১১০ একর জায়গার ওপর নির্মিত সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। যেখানে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি মেরামত ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়ে থাকে। যা আর কোনো রেল কারখানায় তৈরি হয় না।
১৮৭০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১১০ একর জায়গার ওপর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। কারখানাটি ১৯০৩ সালে মিটারগেজ যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি এবং স্টিম লোকোমোটিভ মেরামত কারখানায় রূপান্তরিত হয়। এটি পূর্ণাঙ্গ কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৫৩ সালে ।
গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সৈয়দপুর রেল কারখানা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এখানে যাত্রীবাহী কোচ ও মালবাহী গাড়ি যেমন মেরামত করা হয়ে থাকে তেমনি প্রয়োজনে ইঞ্জিনেরও কিছু কাজ করা হয় থাকে।
রেল কারখানার ক্যারেজ শপ ঘুরে জানা যায়, ‘সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর রুটিন মাফিক কোচে স্বাভাবিক মেরামত করতে হয়। যেমন আন্তঃনগর কোচের ক্ষেত্রে এক বছর পর পর সাধারণত মেরামত করা হয় যদি কোন সমস্যা না থাকে। লোকাল ট্রেনের কোচের ক্ষেত্রে দেড় বছর পর পর মেরামত করতে হয়। তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ১২ বছর পর কোচের অতি ভারী মেরামত করা হয়। অতি ভারী মেরামত করতে কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগে। আর সাধারণ মেরামত করতে ২৮ দিন থেকে এক মাস সময় লাগে।
তবে রুটিনমাফিক কাজের বাইরেও অনেক কাজ করতে হয় এই রেল কারখানায়। কোনো ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোচের সাধারণ থেকে অতি ভারী মেরামত করতে হয়। আবার কোনো ট্রেন হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেলে কোচের মেরামত প্রয়োজন হলেও এই কারখানায় করা হয়ে থাকে।
এই কারখানার অন্যতম বিশেষত্ব হলো- এখানে এমন সব খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয় যা অন্য কোনো কারখানায় তৈরি হয় না। আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে এসব যন্ত্রাংশ তৈরি করা হচ্ছে। আবার রেলের যেসব চাকা অব্যবহৃত হয়ে যায় সেগুলো এখানে এনে কামারশালায় আগুনে গলিয়ে মেশিনের মাধ্যমে কোচের এবং কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেল কারখানার উৎপাদন মেশিন শপের ইনচার্জ উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই শপে মূলত যাত্রীবাহী কোচ, মালবাহী গাড়ি ও ট্রেন দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারী ক্রেনের খুচরা যাবতীয় যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। এছাড়াও কারখানার বিভিন্ন মেশিনের খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়।
সৈয়দপুর রেল কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জয়দুল ইসলাম এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ব্রডগেজ কোচের সকল ধরনের মেরামত এখানে করা হয়ে থাকে। তাছাড়া আমরা এমন কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি করি যেগুলো আর কোথাও হয় না। এটাই পাহাড়তলী রেল কারখানার সঙ্গে সৈয়দপুর রেল কারখানার পার্থক্য।
তিনি আরও বলেন, কোচ মেরামতের জন্য যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হয় সেগুলো আমরা তৈরি করার পর তার মানদণ্ড পরীক্ষা করার জন্য আমাদের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যায়। ল্যাবরেটরিতে তৈরিকৃত যন্ত্রাংশের মান পরীক্ষা করার পর যদি সেটি ব্যবহার উপযোগী হয় তাহলে কোচ মেরামতে ব্যবহার করি। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কোচ মেরামতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা হয়ে থাকে।