দুই বাসের রেষারেষিতে ঘরে ফেরা হলো না দিয়া-করিমের

জেলা, জাতীয়

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 00:34:37

ঢাকা: দুপুর সাড়ে ১২টা। ক্যান্টনমেন্ট রমিজ উদ্দিন কলেজের ছুটি। দলে দলে বাসায় ফিরছে শিক্ষার্থীরা। সহপাটিদের সঙ্গে দিয়া ও করিমও ফিরছিলেন ঘরে। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে কালসী থেকে নামা ফ্লাইওভারের গোড়ায় দাঁড়িয়ে তারা। অপেক্ষা ছিলো বাসের। এর মধ্যে জাবালে নূর ও নূরে মক্কা মিরপুর কালসী থেকে অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে ফ্লাইওভার থেকে নামতে থাকে।

দুই বাসের রেষারেষিতে শিক্ষার্থীদের উপর এসে পড়ে জাবালে নূর। এতে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ১৬ জন শিক্ষার্থী বাসার চাকায় পিষ্ট হয়। অনেকেই আহত হলেও  এদের মধ্যে ঘরে ফেরা হয়নি  দিয়া আর করিমের।  

রোদ থেকে বাঁচার জন্য দিয়ার হাতে হয়ত তার মা দিয়েছিল বাহারি রঙের ছাতা। ফ্লাইওভারে গা ঘেষে দিয়ার পিষ্ট দেহের সঙ্গে তার মায়ের দেওয়া সেই ছাতাটাও পড়ে ছিল। আর দিয়ার অদূরেই সুর্দশন তরুণ করিমের নাড়িভুঁড়ি বের হওয়া লাশ।

দৃশ্যটি বিমানবন্দর সড়কের দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনার। ঘটনাস্থলের মাত্র ৫০ হাত ধরে যাত্রী ছাউনিতে দাঁড়ানো ছিলেন মামুন নামে একজন প্রাইভেটকার চালক। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বার্তা২৪কে ঘটনার বর্ণনা দেন।

মামুনের ভাষ্যে, শিক্ষার্থীরা ফ্লাইওভারের গোড়া পার হয়ে রাস্তার ঠিক সাইডে কুর্মিটোলা হাসপাতালের দেওয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে ছিল। আর কালসী থেকে ফ্লাইওভার হয়ে নূরে মক্কা ও জাবালে নূর দুই বাস একসঙ্গে নামার প্রতিযোগিতায় ছিল। দুই সিটিং বাস কয়েকবার ঘেষাঘেষি করে ধাক্কাও খায়। এক পর্যায়ে দেওয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের পিষে নিয়ে যায় জাবালে নূর। দুই বাসের গতি এত বেশি ছিলো যে দেওয়াল ঘেষে থাকা একটি গাছ উপড়ে ফেলে।

এই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাসের ধাক্কায় শিক্ষার্থীদের একজনের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। আরেকজনের মাথা থেতলে যায়। দুজনই ঘটনাস্থলে নিথর হয়ে পড়ে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে পাশ্ববর্তী হাসপাতালে নেওয়া হলেও  ডাক্তার তাদের  মৃত ঘোষণা করে।

নিহত দুইজন রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে দিয়া খানম এইচএসসি‘র প্রথমবর্ষের মানবিকের শিক্ষার্থী ও করিম দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

কুর্মিটোলা হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ছগির উদ্দিন জানান, নিহত দুইজনসহ ১৪ জন আহত শিক্ষার্থীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ও নয় জনকে তাৎক্ষণিক সিএমএইচ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার পর পর রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা ফ্লাইওভার দিয়ে আসা প্রায় ১২টি বাসে ভাংচুর চালায়। এরমধ্যে ৩টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ দুটিসহ ৮টি বাস ঘটনাস্থলে ব্যাপক ভাংচুরের শিকার হয়।

ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ জানায়, নূরে মক্কা (ঢাকা মেট্রো ব -৭৬৫৭) আর জাবালে নূর (ঢাকা মেট্রো ব-৯২৯৭) বাস অনিয়ন্ত্রিত গতিতে রেষারেষি করে শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। দুটি বাসকে ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে।

সরজিমনে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থীদের ছোপ ছোপ রক্তের দাগ পড়ে রয়েছে। আর ঘাতক বাসটি উপড়ে ফেলা গাছের সঙ্গে লাগানো অবস্থায় আছে।

কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার শেখ মুজিবুর রহমান জানান, আহতদের মধ্যে গুরুতর দু’জনকে সিএমএইচ-এ নেওয়া হয়েছে। নিহত দুজনের লাশ কুর্মিটোলা হাসাপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদেরর পরিচয় পাওয়া গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত দিয়ার বন্ধু সাব্বির ইসলাম জোজো জানায়, মিরপুর থেকে কালসী ফ্লাইওভারে জাবালের নুর এবং নুর এ মক্কা বাস রেষারষি করে বিমানবন্দর সড়কে নামার পথে তাদের চাপা দেয়।

নিহত করিমের বাড়ি নোয়াখালির হাতিয়া, এবং দিয়া খানম মিমের বাড়ি নোয়াখালি জেলার দক্ষিণপাড়া বলে জানা যায়।

এদিকে দুপুর ১ টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণ পর পর সড়ক অবরোধ করে রাখে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাংচুর করে বসুমতি, পারিস্থান, জাবালে নূর, প্রজাপতি, নূরে মক্কা বাসগুলো।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর