বরিশাল-রাজশাহীর ভোটে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা, নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 12:34:16

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ থেকে বেরিয়ে আসতে পরিকল্পনার ছক সাজিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন সিটি নির্বাচনে কোন প্রকার ছাড় দিতে রাজী নয় সাংবিধানিক সংস্থাটি। তবে বরিশাল সিটিতে সহিংসতা ও রাজশাহী সিটির মতিহার থানা এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন  গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে তিন সিটি নির্বাচনের সার্বিক আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। ইসি সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়।

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না, এ বিষয়ে কোনো চিঠি পাইনি। গণমাধ্যমের খবরে বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিষয়টি পরিস্কার করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তার সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা এ নিয়ে ইসির অবস্থান জানতে চান।

তারা বলেন, নির্বাচনের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। সন্দেহভাজন লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায়, এ ক্ষেত্রে আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের গ্রেফতার করা না হলে, নির্বাচনে তারা বিঘ্ন ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রের কী তাদের গ্রেফতার করা যাবে না?

এই বক্তব্যের জবাবে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমলযোগ্য অপরাধে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে পুলিশ। সন্দেহভাজন মনে হলে সিআরপিসি (ফৌজদারি কার্যবিধি) অনুযায়ী গ্রেফতার করা যাবে। তবে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে পুরনো মামলার অজ্ঞাতনামা আসামী হিসেবে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।

তিন সিটির ভোটে কালো টাকার খেলা চলছে অভিযোগ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। তবে সিটিগুলোতে নির্বাচনের পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং সেখানে কোনো ঝুঁকি বা আশঙ্কা নেই বলেও জানান তারা। জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, টেলিভিশনে দেখি ভালো ভোট হচ্ছে। কিন্তু পরদিন পত্রিকায় দেখা যায় দুই বছরের শিশুও ভোট দিয়েছে। এসব কীভাবে হয়? আগামীতে এ ধরনের অভিযোগে যেন না আশে সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা অনুমোদন ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন, আইনগতভাবে তারা তা পারেন না। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুসরণ করা প্রয়োজন।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ভোটের আগের দুই দিন থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের পরিকল্পনা সাজিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই তিন সিটিতে দলীয় প্রতীকে প্রথম সিটি ভোট হওয়ায় এখানে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বেশি হারে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় বলা হয়, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন রাখা যেতে পারে। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাবের টিম এবং বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হবে। রাজশাহীতে ১৫ প্লাটুন, বরিশালে ১৫ প্লাটুন ও সিলেটে ১৪ প্লাটুন বিজিবি রাখা হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব-পুলিশের টিম ও কয়েক প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবে।

এছাড়াও মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটের দুই দিন আগে, ভোটের দিন এবং ভোটের পরে একদিন মিলিয়ে চার দিন মাঠে থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব-পুলিশের টিম ও কয়েক প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সংরক্ষিত রাখার সুপারিশও করেছে ইসি সচিবালয়।

এই তিন সিটিতে প্রচারণা শুরু হলেই প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী হাকিম মাঠে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামার পর তাদের নেতৃত্বেও থাকবে নির্বাহী হাকিম। এ সময় তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে বিচারিক হাকিমও নিয়োগ করবে ইসি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর