ভয়াল ২৯ এপ্রিল: আজও তাড়া করে বিভীষিকা সেই রাতের স্মৃতি
আজ সোমবার ভয়াল ২৯ এপ্রিল। আজ থেকে ২৮ বছর আগে এদিনে ‘ম্যারি এন’ নামক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল। এ অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয় এবং ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়। ওইদিন বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠেন।
এদিকে, নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ১৯৯১ সালের এই ঘূর্ণিঝড় একটি। ৯১-এর এই ভয়াল ঘটনা এখনো দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। ঘটনার এত বছর পরও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না সেই দুঃসহ দিনটি। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে। নিহতদের মরদেহ, স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ বার বার ফিরে আসে তাদের জীবনে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা সিনিয়র সাংবাদিক শামসুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পরিবারের ১৬জন সদস্যকে হারিয়েছি সেইদিন রাতে। মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে আমি আর আমার মা ও ভাগ্নি বেঁচে গিয়েছিলাম। সেই সময় আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র ছিলাম। একটি গাছকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে গিয়েছিলাম। সকাল হলে দেখি চারদিকে মরদেহ আর মরদেহ।’
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন মরদেহের স্তূপ জমে গিয়েছিল। শুধু মানুষ নয়, গরু-ছাগল-মহিষ আর মানুষের মরদেহে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিন। কোনো রকম ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া মানুষ ও পশু মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল।
সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সন্দ্বীপকে রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ জরুরি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সন্দ্বীপে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সন্দ্বীপের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আরও আশ্রয় কেন্দ্রের প্রয়োজন।’
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ৬ মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয় এবং এতে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও দ্বীপসমূহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতীয়া দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। এরমধ্যে শুধু সন্দ্বীপে মারা যায় প্রায় ২৩ হাজার লোক।’
ধারণা করা হয়, এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলালের ক্ষতি হয়। সাগর ও নদীর উপকূল প্লাবিত হয়। কর্ণফুলী নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ থাকলেও এটি জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১০০ টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে স্থানচ্যুত হয় এবং আঘাতের কারণে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অনেক যানও ছিল। এছাড়া প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন ফোনি নামের ঘুর্ণিঝড়ের প্রকোপ চলছে। চট্টগ্রাম ও দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকলে প্রাণহানী রক্ষা করা যাবে।’