আখাউড়ায় প্রতিদিন ফ্লাগ ডাউনে বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলা

  • আল মামুন, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আখাউড়ায় ফ্লাগ ডাউনে বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলা। ছবি: বার্তা২৪.কম

আখাউড়ায় ফ্লাগ ডাউনে বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলা। ছবি: বার্তা২৪.কম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া-আগরতলা চেকপোস্টে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় ভারত ও বাংলাদেশের ফ্লাগ ডাউন বা জাতীয় পতাকা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নামানো হয়। এ সময় শূন্য রেখায় দু’দেশের ফ্লাগ ডাউন বা পতাকা নামানোর দৃশ্য দেখার জন্য ভিড় করেন বন্দর এলাকাসহ এর আশপাশের লোকজন।

শুধু পতাকা নামানোর দৃশ্যই নয়, এ সময় উভয় দেশের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে অন্তত ৫ মিনিট দেখা করার সুযোগও পান তারা। আর এ সময় সীমান্তের শূন্য রেখায় দু’দেশের লোকজনের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বিষয়টিকে খুবই আনন্দের বলে মনে করছেন দু’দেশের লোকজন। কিন্তু দর্শনার্থীদের দাবি সময়টা আরও বাড়িয়ে দেয়ার। তবে বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপাশে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় বলে সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে আখাউড়া-আগরতলা চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটার আগে থেকেই উৎসুক সাধারণ মানুষ ভিড় করতে থাকেন সীমান্তের শূন্য রেখার কাছে। ঘড়ির কাটায় ঠিক যখন সাড়ে পাঁচটা বাজে তখনই শুরু হয় পতাকা নামানোর জন্য সতর্কবার্তা। এ সময় দু’দেশের ৬ জন করে জওয়ান বিভিন্ন কসরত করতে থাকেন। সঙ্গে দু’দেশের কমান্ডাররাও সঙ্গে থাকেন। পাশাপাশি একই ভঙ্গিতে দু’দেশের বিএসএফ ও বিজিবি জওয়ানরা নিজেদের দেশের পতাকা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নামাতে থাকে।

এ সময় ঢোল ও বিউগলের শব্দে সীমান্তের শূন্য রেখা মুখরিত হয়ে উঠে। আর এসব কসরত ও ফ্লাগ ডাউন দেখতে অপলক তাকিয়ে থাকেন উৎসুক দর্শকরা। এ যেন এক অন্যরকম ভালোলাগা। প্রতিদিন এই পতাকা নামানোর সময় এভাবেই দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। আর উৎসুক দর্শকদের জন্য দু’দেশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে চেয়ারের। তবে বিভিন্ন উৎসব কিংবা বন্ধের দিন আরও বেড়ে যায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা। পতাকা নামানোর পরে দু’দেশের লোকজনের এক মিলনমেলায় পরিণত হয় সীমান্তের শূন্য রেখা। এসময় সীমান্ত এলাকার পাশের দু’দেশের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে অন্তত ৫ মিনিটের জন্য দেখা করতে পারেন তারা। আর এই বিষয়টিকে খুবই আনন্দের বলে মনে করছে দু’দেশের লোকজন। তারা চায় অন্তত যেন ১৫ মিনিটের জন্য তাদের দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/06/1536213463274.jpg

আগরতলায় বিয়ে দেয়া বোন উর্মিকে দেখতে আসেন আখাউড়ার শর্মি দাশ গুপ্ত। এ সময় তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আখাউড়া স্থলবন্দরের শূন্য সীমানায় দু’দেশের পতাকা নামানোর পর আগরতলায় থাকা আমাদের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনকে দেখতে পাই। এটি অনেক আনন্দের। ভালো লাগে বিষয়টি। সময়টা আরও বাড়িয়ে দিলে ভালো হত।’

শূন্য সীমানায় তনবি নামে এক যুবক তার দিদা ও মাসিদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, অনেকদিন পর তাদের সঙ্গে দেখা হল। খুব ভালো লাগছে তার। এজন্য দু’দেশের কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

আগরতলা থেকে বাংলাদেশে থাকা এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন প্রদীপ রায়। তিনি বলেন, ‘সময়টা আরও বাড়িয়ে দিলে আমরা দু’দেশের লোকজন একটু বেশি সময় নিয়ে কথা বলতে পারতাম। এমনিতে সব সময় মোবাইলে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তবে এখানে আসলে অন্তত একটু হলেও চোখের দেখা দেখতে পাই।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের আখাউড়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মো. মোক্তার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের শুধুমাত্র আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তেই একই সঙ্গে এই ফ্লাগ ডাউন বা পতাকা নামানো হয়। অন্যান্য জায়গায় এটি আর নেই। তাই এখানে সীমান্তবর্তী দু’দেশের অনেকেরই আগ্রহ থাকে দেখা করার। আমরাও সীমান্তরক্ষীদের পাহারায় ৫ মিনিটের জন্য দেখা করার সুযোগ করে দেই। তবে এ সময় পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় বলে আমরা এর বেশি সময় দিতে পারি না।’