কৃষকের স্বপ্ন জোয়ারে ডুবে, ভাটায় ভাসে!
লক্ষ্মীপুর: সবেমাত্র আমন ধানের আবাদ শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। নষ্ট হচ্ছে বীজতলা। জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে আবাদকৃত জমি। আর ভাটার টানে ভেসে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর, রামগতি ও রায়পুরের উপকূলীয় এলাকায়।
মূলত সময়ের উপর নির্ভর করে আউস, আমন ও বোরো ধান চাষ করা হয়। এখন আমন ধানের মৌসুম। বছরের এ সময় জেলাতে সবচেয়ে বেশি ধানের আবাদ হয়। এ ধান আবাদের লক্ষ্যে জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে রোপা আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়। এখন বীজতলা থেকে চারা রোপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় কৃষকরা প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপন করেছে। কিন্তু মেঘনার জোয়ারের পানি এখন কৃষকের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেঘনার জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের ক্ষেতগুলো। সদরের চররমনী মোহন, ভূঁইয়ারহাট, কমলনগরের চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, চরমার্টিন, লুধুয়া এবং রামগতি ও রায়পুর উপজেলায় প্রতিদিনই মেঘনার জোয়ারে প্লাবিত হয়। এতে আবাদকৃত জমির ফসল ও বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার ভাটার টানে প্রায় ২০ ভাগ চারা ভেসে যাচ্ছে। পুনরায় জমিতে ধানের চারা রোপন করার সামর্থ্য এই অঞ্চলের কৃষকদের নেই। এতে অঙ্কুরেই ভেস্তে যেতে বসেছে আমন ধান নিয়ে কৃষকের স্বপ্ন।
অথচ চলতি মৌসুমের শুরু থেকে পরিমিত বৃষ্টি হয়েছে। ধান আবাদের জন্য জমিতে পর্যাপ্ত পানি ছিল। মেঘনার জোয়ারের পূর্বেই আমন আবাদে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল হোসেন খান। কিন্তু সে স্বপ্নে মেঘনার জোয়ার হানা দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধানে ৫ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বীজতলা তেরি করা হয়। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় হাইব্রিড ১৫ হেক্টর, উফশী ১ হাজার ১৬২ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১৮০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। রায়পুরে হাইব্রিড ৬৫ হেক্টর, উফশী ৬৬০ হেক্টর, স্থানীয় ১৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। রামগঞ্জে উফশী জাতের ২২৫ হেক্টর, রামগতিতে উফশী ১ হাজার ২৫০ হেক্টর, কমলনগরে উফশী ১ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়। কৃষকরা ওই সব বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে ধানের আবাদ করছে। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে আমন আবাদ করতে কৃষকরা ব্যস্ত থাকে। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কাটা হয়।
চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৫৯৭ হেক্টর জমি। হাইব্রিড ৪৬৮ হেক্টর, উফশী ৬৭ হাজার ৫৯৪ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। গত দু-তিন সপ্তাহ ধরে জেলার চরাঞ্চলে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়। অবশিষ্ট জমিতেও আমন আবাদে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছে।
সদরের চররমনী এলাকার কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘মাত্র আমন আবাদ শুরু করেছি। তবে হঠাৎ জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় ক্ষেতগুলো ডুবে আছে। তাই আবাদ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন ধানের চারা রোপন করতে না পারলে সঠিক সময়ে ফসল ঘরে তোলা যাবে না। ভালো ফলন হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।’