কামরুন নাহার মনি ও রাশেদ খান রাজু। দীর্ঘদিন প্রেম করেছেন। এরপর অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পরিবারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। বেশ চলছিল দু’জনের সংসার। নিজেদের ঔরসজাত সন্তানের আসন্ন আগমনের প্রতীক্ষায় দিন পার হচ্ছিল।
এরপরেই ঘটে বিপত্তি! দেশের আলোচিতও নৃশংস ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড। নির্মমতার শিকার নুসরাতের সহপাঠী ছিলেন কামরুন নাহার মনি। যিনি এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। আর এ মামলায় রাজুর মনি আজ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। যে সন্তানকে ভবিষ্যৎ সাজাবেন বলে ভেবেছিলেন, সেই সন্তানের জন্ম কারাগারে। আর বড় হচ্ছে মায়ের সঙ্গে অন্ধকার কারাগারেই।
আরও পড়ুন: ৮ নম্বর সেলে নিস্তব্ধ অধ্যক্ষ সিরাজ
যদিও মনি নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এটা মানতে চান না রাজু। এজন্য শেষপর্যন্ত মনি ও তার সন্তানের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
রাজু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের রায় কার্যকর হোক। কিন্তু যারা জড়িত না তাদেরকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। মনি কোনোভাবেই এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না, আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত তাকে মুক্তি দিবেন। তাহলে আমার সন্তান তার মাকে নিয়ে সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ পাবে।
মনির প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাজুর। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন প্রেম করে বিয়ে করেছি। বিশ্বাস করি, এই ঘটনার সঙ্গে মনি জড়িত না। অনেক ভালোবাসি ওকে, তাই শেষ দিন পর্যন্ত তার জন্য লড়ে যাব। ২৪ অক্টোবর ফেনী জজ কোটের নারীও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুন-উর-রশিদ নুসরাত হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা সহ ১৬ জনের ফাঁসির রায় দেন।
রায় নিয়ে রাশেদ খান রাজু বলেন, নিম্ন আদালতের রায়ই তো শেষ না। আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। হাইকোর্ট আছে,সুপ্রিম কোর্ট আছে, আমরা পুরোপুরি আশাবাদী, ন্যায়বিচার পাবো। কেননা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মনির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। যদি সে অপরাধী হতো, আমি ৬ মাস ধরে এভাবে তার জন্য লড়তাম না। কারাগারে থাকাকালীন প্রসব বেদনা উঠলে ফেনী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। কামরুন নাহার মনিকে। সেখানে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। পিতা হিসেবে সন্তান একদিনেই কাছে পেয়েছিলেন রাজু। সেদিনেই কন্যার নাম রাখেন মোবাশিরা খানম রথী।
সন্তানের প্রসঙ্গে রাজু বলেন, জন্মের পর একদিন তার পাশে থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমি তাকে দেখতে পাইনি, ও আমার স্পর্শের বাইরে। আমি বাবা হওয়ার অনুভূতিটুকু কারো কাছে প্রকাশ করতে পারি না। আমার সন্তানকে ছাড়া আমি ভাল নেই।
আরও পড়ুন: কারাগারের অন্ধ কুঠুরিতে মনির সন্তান, ভবিষ্যৎ কী?
একই কথা বলেছেন, মনির মা নুরুন্নাহার খানম। তিনি বলেন, রায়ের পর আমরা দুই দিন মনির সঙ্গে কথা বলেছি। মনি আমাকে বলেছে, আমি যদি সত্যিই নির্দোষ হই, আমি আবার তোমার কাছে ফিরে আসব। আমাকে বাঁচাতে তোমরা আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাও। আমার বিশ্বাস আমি আবার ফিরে আসব।
এদিকে জেল বিধি ৯৯৪ অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত স্ত্রীলোককে গর্ভবতী বা দুগ্ধপোষ্য অবস্থায় পাওয়া গেলে হাইকোর্ট বিভাগ দণ্ড স্থগিতের আদেশ দিতে পারেন। অথবা উপযুক্ত মনে করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারবেন।
অন্যদিকে মনির রায়ের কার্যকরের বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছেন সে রায়টি কার্যকর হতে আরও দীর্ঘ সময় লাগবে। কারণ, আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করবেন। পেপারবুক তৈরি হবে এবং এটা আপিল বিভাগে যাবে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ফুল কোর্টে শুনানি হবে। এরপর আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। এ প্রক্রিয়াটি আরও অনেক সময় লাগবে। কয়েক বছর লাগতে পারে। এ সময়ের মধ্যে কামরুন নাহারমনির বাচ্চা বড় হয়ে যাবে। বাচ্চা তার পিতার জিম্মায় চলে যেতে পারবে। এবং কামরুন নাহারমনির শাস্তি কার্যকর হতে পারবে।
আরও পড়ুন: ফাঁসির ১৪ আসামি কনডেম সেলে, নেই মনি-পপি!