অদম্য ইচ্ছাশক্তিতেই প্রতিবন্ধিতা জয় অনিকের!

, জাতীয়

এস এম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 04:28:40

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় করে এগিয়ে যাচ্ছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী অনিক মাহমুদ (২২)। ছুঁতে চান চূড়ান্ত সাফল্যের চূড়াকে।

বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ এলাকার প্রতিবন্ধী অনিক মাহমুদের কথা।

জন্মগতভাবেই তার নিজের দুই পা অস্বাভাবিক চিকন ও ছোট। হুইল চেয়ারেই তার বেড়ে ওঠা। তবে এই হুইল চেয়ারে বসেই প্রতিবন্ধিতা জয় করে ইতিমধ্যেই নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে প্রতিমাসে তিনি আয় করছেন ৭০-৮০ হাজার টাকা। কয়েকজন বেকার তরুণের জন্য তার প্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান। 

অনিকের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন কয়েকজন তরুণ

শুরুর গল্পটা নিয়ে অনিক মাহমুদ বলেন, কম্পিউটারের প্রতি অনেক আগ্রহ ছিলো। ২০১২ সালের দিকে বাড়ি থেকে হুইল চেয়ার করে কম্পিউটার শিখতে যেতাম আধা কিলোমিটার দুরে। নিজে কিছু একটা করবো এমন সিদ্ধান্ত থেকেই একটা কম্পিউটার কিনে দোকান স্টেশনারির দোকান দিয়ে বসলাম।

এরপর ২০১৮ সালের শুরু থেকে ই শিখনের মাধ্যমে অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর তিনমাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। একই সাথে বিভিন্ন ইউিটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিও দেখে ফ্রিল্যান্স্যারের ওপর কাজ শুরু করি।

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে প্রতিমাসে তিনি আয় করছেন ৭০-৮০ হাজার টাকা

এভাবেই আমি প্রতিদিন ১৫-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কম্পিউটারে প্রতিনিয়ত কাজ করেছি। ২০১৯ সাল থেকে মোটামুটি কাজ পাওয়া শুরু করেন মার্কেটপ্লেসে। টি-শার্টে ডিজাইন নিয়েই প্রথম কাজের বিনিময়ে ২৫ ডলার হাতে পান তিনি। আর সর্বোচ্চ একটা প্রজেক্ট থেকে তিন হাজার ডলারের কাজ করতে পেয়েছি। এখন আর আমাকে বায়ার খুঁজে পেতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়না? প্রচুর কাজের অর্ডার আমি পেয়ে থাকি।

অদম্য অনিক বলেন, ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে ফাহিম উল করিম নামের বিছানাবন্দী এক প্রতিবন্ধীকে দেখে আমি প্রেরণা পাই। সে যদি বিছানায় থেকে সফলতা লাভ করতে পারে তবে আমি কেন হুইল চেয়ারে বসে পারবো না?

তিনি বলেন, আমার ইচ্ছে ছিল আমার জীবনে এমন কিছু একটা করবো, যেখানে আমার কারও কাছে কাজের জন্য যাওয়া লাগবে না বরং আমি আমার প্রতিষ্ঠানে কিছু তরুণদের চাকরি দিবো। আমি কখনো নিজেকে দুর্বল ভাবি না, অন্য মানুষের মতোই নিজেকে মনে করি। আর কাজ করে যাই নিজের স্বপ্নপূরণে।

অনিকের পিতা মোজাহার আলী হালসা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। দুই ভাইয়ের মধ্যে অনিক ছোট। বড় ভাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। মোজাহার আলী বলেন, আমার দুই ছেলের মধ্যে এই ছোট ছেলেকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্ত এখন আমি আমার এই প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য গর্ব করি। সবাই এখন অনিকের বাবা বলেই আমাকে চেনেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর