ভাসানচরের উন্নয়নে নৌবাহিনী এ বছরের সম্পূর্ণ বরাদ্দ চেয়েছে 

  • আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের মুহূর্ত।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের মুহূর্ত।

ঢাকা: রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরের উন্নয়নে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কাছে চলতি অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দের সম্পূর্ণ অর্থ তাদের তহবিল রাখতে অনুরোধ করেছে  প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ।

চলতি  বছর ভাসানচরের উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে  ৪১৩.৭০ কোটি টাকা ।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট)  আশ্রয়ণ প্রকল্প ৩ এর পরিচালক মোঃ আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রনালয়ের কাছে এ অর্থ চেয়েছে  প্রধানমন্ত্রীর অফিস আওতায় থাকা বাংলাদেশের নৌবাহিনী। সাধারণত তিন কিস্তির তহবিল নিতে অর্থ মন্ত্রনালয় কাছে অনুমতি নিতে হয়না ।

অর্থ মন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, তবে পরবর্তী শেষ কিস্তির অর্থ ছাড় করতে অবশ্যই অর্থ  মন্ত্রণলায়ে অনুমতি লাগবে । আকর্ষিক কোন কারণে ভাষানচরের উন্নয়নের জন্য এ অর্থ লাগতে পারে।  এজন্য সম্পূর্ণ তহবিল নৌবাহিনী হাতে রাখতে চাচ্ছে ।

উল্লেখ্য, এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে অস্থায়ী আবাসন গড়ে তুলতে গত বছর একনেক বৈঠকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নের এ প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ঠিক হয়েছে।

এই প্রকল্পের আওতায় ভাসানচর ভাঙন প্রতিরোধসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে নৌবাহিনী রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলবে। সেখানে ১২০ টি গুচ্ছগ্রাম ১৪৪০ ব্যারাক হাউস ও ১২০ টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে ।

এছাড়া সুপেয় পানি , পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, পানি নিস্কাশন, পুকুর খনন, স্কুল, মাদ্রাসাসহ অন্য অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি সাইক্লোন সেন্টার স্টেশন ও দু’টি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে। এ জন্য একটি মাস্টার প্যান প্রণয়ন করা হয়েছে ।

গত এপিল মাসে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর কাজ সমন্বয় করতে ’যৌথ কনসালটেটিভ ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে । এ গ্রুপের সদস্য হিসেবে থাকছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা (ইউএনআরসি)। ইউএনআরসি সদস্যদের ভাসানচর পরিদর্শনের কথা রয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সেখানে যেতে আগ্রহী করে তুলতে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা বেশ জটিল কাজ। এ জন্য কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করা হয়। এ ছাড়া স্থানান্তর কাজে পাশে থাকার জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ১১ টি সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে । এর আগে এ বিষয়ে ৪ ও ১২ এপ্রিল বাংলাদশে কর্মরত জাতিসংঘের সহায়তা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে দুই দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদে ভাসানচরে যেতে রোহিঙ্গাদের আগ্রহী করে তুলতে উদ্যোগ নেয়া হবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/31/1535691490683.jpg

অতিবৃষ্টি, ভূমিধস বা পাহাড়ি ঢলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সম্পর্কে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে তা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি স্থানান্তরের উদ্দেশ্য সম্পর্কিত হ্যান্ডবিল বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যেতে আগ্রহী করে তুলতে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ভাসানচরে আয়ের পথ সৃষ্টি করতে ছোট দোকান, বিক্রয় কেন্দ্র পরিচালনার পাশাপাশি মহিষ, হাঁস-মুরগি পালন, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছচাষ, কুটিরশিল্পসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান ও আয়ের পথ সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হবে।

এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ বিভাগ মন্ত্রণালয় ও মিল্ক ভিটাকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়।

এ কাজে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি এনজিওকে সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক কক্সবাজারকে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।