চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত জলসীমা থেকে দৈনিক আয় হবে ১ কোটি টাকা

  • আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, ছবি: বার্তা২৪

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, ছবি: বার্তা২৪

দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বহির্নোঙরে সাগরের জলসীমা সীতাকুণ্ড থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া এবং কুতুবদিয়া পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত এ জলসীমা থেকে বন্দরের আয় হবে দৈনিক এক কোটি টাকা।

জলসীমা সাত থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বৃদ্ধি করায় দৈনিক এত টাকা আয় সম্ভব হবে বন্দর কতৃপক্ষের। এ বিষয়ে সম্প্রতি সরকারি প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাহাজ ভেড়ার সুবিধার্থে সাগরের ওই অংশকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। স্থাপন করা হবে নতুন বয়া। বোট বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচলে দিক নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, কয়েক বছর ধরে পণ্যবাহী জাহাজ আসা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চাপ সামাল দিতে বন্দরের সীমানা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছিল। একই সঙ্গে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ঘিরে এলএনজি টার্মিনাল, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) নির্মিতব্য মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর এবং কুতুবদিয়ার গভীর সাগরকে কেন্দ্র করে জাহাজ আসছিল। তাছাড়া আনোয়ারা এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধার্থে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই সীমানা বাড়ানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/10/1554845147950.jpg

গত ৩ এপ্রিল বর্ধিত জলসীমায় আসা জাহাজের পোর্ট ডিউজসহ বিভিন্ন চার্জ আদায়ের জন্য ক্যাপ্টেন এম শফিউল বারী (এনডি) পিএসসি, বিএন উপস্থিতিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তানুযায়ী, বহির্নোঙরে আসা জাহাজকে সুরক্ষা, নিরাপত্তা, হাইড্রোগ্রাফি, কার্গো হ্যান্ডলিংসহ আন্তার্জাতিক পোর্ট অ্যাকট অনুযায়ী চার্জ প্রযোজ্য হবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের দৈনিক আয় হবে এক কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দরের হারবার ও মেরিন সদস্য ক্যাপ্টেন এম শফিউল বারী বার্তা২৪.কমকে বলেন, সম্প্রসারিত সীমানায় এআইএস এবং ভিএইচএফ নেটওয়ার্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সব কিছু মনিটরিং করা হবে। আগে বহির্নোঙরে জাহাজ ভিড়লে আমরা কোনো চার্জ পেতাম না। অথচ বিদেশি জাহাজকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে হতো। এখন থেকে আমাদের চার্জ দিতে হবে।

বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশ থেকে আসা পণ্যবাহী কনটেইনার, ট্যাংকার ও খোলা জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ঢুকতে পারে না। সাড়ে নয় মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজই শুধু জেটিতে ঢোকার অনুমতি পায়। সবচেয়ে বড় জাহাজগুলো কুতুবদিয়া গভীর সাগরে নোঙর করে এর চেয়ে ছোট জাহাজগুলো ভিড়ে বহির্নোঙরে তিনটি অ্যাংকরেজে। যেখানে সর্বমোট ৯৩টি জাহাজ ভিড়তে পারে। কিন্তু জাহাজের তুলনায় অ্যাংকরেজ কম হওয়ায় প্রায় সময়ই জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষ, দুর্ঘটনা ঘটছে। ফলে জাহাজগুলো বহির্নোঙরে ভিড়ত। এখন থেকে বহির্নোঙরে ভেড়ানো জাহাজ থেকে চার্জ আদায় করতে পারবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/10/1554845121717.jpg

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘিরে সরকারের যে মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটি লক্ষ্য রেখেই বন্দরের জলসীমা বাড়ানো হয়েছে। সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া ঘিরে চারটি এলাকা ভাগ করে জলসীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। এখন থেকে এই জলসীমায় কোনো জাহাজ ভিড়লে আমরা চার্জ আদায় করতে পারব। এ টাকার পরিমাণ দৈনিক এক কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমানা আগে ছিল বহির্নোঙরের পাঁচ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত। জাহাজ আসা বেড়ে যাওয়ায় ২০১১ সালে সেটি সাত নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন সেখানে তিনটি অ্যাংকরেজ বা নোঙর এলাকা আছে। আর চট্টগ্রাম বন্দর বলতে জেটি ছাড়াও পতেঙ্গা উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল বোঝানো হতো। এখন থেকে পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ড, মীরসরায় থেকে সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়া পর্যন্ত বন্দর সীমানা বোঝানো হবে।