বর্জ্যে ভরা হাজারীবাগ খাল

ঢাকা, জাতীয়

আকরাম হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-29 03:34:09

চারদিকে নদী বেষ্টিত ঢাকা শহরের এক সময়ের ঐতিহ্য ছিল খাল। ৫০টির অধিক খাল রাজধানীতে জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। এসব খাল গিয়ে মিশেছিল নদীতে। বৃষ্টি হলে শহরের পানি গিয়ে পড়ত খালে, খাল দিয়ে পানি চলে যেত নদীতে। পানির সাথে সাথে ময়লা আবর্জনা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যেত। দিনের পরিক্রমায় ভরাট, দখল আর দূষণে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে এসব খাল। যে খালগুলো এখনো বেঁচে আছে সেগুলোও দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে।

রাজধানীর খাল নিয়ে বার্তা২৪.কমের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে হাজারীবাগ খাল।

রাজধানীর হাজারীবাগ ও কালুনগর অবস্থিত হাজারীবাগ খাল। কামরাঙ্গীরচর সংলগ্ন বুড়িগঙ্গার শাখা নদীতে মিশেছে। খালের এক পাশে বক্স কালভার্ট করা হয়েছে। বক্স কালভার্টের ওপর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে আর নিচে ড্রেন করা হয়েছে। অন্যপাশে এখনো খালের অস্তিত্ব রয়েছে।

খাল পরিণত হয়েছে ড্রেনে

সরজমিনে দেখা যায়, হারাজীবাগ খাল শুধু নামেমাত্র অবশিষ্ট আছে। বাস্তবে কাঁচা চামড়ার শিল্পসহ নানা শিল্পের ময়লার ভাগাড়। তাছাড়াও ব্যবহৃত পলিথিন থেকে শুরু করে পুরনো কাপড়ের স্তূপ, শিশুদের পরিত্যক্ত খেলনা, গৃহস্থালি বর্জ্য, বাসাবাড়ির অব্যবহৃত আসবাবপত্র, দোকানের উচ্ছিষ্ট ময়লাসহ প্লাস্টিক ও পাটের বস্তায় ভরে ময়লা ফেলা হয়েছে খালে। যার ফলে পানির প্রবাহ প্রায় নেই বললেই চলে।

হাজারীবাগের গজমহল থেকে খালপাড় দিয়ে একটু সামনে এগোলেই দেখা যায় বেশ কিছু কাঁচা চামড়ার আড়ত। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলা হয়েছে খালে। খালের দুইপাড়ে ময়লা জমতে জমতে প্রস্থ কমে এসেছে। খালের ওপর দিয়ে যে বাঁশের সাঁকো বানানো হয়েছে তা ৭ থেকে ৮ কদম পা ফেললে পার হওয়া যায়। খালের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে নানা স্থাপনা। খালপাড়ে শুকানো হচ্ছে চামড়া থেকে বানানো জুতার বিভিন্ন অংশ। দুর্গন্ধে খালপাড় দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষকে নাক চেপে চলাচল করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ এই খাল থেকে মশা-মাছি ও নানা রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পরছে আশপাশের এলাকায়।

খালের দুইপাড়ে ময়লা জমতে জমতে প্রস্থ কমে এসেছে

প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন লিটন। খালপাড়ের আশপাশের এলাকা দেখিয়ে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এইসব জায়গা দিয়ে আগে নদী ছিল, নৌকা চলাচল করত। তারপর ধীরে ধীরে ভরাট করে বিল্ডিং নির্মাণ হয়েছে। খালে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। খাল থেকে মশা-মাছি, দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। আশপাশের চামড়ার কারখানা বর্জ্য এখানে ফেলা হয়। এসব দেখবে কে? দেখার লোক নেই।

আবদুল আলী নামের এ এলাকাবাসী বার্তা২৪.কমকে জানান, খালের কিছু অংশের ওপর দিয়ে হেঁটে চলাচল করা যাবে। নিচে পানি আছে তারপরও তলানোর ভয় নেই। অতিরিক্ত ময়লার কারণে তলানোর সম্ভাবনা নেই। গত বছর সর্বশেষ এই খাল পরিষ্কার করেছিল। তারপর আর পরিষ্কার করেনি।

খাল থেকে মশা-মাছি, দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। আশপাশের চামড়ার কারখানা বর্জ্য এখানে ফেলা হয়

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, খাল পরিষ্কার করে ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। খাল পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমাদের না। খাল ভরাট হয়ে থাকে, ময়লা জমে তারপরও ওয়াসা পরিষ্কার করে না। পরিষ্কার করার দায়িত্ব থাকলেও তারা করে না। আমাদের পক্ষ থেকে খাল পরিষ্কার করার জন্য মাঝে মাঝে ওয়াসাকে বলা হয়। কিন্তু তারা উদ্যোগ নেয় না। বাধ্য হয়ে আমরা কিছু সময় খাল পরিষ্কার করি। জনগণের কল্যাণে আমাদের দায়িত্ব না থাকলেও করি। আমরা মূলত ফুটপাত, রাস্তা বা অন্যান্য সব কিছু পরিষ্কার করি। এসব পরিষ্কার করার সময় খালটাও পরিষ্কার করে দেয়।

কিছু দিন পরে বর্ষার মৌসুম শুরু হবে। মশা-মাছি বৃদ্ধি পাবে। সে ব্যাপারে খাল পরিষ্কার নিয়ে কোনো পরিকল্পনার আছে কি বার্তা২৪.কমের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেই ব্যবস্থার অংশ হিসেবে খাল পরিষ্কার করা হবে।

আরও পড়ুন: মৃত্যুপ্রহরে ঢাকার খাল, অনেকগুলোই এখন স্মৃতি

এ সম্পর্কিত আরও খবর