মৃতদের জন্য করণীয় আমল
দুনিয়াতে কেউ চিরস্থায়ী না। সবাইকেই একদিন না একদিন চলে যেতে হবে। মানুষ মারা যাওয়ার সঙ্গে তার আমলের খাতা বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন জ্ঞান- যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দোয়া করে। -সহিহ মুসলিম: ৪৩১০
যেহেতু মৃত্যুর পর তাদের আমল বন্ধ হয়ে যায়, তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত মৃতদের রুহের মাগফিরাতের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। মৃতদের জন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। তাই সুন্নত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেওয়ার পর তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেওয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দোয়া করা।
আলোচ্য প্রবন্ধে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে মৃতদের জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌঁছবে তা উল্লেখ করা হলো।
কেউ ইন্তেকালের পর তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। মূলত জানাজার নামাজ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া। এ ছাড়া মৃতের জন্য তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করা। উত্তম দান হচ্ছে, সদকায়ে জারিয়া। যেমন পানির ব্যবস্থা করা, দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা, কোরআন শিক্ষার জন্য মক্তব-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা ও স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কোনো কাজ করা ইত্যাদি।
মৃতদের পক্ষ থেকে হজ বা ওমরা পালন করলে তা আদায় হবে এবং তারা উপকৃত হবেন। তবে মৃত মা-বাবার পক্ষ থেকে যে হজ বা ওমরা করতে চায়, তার জন্য শর্ত হলো- সে আগে নিজের হজ-ওমরা পালন করবে।
মৃত মা-বাবার পক্ষ থেকে কোরবানি করাও সওয়াবের কাজ। সেইসঙ্গে মৃত মা-বাবা শরিয়তসম্মত কোনো অসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের ওপর দায়িত্ব। আর মৃত মা-বাবার কোনো ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের ওপর বিশেষভাবে কর্তব্য।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণ পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ না তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়।’ -সুনান ইবনে মাজা: ২৪১৩
ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহিদও হয়। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ –সুনানে নাসায়ী: ৭/৩১৪
এ ছাড়া মা-বাবার কোনো শপথের কাফফারা, ভুলকৃত হত্যাসহ কোনো কাফফারা বাকি থাকলে সন্তানের উচিত তা পূরণ করা। তাদের কোনো মান্নত থাকলে তা পূরণ করা। মা-বাবার ভালো কাজসমূহ চালু রাখা, তাদের কবর জিয়ারত করা (কবর জিয়ারত কোনো দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না)।
মৃতরা কারও সঙ্গে কোনো ভালো কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেঁচে থাকলে করে যেতেন- তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। তারা কোনো গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে, বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোনো কমতি হবে না।’ –সহিহ মুসলিম: ৬৯৮০