করোনাকালে বেড়েছে গ্যাস চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য

, জাতীয়

মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-24 21:16:15

'কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ''। গোটা জাতি যখন করোনায় বিপর্যস্ত ঠিক তখন এই ভাইরাসকে আশীর্বাদ হিসেবে নিয়েছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। করোনাকে পুঁজি করে অবৈধভাবে গ্যাসের পুনঃসংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান চালিয়ে অর্জিত সফলতাকে ব্যর্থতার রূপ দিয়েছে এসব চোরাকারবারিরা।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগ, সাভার শাখার তথ্য মতে, গেলো বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৫৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৬০ টাকা ব্যয়ে সাভার ও আশুলিয়ার ২২১টি স্পটে প্রায় ৬২টি অভিযান পরিচালনা করে শক্ত অবস্থানের জানান দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েমের নেতৃত্বে ঘন ঘন উচ্ছেদ অভিযানে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো গ্যাস চোরাই ব্যবসা।

এসব অভিযানে প্রায় ১৯৮ কিলোমিটার বিভিন্ন সাইজের ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮০টি চোরাই গ্যাস সঞ্চালনের পাইপ অপসারণ করা হয়। জব্দ করা হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৬৫টি বার্নার। একই সাথে ২ হাজার ৯২০ জনকে আসামি করা হয় ১০টি মামলায়। গ্রেফতার করা হয় দুই জন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে দুই চোরাকারবারিকে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয় ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। তবে করোনার কারণে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান বন্ধ থাকায় পুনঃসংযোগ দেয়ায় আবার তৎপর চোরাকারবারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বার্থান্বেষী মহলকে ম্যানেজ করে আশুলিয়ার ঘোষবাগ, তৈয়বপুর, কাঠগড়া, মানিকগঞ্জ পাড়া, নরসিংহপুরসহ প্রায় সকল স্পটে পুনঃসংযোগ দিয়েছে রাষ্ট্রের সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস চোররা। প্রতি সংযোগ বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। কেউ কেউ আবার রাষ্ট্রীয় সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাসকে নিজস্ব সম্পদে পরিণত করে অবৈধ সংযোগ দিয়ে প্রতিমাসে গ্যাসের বিল বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

আশুলিয়ার আয়নাল মার্কেট এলাকার বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী এমদাদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিচ্ছিন্ন থাকা অবৈধ গ্যাস সংযোগগুলো পুনঃসংযোগ দেওয়ায় গ্যাসের প্রেশার কমেছে প্রায় ৫ গুন। এখন সারাদিনে কেবল একবার গ্যাস পাচ্ছি ভোরে। এসময়ই সারাদিনের রান্নার কাজ শেষ করতে হয়। এসব অবৈধ সংযোগের জন্য বৈধ সংযোগ গ্রহীতারা রয়েছে চরম কষ্টে। এসময় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বেড়েছে গ্যাস চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাড়িওয়ালা বলেন, আমাদের এই এলাকা শিল্প অধ্যুষিত এলাকা। এখানে তেমন কোনো ফসল উৎপাদন হয় না। আমারা বাসা ভাড়াকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছি। লাখ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে আমরা বাড়ি নির্মাণ করেছি। এখানে পোশাক শ্রমিকরা গ্যাস না থাকলে বাড়ি ভাড়া নিতে চায় না। মাসের পর মাস বাড়ি খালি থাকে। আমরা ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারি না। তাই বৈধ অবৈধ না দেখে অনেক বাড়িওয়ালাই গ্যাসের সংযোগ নিতে বাধ্য হয়।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগ সাভার শাখার উপ-ব্যবস্থাপক ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানের সমন্বয়কারী আব্দুল মান্নান পুনঃসংযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুণঃসংযোগের কিছু তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে আমরা আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু করবো।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগ, সাভার শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে উচ্ছেদকৃত লাইনের পুনঃসংযোগের তথ্য পাওয়া গেলে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর