সংগীতের মাধ্যমে ডাটা স্থানান্তরের উপায় খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা
কল্পনা করুন এমন এক বিশ্বের কথা যেখানে ক্যাফে বা হোটেলে অবস্থানকালে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজনই হচ্ছে না আপনার। এর বদলে, ডাটা স্থানান্তরিত হবে সংগীতের মাধ্যমে। না, কোনো ‘পাসওয়ার্ড ওয়ান-টু-থ্রি’ বলা জিঙ্গেলের মতো কিছু এটি হবে না। তবে, ইটিএইচ জুরিখের একদল গবেষক সম্প্রতি একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে সংগীতের মাধ্যমে ডাটা স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। এই সংগীত অবশ্য মানুষের কানে শ্রবণযোগ্য নয়, তবে তা সহজেই পাঠোদ্ধার করা যাবে স্মার্টফোনের সাহায্যে।
এক নতুন তরঙ্গ
ব্লুটুথের মতো কিছু তারহীন যোগাযোগ প্রযুক্তি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে রেডিও তরঙ্গের সাহায্যে ডাটা স্থানান্তর করে। তবে, ব্লুটুথের ক্ষেত্রে ফটো বা ফাইল শেয়ার করার জন্য একজোড়া ডিভাইস দরকার হয়। আর এয়ারড্রপে বন্ধু খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে, এমন যে কেউই জানে, কখনো কখনো ব্লুটুথ হতে পারে একটু বেশিই খুঁতখুঁতে।
নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুবই সাধারণ একটি মাধ্যম। সেটি হলো শব্দ। বর্তমানের প্রায় সব সেলফোনেই একটি করে বিল্ট-ইন মাইক্রোফোন রয়েছে যা সংগীত বা বাজনা থেকে ধরতে পারে অডিও ডাটাকে। সেই ডাটার পাঠোদ্ধার করাটা হতে পারে স্মার্টফোন অ্যাপ ডাউনলোড করার মতোই সহজ, যখন সেখানে থাকবে ইটিএইচ জুরিখের গবেষকদলের তৈরি করা অ্যালগরিদম। তবে, অ্যাপটি এখনো সবার ব্যবহারের জন্য ছাড়া হয়নি।
যদিও চার্প ও লিসনারের মতো কোম্পানি ২০০৯ থেকে শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে ডাটা স্থানান্তর নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, তবে জুরিখের দলটিকে আলাদা করে রেখেছে একটি অনন্য বিষয়। সেটি হলো শ্রোতার সন্তুষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করা ছাড়াই তারা ডাটাকে সংগীতের সাথে একীভূত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
অত্যন্ত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে নোটগুলোকে ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এত উঁচুতে যে মানুষের শ্রবণশক্তি তা খুব কমই ধরতে পারবে। কোথায় ডিকোডার অ্যালগরিদম ডাটার অনুসন্ধান করবে সেটার নির্দেশ করাই হলো এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য। এরপর, নির্দিষ্ট সংগীত-অংশের প্রবল ফ্রিকোয়েন্সির উপরে, একটু ধীরলয়ে উচ্চ ও নিম্ন নোট যোগ করেন তারা। উপরে যোগ করা নোটটিই বহন করে ডাটাকে।
বাইনারি বিট ও সংগীতের বিট
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে, গবেষকরা প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ বিট ডাটা স্থানান্তরে সক্ষম হয়েছেন। একইসাথে মূল সংগীতটিকেও রাখতে পারছেন অটুট। সন্দেহ থাকলে, যে কেউ ইটিএইচ বিগ ব্যান্ডের দুটো অডিও স্যাম্পল শুনে দেখতে পারেন। কোনো পার্থক্য কি ধরতে পারা যাচ্ছে? প্রথম ক্লিপে প্রেস রিলিজ হিসেবে পাঠানো মিউজিক-পিসটি রিপিট হচ্ছে প্রতি ০.৭ সেকেন্ড অন্তর অন্তর।
ভিডিও লিঙ্ক https://i.rmbl.ws/s8/2/5/l/l/Z/5llZa.caa.2.mp4?b=0&u=age1
ভিডিও লিঙ্ক https://i.rmbl.ws/s8/2/_/m/l/Z/_mlZa.caa.2.mp4?b=0&u=age1
এটির মতো উচ্চলয়ের সংগীতই ডাটা স্থানান্তরের জন্য আদর্শ, কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডমিন্যান্ট ফ্রিকোয়েন্সি। বেশিরভাগ পপ ও রক সংগীতও এক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়। যেমন, কুইন ব্যান্ডের “দ্য শো মাস্ট গো অন” আর ভ্যান হেলেনের “অ্যান্ড দ্য ক্র্যাডল উইল রক” গানদুটোই লিসেনিং টেস্টে ভালো করেছে। এক্ষেত্রে শ্রোতাদের আসল ও পরিবর্তিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য ধরতে বলা হয়েছিল। ৪০ শতাংশের বেশি শ্রোতা পরিবর্তনটা ধরতে পারেনি। যেখানে সংগীতের পার্থক্য নিয়ে তারা ছিল খুবই খুঁতখুঁতে, সেখানে এই পরিমাণটা একটু বেশিই বলা চলে।
ইটিএইচ দল উল্লেখ করেছে ডাটা স্থানান্তরের হার প্রতি সেকেন্ডে হবে ২০০ বিটের কাছাকাছি, কেননা নির্ভুলতা ও মান নিশ্চিত করার জন্য দরকার কিছু ডাটার পুনরাবৃত্তি। ডাটা স্থানান্তরের হার, ডাটার মান, আর সংগীতের মানের ব্যাপার মাথায় রাখলে, এই প্রযুক্তি সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করবে ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ডের মতো ছোট ও সহজ ডাটার ক্ষেত্রে।
প্রক্সিমিটি মার্কেটিংয়ের মতো আরেকটি শিল্পে সংগীতের মাধ্যমে ডাটা শেয়ার করা হতে পারে দারুণ সহায়ক। কোনো একদিন হয়তো, স্পেশাল প্রমোশন ও পণ্যের তথ্যের মতো বিষয় পেয়ে যাবেন কোনো বিপণীবিতানের স্পিকারে বাজা সংগীতের মাধ্যমেই। যেখানে ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক ও স্মার্টফোন রয়েছে, সেখানে এর কাজ করার সম্ভাবনা আসলেই অফুরন্ত!