ঢাকা শহরের চারপাশ ঘিরে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। যার প্রাথমিক কাজ হিসেবে এই প্রকল্পের সম্ভাব্য সমীক্ষার কাজ চলছে। সমীক্ষার অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। রাজধানীর সড়কগুলোতে গাড়ির চাপ কমাতে ও যানজট নিরসনে এই প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে এই প্রকল্পের পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে বার্তা২৪.কমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
প্রকল্পের সূত্রে জানা যায়, বৃত্তাকার রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে ৮০ কিলোমিটার। যানজট নিরসনে এবং লেভেল ক্রসিংয়ের ঝামেলা এড়াতে এই পুরো রেলপথটি হবে উড়ালপথে। আর বৃত্তাকার এই রেলপথে স্টেশন থাকবে ৪০টি। ট্রেন চলবে স্ট্যান্ডার্ড গেজ ডাবল লাইনে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৫ মিনিট পর পর চলবে ট্রেন। বৃত্তাকার এই রেলপথের টিকিট ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হবে স্মার্ট কার্ড।
প্রাথমিক পর্যায়ে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে- উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, বিরুলিয়া, মিরপুর, গাবতলী, রায়েরবাজার, বাবুবাজার, সদরঘাট, শ্যামপুর, ফতুল্লা, চাষাড়া ও পূর্বাচল সড়ক ঘিরে। রেলপথের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে রুট গুলো চূড়ান্ত করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে আরো জানা যায়, বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণে সমীক্ষার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। যার পুরোটাই সরকারি অর্থায়নে করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে মূল রেলপথের নির্মাণের ব্যয় হতে পারে ৭২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।
বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের এখন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭০ ভাগ। এর মধ্যেই আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলমান রয়েছে।’
করোনাভাইরাসের প্রভাব এই প্রকল্পে কিছুটা পড়বে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক মনিরুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘চাইনিজ কোম্পানি এই ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে। সেহেতু করোনাভাইরাসের প্রভাব খানিকটা পড়বে এই প্রকল্পে। সেহেতু এই বিষয়টি আমলে নিয়েই আমরা কাজ করছি। তবে এর প্রভাবে কাজ কিন্তু থেমে নেই, কাজ চলমান রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ কিছুটা বাড়তে পারে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সেটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মে মাসে। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে সেটা হয়তো ২০২০ সালের জুনে গিয়ে শেষ হতে পারে। তবে এর সাথে এই প্রকল্পে নতুন করে আর ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা নাই।’
বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য সমীক্ষা বা ফিজিবিলিটি স্টাডি কার্যক্রম শেষে যে রিপোর্ট দেওয়া হবে তার ওপর ভিত্তি করেই ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের মূল কাজ শুরু হবে।
এদিকে, বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে গত বছরের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ রেলওয়ে, চীনের সিউয়াং সার্ভে, চীনের ডিজাইন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড, বেটস কনসাল্টিং সার্ভিস লিমিটেড বাংলাদেশ ও ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড অ্যাডভাইজার লিমিটেড বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।