করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে গেল মার্চে রাজশাহীর পার্ক-চিড়িয়াখানাসহ সকল বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। ফলে ঈদুল ফিতরে ঘরবন্দী কেটেছে রাজশাহীবাসীর ঈদ।
তবে পাঁচ মাস পর ঈদুল আজহার দিনে খুলে দেওয়া হয়েছে রাজশাহীর সকল পার্ক ও চিড়িয়াখানা। ঈদের দিন তেমন ভিড় দেখা না গেলেও ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন ভ্রমণপিপাসু মানুষ এবং শিশুদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে শহরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের দিন প্রায় ৭০০ দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় এসেছিল। ঈদের দ্বিতীয় দিন তা প্রায় তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজারে। আর তৃতীয় দিন সকাল থেকে চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টার ও ফটকগুলোতে রীতিমতো লাইন পড়ে যায়।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন- স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেখানে ভ্রমণপিপাসু মানুষ এবং শিশুদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক না পরলে কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জীবাণুনাশক টানেলের ভিতর দিয়ে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। ভিতরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিও নজরদারি করছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। করা হচ্ছে সচেতনতামূলক মাইকিং।
ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার (২ জুলাই) বিকেলে চিড়িয়াখানায় শিশু তানভির হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা আবু হায়দার। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে গৃহবন্দী থাকতে থাকতে আমার ছেলে বিরক্ত। চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকলেও সে মাঝে মাঝেই এখানে আসতে চাইত। কিন্তু আসা যেত না। ঈদের দিন সে আবার বায়না ধরে। কিন্তু সেদিন কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারিনি। পরদিন এসেছি।
গৃহিণী জলি খাতুন বলেন, আগে দু’একদিন পরপর বাচ্চাদের নিয়ে আসতাম। এবার এলাম পাঁচ মাস পর! আগের চেয়ে চিড়িয়াখানা বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মনে হচ্ছে। সবচেয়ে ভাল লাগছে নতুন করে সংস্কার করা পুকুরটি। নতুন পানি দিয়ে পুকুরে রঙিন মাছ ছাড়া হয়েছে। বড় বড় রুই-কাতলও দেখা যাচ্ছে। বাদাম ছুড়ে দিলেই মাছগুলো কাছে আসছে। এটা শিশুরা খুব বেশি উপভোগ করছে। পাশাপাশি নানা রকম পশু-পাখি আর রাইড তো আছেই। এত দিন পর এসব পেয়ে তার শিশুরা খুব খুশি।
চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার শরিফুল ইসলাম বলেন, বিনোদন কেন্দ্র খোলা হলেও রাজশাহীর শিশু পার্ক এখনও বন্ধ। ফলে আমাদের এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি হচ্ছে। সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি আমরা খুব খেয়াল রাখছি। প্রবেশের সময়ই সবাইকে জীবাণুনাশক টানেলের ভেতর দিয়ে আসতে হচ্ছে। আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিং করা হচ্ছে।
এদিকে, ঈদের দিন থেকে রাজশাহীর বিস্তীর্ণ পদ্মার পাড়েও নানা বয়সী মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। ঈদের দিন এবং দ্বিতীয় দিন বিনোদন পিপাসু মানুষের ভিড় ছিল বেশি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর ধারে ভিড় জমাচ্ছেন বিনোদন পিপাসুরা। ভরা পদ্মায় এখন আছড়ে পড়ছে ঢেউ। পড়ন্ত বিকালে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে সূর্য। এমন অপার সৌন্দর্যের টানেই বিনোদন প্রেমিরা যাচ্ছেন পদ্মারপাড়ে।
রাজশাহী মহানগরীর পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে পদ্মার পাড়। ঈদের দিন থেকে এলাকাগুলো সব সময় মুখর থাকছে বিনোদন প্রেমীদের পদচারণায়। করোনার থাবা দূর করে পদ্মার পাড়ে এখন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও এখন জমজমাট। মাঝিদের নৌকাতেও মিলছে যাত্রী। নৌকাগুলো ভাসছে ভরা পদ্মায়। অনেকেই পদ্মাপাড়ের লালন শাহ মঞ্চের গ্যালারিতে বসে উপভোগ করছেন পদ্মার সৌন্দর্য্য।
নগরীর বড়কুঠি এলাকায় পদ্মাপাড়ে গিয়ে তানিয়া খাতুন নামে এক তরুণী জানান, করোনা পরিস্থিতিতে তিনিও বাসা থেকে বের হননি। ঈদে বন্ধুরা বেড়ানোর কথা বললে আর না করেননি। সবার সঙ্গে পদ্মাপাড়ে এসেছেন। নৌকায় ঘুরেছেন। তানিয়া বলেন, এখানে বেড়াতে আসার পর যেন ঈদ পূর্ণতা পেল!
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, রাজশাহীতে মুক্ত বাতাসে একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য পদ্মাপাড়ের তুলনা নেই। লকডাউন শিথিল করার পর থেকেই পদ্মাপাড়ে বিনোদন পিপাসুদের আনাগোনা বেড়েছে। ঈদের পর সেটা আরেকটু বেড়েছে। আমরা বলছি- সামাজিক দূরত্বটা যেন বজায় থাকে। সেটা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে রয়েছে।