ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) থাকার যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় বোর্ড (বিসিবি) মিটিং যখন হবে এ ব্যাপারে তারা তখন ব্যবস্থা নেবে। আমি বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলাপ করব, তাকে (লোকমানকে) গ্রেফতার করা হয়েছে, তাকে বোর্ডে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমি সভাপতির সঙ্গে আলাপ করব।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সেতুমন্ত্রী।
ক্রিকেটারদের ধর্মঘট প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, যেটা ঘটে গেছে, সেটার শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধান হয়েছে। আমার সঙ্গে সাকিব আল হাসানের কথা হয়েছে। তিনিও এই সমাধানে সন্তুষ্ট হয়েছেন। দেরিতে হলেও সমাধান হওয়ায় পুরো জাতি স্বস্তি পাচ্ছে। কিছুদিন পরে ভারত সফর, এ সময় ক্রিকেটারদের ধর্মঘট—এটা নিয়ে অনেকের মনেই শঙ্কা ছিল-অস্বস্তি ছিল। দেরিতে হলেও বিষয়টার সমাধান হয়েছে—স্বস্তিদায়ক।
তিনি বলেন, ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমাদের নেত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তারা পরিবারের সদস্যের মতো। ক্রিকেটারদের যেকোনো সমস্যায় তারা নেত্রীর দ্বারস্থ হন, তিনি সমাধান করেন। যেহেতু এখানে একটা সমস্যা হয়েছে, এখানে কারো কোনো অশুভ উদ্দেশ্য আছে কি না—সে বিষয় খুঁজে দেখা হচ্ছে।
ক্যাসিনো-কাণ্ডের পর ক্রিকেট বোর্ডে পরিবর্তন হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না, এটা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করতে চাই না। পরিবর্তনের যদি প্রয়োজন হয়, সে ধরনের কোনো সমস্যা-সঙ্কটের উদ্ভব হলে তখন দেখা যাবে। আমার মনে হয় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়—এমন পরিস্থিত হয়নি। এখন ব্যক্তিগতভাবে কেউ অপকর্ম করলে তাকে তো শাস্তি পেতেই হবে। সেজন্য একজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্য কেউ যদি কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকেন নিশ্চয়ই তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এখানে কার কতটা দোষ এবং কারো কোনো প্রকার অশুভ উদ্দেশ্য আছে কি না সেই বিষয়টা খোঁজ রাখা হচ্ছে।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার মনে হয় বোর্ড (বিসিবি) মিটিং যখন হবে এ ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা নেবে। আমি বিসিব সভাপতির সঙ্গে আলাপ করব, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এখনও তাকে বোর্ডে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমি সভাপতির সঙ্গে আলাপ করব।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, নাহ্! সভাপতি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত—এটা আমার মনে হয় না। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই, কেউ তথ্য প্রমাণসহ বলতে পারেননি যে, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে।
চলমান শুদ্ধি অভিযানের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যাদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি এমন নেতাদেরই নতুন নেতৃত্বে প্রোভাইড করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সেটা করছি। আমাদের দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনগুলোতে যাতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোকজনকে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারি সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি।
স্বেচ্ছাসবক লীগ ও যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান হলো, আওয়ামী লীগের মূল দলে অভিযান কবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ তো আওয়ামী লীগের বাইরে না। মূল দলের অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, অনেকের বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতার বিরুদ্ধেও নিশ্চয়ই কোনো অভিযোগ আছে। যে কারণে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বা ব্যাংক হিসাব তলব এটা তো শুধু যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নয়—আওয়ামী লীগের লোকজনও আছে। এখানে ২২-২৩ জনের নাম আসছে, এদের মধ্যে তো আওয়ামী লীগও আছে।
তিনি বলেন, এমপি তো আর আওয়ামী লীগের বাইরে না, এমপি তো আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। অভিযোগ আসছে, এখন দুদক তাদের সম্পদের হিসাব নিয়ে তদন্ত করছে এবং তদন্তে যা আসবে তাই। এখানে কারো ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া বা কারো ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে আমরা দুদককে কখনো অনুরোধ করিনি। যখন তারা যার বিরুদ্ধেই মামলা দিয়েছে এবং অনেকের চার্জশিটও হয়ে গেছে, আমরা কিন্তু কোনো বাধা দেইনি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না, থাকবে না এবং ভবিষতে থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
আরও পড়ুন: ‘নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে সরকারের স্বস্তি’