আগের দিনটা শেষে বাংলাদেশকে একটু হলেও ম্যাচে দেখা যাচ্ছিল, দ্বিতীয় দিনের শেষে তাও দেখা যাচ্ছে না। ভারত ২২৭ রানের লিড নিয়ে নেমেছে দ্বিতীয় ইনিংসে। দিন শেষের আগে ৮১ রান তুলেছে ৩ উইকেট খুইয়ে। ভারতের লিড এখন ৩০৮ রানের। স্বাগতিকরাই যে চালকের আসনে, তা আর আলাদা করে বলে না দিলেও চলে!
এমন পরিস্থিতিটা হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের দোষে। সাদমান ইসলাম থেকে শুরু করে সাকিব আল হাসান পর্যন্ত প্রায় সবাই আউট হয়েছেন হয় টেকনিকের ভুলে, নাহয় খামখেয়ালী শট খেলে। এক মুশফিকুর রহিম বাদে বাকি সবার আউট হওয়ার ধরনই টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে বেশ বেমানান। সবকিছুর মিশেলে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৪৯ রানে, ফলো অন এড়ানোর মতো রান থেকে আরও ২৮ রানের দূরত্বে থেকে।
অথচ গতকাল দারুণ শুরুর পর যখন ভারতকে প্রত্যাশামাফিক রানে আটকে রাখা গেল না, রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর রবীন্দ্র জাদেজার ১৯৯ রানের জুটিতে তা যখন ৪০০ ছুঁইছুঁই হয়ে গেল, তখন অ্যাপ্রোচটা হতে হতো তার ঠিক উল্টো। কিন্তু বাংলাদেশ হেঁটেছে তার উল্টো পথে। যার ফলাফল এই ব্যাটিং ব্যর্থতা।
বোলাররা লড়েছেন নিজেদের সাধ্যমতো। দুই রবির জুটি যখন চোখরাঙানি দিচ্ছিল আরও বড় রানের, তখন সকালের শুরুতে সে জুটি ভেঙে বাকি এক ঘণ্টায় ভারতের লেজটা মুড়ে দেন পেসাররা। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, তাসকিন আহমেদ আর হাসান মাহমুদ। শেষ জন একটা উইকেট নিয়ে পূরণ করেন টানা দ্বিতীয় ফাইফার, ভারতের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পান টেস্টে পাঁচ উইকেট। আর তাসকিন গতকাল দারুণ বল করেও উইকেটশূন্য থাকার জ্বালা মেটান ৩ উইকেট নিয়ে। ভারত ৩৩৯/৬ থেকে ৩৭৬ রানে অলআউট হয়ে যায়।
বাংলাদেশ এই ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল বেশ চনমনে, উজ্জীবিত। হওয়ারই কথা। রাওয়ালপিন্ডির ইতিহাস যে মানসপটে এখনও বেশ তরতাজা! সে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পেসারদের দারুণ বোলিং করারই কথা। দুটো নতুন বলে দারুণ বোলিং করে ভারতের ৯ উইকেট নিয়ে তা তারা করেছেনও।
তবে মূল পরীক্ষাটা তাদের দিতে হয় আজ শেষ বিকেলে। সে সুরটা কেটে গেল যখন, ৫০ ওভার ব্যাট করতে না পারা, ১৫০ রানও না করতে পারার হতাশা নিয়ে দল যখন ন্যুব্জ, তখন। পেসাররা সে পরীক্ষাতেও পাসমার্কই পাবেন। ৬ ওভারের ভেতর দুই ওপেনার রোহিত শর্মা আর যশস্বী জয়সওয়ালকে ফেরালেন তাসকিন আহমেদ আর নাহিদ রানা।
এরপর প্রতি আক্রমণে বিরাট কোহলি আর শুভমান গিল শুরুর চাপটাকে উপড়ে ফেলতে চাইলেন। তবে কোহলিকে দিনের শেষটা করে আসতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ, সঙ্গে ভাগ্যও দায়ী কিছুটা। তার বলে প্লাম্ব এলবিডব্লিউ হলেন কোহলি, রিভিউর দরকার মনে করলেন না, পরে রিপ্লেতে দেখাচ্ছিল সূক্ষ্ম একটা এজ হয়েছিল তার ব্যাটে।
তবে সেটা না নিয়েও খুব একটা ক্ষতি হয়নি ভারতের। পুরো দিনে বাংলাদেশের ব্যাটিং তাদের এতটাই ম্যাচে এনে দিয়েছে যে, একটা রিভিউ না নিয়ে উইকেট খুইয়ে তাদের ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার কোনো উপায়ই নেই। ভারতের পুঁজি এখন ৩০৮ রানের। বোলিং ইউনিট অতিমানবীয় কিছু করে বসলেও রানটা অনেক বড়ই হবে।কাল পর্যন্ত ভারতের এই লিডের পাহাড়টা তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা হয়, নাকি মাউন্ট এভারেস্ট, সেটাই এখন দেখার বিষয়।