বিআরটিএ অফিসের দৌড়ঝাঁপে অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে ভাটা!
ঢাকা: ঈদুল আজহার আর বাকি ১৩ দিন। প্রতি বছরই ঈদের এ সময়ে অগ্রিম টিকিটের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঘরমুখো মানুষ। আর যাত্রীদের চাপ সামলাতে হাঁপিয়ে উঠেন বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার কর্মকর্তারা।
তবে এর উল্টো চিত্র দেখা মিলছে এবার রাজধানীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলোর টিকিট কাউন্টারে। টিকিট বিক্রি শুরুর পরের দিনেই কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিট কিনতে যাত্রীদের নেই চাপ। অন্যদিকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ফিটনেসের কাগজপত্র ও লাইসেন্সের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বিআরটিএ’র অফিসে। আর এসব কারণে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে সম্পূর্ণ ভাটা পড়েছে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাগুলোতে।
ফলে যেসব যাত্রী অগ্রিম টিকিটের জন্য পরিবহন কাউন্টারগুলোতে আসছেন তাদের হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। যাত্রীরা অগ্রিম টিকিটের জন্য আসলেই নতুন তারিখের কথা বলে বিদায় করে দিচ্ছেন কাউন্টার কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (০৮ আগস্ট) গাবতলীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
গাবতলীতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টার ছাড়া কেউই অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছেন না। যেসব পরিবহনগুলো অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছেন, তারাও আবার গাবতলী থেকে টিকিট বিক্রি না করে কল্যাণপুরের থেকে করছেন।
ঈদের আগে গাবতলীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের অগ্রিম টিকিট বিক্রির এমন দৃশ্যপটের কারণ জানতে চাইলে পরিবহন কাউন্টারগুলোর কর্তৃপক্ষরা জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর থেকে তারা অনেক চাপে আছেন। এই টার্মিনালের ৭৫ শতাংশ গাড়ির এদিকে যেমন নেই ফিটনেস সার্টিফিকেট, তেমনি চালকদেরও নেই লাইসেন্স।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, পরিবহন মালিক ও চালকরা এখন ফিটনেস সার্টিফিকেট ও লাইসেন্স করতে ছুটছেন বিআরটিএ’র অফিসে। তাই কারো পক্ষই এখন ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিকে নজর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামলে ফিটনেস সার্টিফিকেট ও লাইসেন্সের অভাবে গাড়িসহ চালকরা মামলা খাচ্ছেন। সেই ভয়ে তারা এখন অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিকে নজর না দিয়ে ছুটছেন ফিটনেস সার্টিফিকেট ও লাইসেন্স করার প্রক্রিয়ায়।
পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও চালকরা আরও মনে করছেন, প্রতি ঈদের সময় যাত্রী আনা নেওয়া করে তারা মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেন। সেই কারণে ঈদের আগে কোনো না কোনো ভাবেই এই সমস্যার সমাধান চান তারা।
সে ক্ষেত্রে অগ্রিম টিকিটের বিক্রি দুয়েক দিন পেছানোতে কোনো সমস্যা হবে না বলেও তারা মনে করছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া ও যশোহরগামী এসডি পরিবহন কর্মকর্তা সাদেক বার্তা২৪.কমকে বলেন, গাবতলী টার্মিনাল এখন ঈদের আমেজ নেই। এই টার্মিনালের ৭৫ শতাংশ গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স না থাকার কারণে আতঙ্কে আছে। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে এখনই অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ টিকিটি বিক্রির পর গাড়ি নিয়ে রাস্তায় না নামতে পারলে আরেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। তাই সবাই পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিবেন।
অন্যদিকে, পরিবহন কর্তৃপক্ষগুলোর আরেকটি অংশ মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে ঈদ যাত্রা। আইনি প্রক্রিয়ার ভয়ে অনেকেই গাড়ি নামাবেন না বা অগ্রিম টিকিট বিক্রি করবেন না। এতে যাত্রী ভোগান্তি এবার আরও বেশি হতে পারে।
ঢাকা থেকে পিরোজপুরগামী রাজধানী পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে কি হবে যদি গাড়ি রাস্তায় না নামাতে পারি। কাগজপত্র নেই বেশিরভাগ গাড়ির। যদি কাগজপত্র ঠিক করতে পারি তাহলে টিকিট বিক্রি হবে, না হলে এবারের ঈদ যাত্রা হবে না আমাদের।
এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে বাসের অগ্রিম টিকিট কাটতে আশা যাত্রী সামসুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ১০ টি কাউন্টারের চক্কর লাগিয়েছি কোথাও কোনো অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে না। টিকিটের দাম বৃদ্ধির নতুন পায়তারা করছেন পরিবহনগুলো। শেষ সময়ে এসে তারা বলবে গাড়ি কম চাহিদা বেশি তাই টিকিটের দাম অধিক।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই (রোববার) কুর্মিটোলায় জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়।এর পর থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। এর পরেই সারাদেশে চলছে বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ। আর এই আন্দোলনের প্রভাব এখন গাবতলীসহ রাজধানীর সকল আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে ।