বরিশালে নির্যাতিতার অভিযোগে ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত

বরিশাল, জাতীয়

জহির রায়হান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল | 2023-09-01 16:41:28

বরিশালের উজিরপুর মডেল থানায় প্রকাশ্যে বিধবা এক বৃদ্ধ নারীকে মারধরের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও এক কনস্টবলের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছেন জেলা পুলিশের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি।

তদন্ত কমিটিতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুর হককে সভাপতি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন (বাকেরগঞ্জ) ও বরিশাল জেলা পুলিশের ইনেসটেক্টর (প্রশিক্ষক) মাসুম বিশ্বাসকে সদস্য করা হয়েছে। 

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুর হক।

এ সময় তিনি জানান, বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় থানা সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানের সামনে বৃদ্ধ এক নারীকে পুলিশ সদস্য জাহিদ মারধর করেন। নির্যাতিতা নারীর ভাষ্যমতে থানায় বিচার চাইতে গেলে থানার ওসি শিশির কুমার পালও তাকে মারধর করেন। চায়ের দোকানের সামনে মারধরের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হলে মূলত বিষয়টি বরিশাল জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে। পরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তাই এখন প্রাথমিকভাবে ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

নির্যাতিত নারী রাশিদা বেগম মাদারীপুর সদর উপজেলার পানিচত্বর এলাকার স্বামী মৃত মোঃ মঈন উদ্দিন মাতবরের স্ত্রী। তাঁর স্বামী পুলিশের একজন সহকারী উপ-পরিদর্শকের (এএসআই) ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান। বর্তমানে রাশিদা বেগম উজিরপুরের ইচলাদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ইচলাদি গ্রামের আবুল কালামের ভাড়া বাসায় থাকেন।

এদিকে ভাইরাল হওয়া ৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে রাশিদা বেগমে অভিযোগ করে বলেন,  আমার ১১ বছরের মেয়েকে গত ১৩ আগস্ট উজিরপুরের ইচলাদী গ্রামের ৫/৬ বখাটে যুবক মিলে অপহরণ করেন। ১৪ আগস্ট উজিরপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করতে গেলে ওসি মামলা না নিয়ে শুধু লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৯ আগস্ট আমার মেয়েকে পুলিশ উদ্ধার করেন। মেয়েকে খুঁজে পাওয়ার পর অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবী জানালে ওসি বলেন, মেয়ে বুঝে পেয়েছেন এখন বাড়ি চলে যান আর কোন মামলার দরকার নেই।' 

কিন্তু কয়েকদিন পর সেই বখাটেরা আবারও তার মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় রাশিদা বেগম থানায় বার বার লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে ওসি প্রত্যেকবারই অভিযোগ করা কাগজটি ছিঁড়ে ফেলেন। তাঁর পরে রাশিদা ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে বরিশাল পুলিশ রেঞ্জ ডিআইজির কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তার সামনে বসে তাৎক্ষণিকভাবে ডিআইজি উজিরপুরের ওসি শিশির কুমার পালকে ফোন দিয়ে রাশিদার লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। এরপর ওসি রাশিদা বেগমকে উজিরপুর থানায় আসতে বলেন।

সে অনুযায়ী রাশিদা বেগম গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় থানায় গেলে ওসি ও পুলিশ সদস্য কর্তৃক মারধরের শিকার হন।

অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশ সদস্য জাহিদুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, থানা সংলগ্ন বাচ্চুর চায়ের দোকানে চা খেতে গেলে দেখি এক মহিলা ওসি স্যারকে গালাগাল করছে। আমি গালাগালের প্রতিবাদ করি। এক পর্যায়ে মহিলাকে সেখান থেকে তাড়ানোর জন্য আমি গালাগাল করি ও মারধরের ভয় দেখাই। তবে তার শরীরে কোনো হাত দেইনি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, থানার ভিতরে ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাশিদা বেগমকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। থানার বাইরে কি ঘটছে তা জানি না।

বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, এ ঘটনার বিষয়টি আমি শুনেছি। তারপর তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্টে জড়িতরা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর