাসপাতাল, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনসমাগম স্থানে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় নানা ধরনের বর্জ্য। বিশেষ করে মূল সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তুপ দেখা গেছে। শহরের খোলা জায়গাগুলো এসব বর্জ্য থেকে পরিবেশ নষ্ট করছে।

জানা গেছে, রাজধানীতে দৈনিক প্রায় ৬ হাজার টনের বেশি বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব বর্জ্যের মধ্যে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ হাজার টন বর্জ্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অপসারণ করতে পারে। বাকি প্রায় এক হাজার টন বর্জ্য শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে। এসব বর্জ্য শহরের পরিবেশ দূষিত করার পাশাপাশি কীটপতঙ্গ উদপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার ১০০ টনের বেশি বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। সংস্থার ২ হাজার ৪০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী এর মধ্যে প্রায় ৮৫ ভাগ বর্জ্য অপসারণ করতে পারছে। বাকি বর্জ্য যত্রতত্র পরে থাকছে। বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ করে প্রথমে এসব সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে রাখা হয়। তাই সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে ৫১টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন গড়ে তুলেছে এই সিটি করপোরেশন। এরপর গাড়িতে করে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে রাখা হয়। সেখানে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলো বাদে বাকি ওয়ার্ডগুলোতে (৫৭টি) গড়ে দৈনিক ৩ হাজার টনের বেশি বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। সংস্থার ৫ হাজার ২০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৮০ শতাংশের কিছু বেশি বর্জ্য অপসারণ করতে পারছে সংশ্লিষ্টরা। বাকি বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করে ২৩টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন ও শহরের বিভিন্ন মোড়ে ফেন্সিং করা জায়গায় আবর্জনা জোগাড় করে রাখে। সেখান থেকে গাড়িতে করে বর্জ্য ডেমরার মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে নিয়ে ফেলা হয়। সেখানে পরিবেশবান্ধব উপায়ে এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উত্তর সিটির আওতাভুক্ত মিরপুর ১২ বাসস্ট্যান্ড প্রধান সড়ক, কালশী কবরস্থান ও পাশের ডোবা, পুরবী সিনেমা হলের সামনে হকারদের বাজারের সামনে, কাজীপাড়া ও শ্যাওরা পাড়া, মিরপুরের ১ রাস্তায় বাজার, মিরপুর ২ এর হার্ট ফাউন্ডেশেনের সামনে, মহাখালি বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় মূল সড়কের পাশেই বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে। কখনও কখনও কয়েকদিনেও সেই বর্জ্য পরিষ্কার করা হয় না। আর দক্ষিণ সিটির খিঁলগাও, বাসাবো, কমলাপুরসহ বেশ কিছু স্থানের মূল সড়কের পাশে বর্জ্য ছড়িয়ে থাকছে, ফলে সেই পথ দিয়ে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর দুই সিটির নতুন সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা আরো নাজুক।

বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বর্জ্য অপসারণের ব্যাপারে আমরা খুবই তৎপর। সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোতে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেভাবে শুরু করতে পারিনি। দেশে বর্জ্যের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সারাবছরের গড় হিসাব করলে আমাদের দৈনিক বর্জ্য উৎপন্ন হয় তিন হাজার টন। আমাদের যে ক্যাপাসিটি আছে, তা দিয়ে সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলো বাদে বাকি গুলোতে ৮০ থেকে ৮৯ ভাগ বর্জ্য অপসারণ করতে পারি। আমাদের বিভিন্ন ক্যাটাগরি মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার ২০০ পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আমরা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। এটি এখনও পাস হয়নি। এটি চূড়ান্ত হলেই সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা যাবে।’

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মঞ্জুর হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা বর্জ্য সরাতে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ম্যানুয়ালির পাশাপাশি আমরা ম্যাকানিক্যাল সুইপারের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছি। সেজন্য আমরা ম্যাকানিক্যাল সুইপারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আর সময়ের সাথে সাথে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে।  আমাদের তিন ক্যাটাগরির প্রায় ২৪০০ পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে। আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে আমরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ বর্জ্য অপসারণ করতে পারি। তবে আটটি ওয়ার্ডের পরিচ্ছনায় প্রাইভেটাজেশনভাবে ১ হাজার ৪৪৫ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছে বর্জ্যে অপসারণ করা হচ্ছে, সেগুলোর ভলিউম রিডাকশনের করে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় কিনা। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অন্যান্য কাজে এসব বর্জ্য সরাসরি করা যায় কিনা সেটি নিয়েও আমাদের পরিকল্পনা আছে।’

এদিকে এসব কঠিন বর্জ্যে (ডাবের খোসা, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের মগ) পানি জমে থাকায় এ মৌসুমে মশার উপদ্রব বাড়ছে। মশক নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছিটিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। আর এর ফলে পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

শতভাগ বর্জ্য অপসারণ সক্ষমতা নেই, সিটি করপোরেশনের এমন দাবি করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলি মো. আবদুস সোবহান। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের এসব দাবি যুক্তিযুক্ত নয়। তাদের নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। যে লোকবল তাদের আছে, তা দিয়েই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু যত সংখ্যক কর্মী তারা কাগজে কলমে দেখায় ততো সংখ্যা কর্মী মাঠে দায়িত্ব পালন করে না। ফলে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। তবে অন্যান্য দেশে রাতে আবর্জনা পরিষ্কার করা হলেও আমাদের দেশে করা হয় সকালে। কিন্তু রাতে এটি করা হলে, দিনের বেলায় কেউ আবর্জনা ফেললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। তাই সিটি করপোরেশনের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর