উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি ১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান।
সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ২০১৭ সালে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়ে কথা বলেন। সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত লম্বাশিয়া ক্যাম্পে তিনি অবস্থান করেন এবং রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এরপর বেলা ১২টার দিকে তিনি ক্যাম্প-৪ এ পৌঁছান, তার সাথে রয়েছেন ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সেখানে দুপুর ২টা পর্যন্ত কথা বলেন রোহিঙ্গাদের সাথে। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি ক্যাম্প ত্যাগ করেন।
এর আগে সোমবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান তিনি। একইদিন দুপুরে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের উদ্দেশে কক্সবাজারে পৌঁছান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কিনা, সেটির তদন্ত করছে আইসিসি। তদন্তের কাজে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি।
রোম সনদ অনুযায়ী, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কিনা, সেটির তদন্ত করছে আইসিসি। তদন্ত শেষে আইসিসি অভিযুক্তদের বিচারের জন্য আদালতে হাজির করে।
রোম সনদের অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশে কাজ করার বিষয়ে একটি সমঝোতা সই করেছে আন্তর্জাতিক এই আদালত।
রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোড এলাকায় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগে হামলার ঘটনায় বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা বলছে, ন্যাশনাল হাসপাতাল ও কলেজ ভবনে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের ন্যাশনাল হাসপাতালের ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ও দায়ী শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ন্যাশনাল হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অবসর প্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল প্রফেসর ডাক্তার ইফফাত আরা।
কলেজ শিক্ষার্থী অভিজিত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রতিদিনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে ডাক্তার ইফফাত আরা বলেন, গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যায়। পরের দিন ১৯ নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরের দিন ২০ নভেম্বর ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচি দেয়। পরবর্তীতে তারা আলোচনায় বসে ৯টি দাবি উত্থাপন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে পরের দিন অভিজিতের পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ আলোচনায় বসে। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে শিক্ষার্থীদের মনোনীত একজন ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞের নাম দেওয়ার প্রস্তাব দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও তারা সেটি দেয়নি। ২৩ নভেম্বর তদন্ত কমিটি প্রথম মিটিং করা হয়। সেখানে দাবিও অভিযোগের বিষয় আলোচনা করে সবাই সম্মতি দেয়।
তবে ২৪ নভেম্বর দুপুরে এক থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থী ন্যাশনাল হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ডেন্টাল বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া ক্যাশ কাউন্টার থেকে নগদ টাকা লুট করে। পাশাপাশি হাসপাতালের অভ্যন্তরে দেশে বিদেশি ছাত্র ছাত্রী সাধারণ রোগী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর হামলা করা হয়। পাশাপাশি হাসপাতালের আর্থিক সেবাই নিয়োজিত পূবালী ব্যাংকের শাখা তো ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। বর্বরোচিত হামলায় শতবর্ষে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির প্রায় দশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনায় মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও হামলার ঘটনায় ব্যাপক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে দেশ-বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, একজন চিকিৎসকের কাছে তার রোগীর সেবা প্রার্থনার সমান। অভিজিতের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এত কিছুর পরও ডাক্তারদের কপালে জুটেছে মিথ্যা অপবাদ, যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। ছাত্রদের ও রোগীর আত্মীয়দের চাহিদা মত তদন্ত কমিটি গঠন করেও ছাত্র প্রতিনিধিদের অসুবিধার কারণে তদন্ত করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোনোরূপ গাফিলতি ও সদিচ্ছার অভাব না থাকলে ভুল চিকিৎসা বা বিলম্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পার্শ্ববর্তী দুটি কলেজের শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সম্মেলন থেকে সঠিক কোনো কারণ জানাতে পারেনি।
তারা বলছেন, পার্শ্ববর্তী দুটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তারা জানেও না। কারণ এটি তাদের ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা।
জমি প্রস্তুত করেও বীজ সংকটে আলু রোপন করতে পারছেন না কিশোরগঞ্জের কৃষকরা। সংকট এতটাই যে অতিরিক্ত দাম দিয়ে হলেও কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে কৃষকদের। বীজের অধিক দাম ও সংকটে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে এই সংকট আরো তীব্র হচ্ছে।
এছাড়াও গত বছরের তুলনায় বাজারে সব ধরনের সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় আলু উৎপাদনে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের বছর ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম অনেক বেশি থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার অন্য দেশ থেকে আলু আমদানি করলে লোকসান গুণতে হবে কৃষকদের।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ভালো জাতের বক্স আলু প্রকাশ্যে পাওয়া যাচ্ছে না, যারা পাচ্ছেন তারা কয়েক গুণ বেশি দামে ক্রয় করছেন। নেদারল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত (বীজ সংরক্ষণ) আলু বীজ (৫০ কেজি) প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, গত বছর যার দাম ছিল আট থেকে ১০ হাজার টাকা, ডায়মন্ড জাতের আলু বীজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। বিগত বছর দাম ছিল ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকা, বগুড়া লাল আলু মণ প্রতি বীজ ৩৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা।
জানা গেছে, এ উপজেলার মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় দিন দিন আলুর আবাদ বাড়ছে। পৌর সদরসহ উপজেলার নয়টি ইউনিয়নেই কম বেশি আলুর আবাদ হয়ে থাকে, আমন ধান কাটার পরই আলু রোপনের জন্য কৃষক জমিতে কাজ শুরু করেন। আলু রোপনের আগে জমিতে প্রচুর সার ব্যবহার করতে হয়। এ উপজেলায় বছরে ১৩২০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়ে থাকে। যা থেকে প্রায় ২৬ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়। এখানকার উৎপাদিত আলু এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি হয়।
এ অঞ্চলের কৃষক ডায়মন্ড জাতের আলুর আবাদ বেশি করে থাকেন। বগুড়া লাল গুটি জাতের আলুর আবাদও হয়। এছাড়াও আগাম জাতের আলু বারী ৭২ ও স্পীড আলুর আবাদ হয়ে থাকে। আগাম আলু ৬০ থেকে ৬৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়। ভালোভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি বিঘা (৩৫ শতক) জমিতে ১০০ থেকে ১২০ মণ আলু উৎপাদন হয়। বীজ আলুর আবাদও এখানকার কৃষক করে থাকে। এ অঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য সরকারি, বেসরকারি তিনটি কোল্ড স্টোর রয়েছে।
উপজেলার বড় আজলদী গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, অস্বাভাবিকভাবে বীজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কী করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না, আলু চাষের জন্য সার, কীটনাশক ও চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। ফলনের পর ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন তারা৷
বিএডিসির ডিলার মো. এরফান উদ্দীন জানান, ভালো মানের বীজের সঙ্কট রয়েছে, আগের বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়তি দাম দিয়েও বীজ পাওয়া যাচ্ছে না, পাশাপাশি সব ধরনের বীজ, সার, কীটনাশকের দাম আগের বছরের তুলনায় বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম জানান, উপজেলা প্রশাসন আলু বীজ নিয়ে কারসাজি রোধে কাজ করছে। এজন্য কৃষকদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কোথাও আলু বীজের অতিরিক্ত দাম চাওয়া হলে, উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘যারা আন্দোলন করছে তারা আমারই ভাই, কার ওপর কঠোর হব। শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন দমনে আমরা আগের সরকারের মতো কঠোর হতে চাই না। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওর পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কলেজের সমস্যা আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। এজন্য আমাদের শিক্ষকরা রয়েছেন। কেউ রাস্তায় নামার প্রয়োজন নেই। রাস্তা ব্লক না করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেও দাবি জানাতে পারে, তাদের প্রতিনিধি গিয়ে আমাদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে পারে। বিভিন্ন কলেজের সমস্যা নিয়ে ছাত্র প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে পারে। আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে। আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। আমরা চাই তারা যাতে দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় সহিংস আন্দোলন না করে।
হাওরের কৃষি নিয়ে তিনি বলেন, কৃষি পণ্যে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন কি না সেটা দেখার বিষয়। কোনো মধ্যস্বত্বভোগী যাতে সুবিধা নিতে না পারে সেটিও দেখতে হবে।
এসময় তার সফরসঙ্গী ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আরেক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও বিলম্ব হয়ে মানুষ যেন বিপর্যের মুখে না পড়ে সে জন্য সরকার আগাম ব্যবস্থা নিবে। এর আগে দু’জনে তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, পুলিশ সুপার, আ. ফ. ম. আনোয়ার হোসেন খান, সুনামগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমন দোজ্জা, কবি নজরুল সরকারি কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক তানভীর ইসলাম চৌধুরী।