একাধিক অভিযোগের পরও নতুন করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন গৃহবধূ সোমা দেবনাথ। তার স্বামী, কলাপাড়া জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এজিপি) অ্যাডভোকেট দুলাল চন্দ্র দেবনাথ আপোষের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি আলাদা থাকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করিয়েছেন। এর আগে, তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে বাসা ছাড়তে বাধ্য করার জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন।
গত ১৬ নভেম্বর, গণমাধ্যমে সোমা দেবনাথ ও তার শিশুকন্যার ওপর নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসে। তবে এখন পর্যন্ত সোমা দেবনাথের সমস্যার কোনো কার্যকর সমাধান হয়নি। বরং ২১ নভেম্বর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে চুক্তির মাধ্যমে তাদের আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
সোমা দেবনাথ জানান, তার স্বামী সমঝোতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে বাসা ছাড়তে হবে।
তিনি বলেন, "আমি বাসা ছেড়ে কোথায় যাব? আমার মেয়েকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব? এখনও বাসায় বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "চুক্তির শর্তে আমার সন্তানের ভরণ-পোষণ বা ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি গভীর দুশ্চিন্তায় রয়েছি।"
এ ঘটনার পর মানবাধিকার কর্মীরা একে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাজী আক্কেল আলী হাওলাদার ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক এবং মানবাধিকারকর্মী মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, "বাসার গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা অত্যন্ত অমানবিক। এটি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে। এ ধরনের কাজ কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।"
অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট দুলাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, "এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলুন। তারা বিষয়টি দেখেছেন।"
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এটিএম মোজাম্মেল হোসেন তপন বলেন, "আমরা উভয় পক্ষের সম্মতিতে মধ্যস্থতা করেছি। চুক্তি অনুযায়ী, দুলাল চন্দ্র প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা খোরপোষ দেবেন এবং ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সোমা দেবনাথ বাসা ছেড়ে দেবেন।"
জোরপূর্বক চুক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "চুক্তি উভয় পক্ষের সম্মতিতেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে সমিতিতে এসে কথা বলতে হবে।"
সোমা দেবনাথের ভাষ্যে, "আমি সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর চিন্তায় আছি। আপোষের নামে আমাকে এই চুক্তিতে বাধ্য করা হয়েছে। অথচ আমার মেয়ের বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষা করা হয়েছে।"
মানবাধিকারকর্মীরা বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এর ন্যায্য সমাধান করা উচিত। গৃহবধূ সোমা দেবনাথ এবং তার সন্তানের মৌলিক অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।