প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচাতে প্রাণ দেয়া মাহবুবুরের বাবা-মা কেমন আছেন?

  • এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

কুষ্টিয়া: ১৪ বছর আগে নিজের জীবন দিয়ে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) বাঁচিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার খোকসার মাহবুবুর রশিদ। সন্তান হারানোর বেদনায় কাতর তার বাবা-মায়ের গর্বেরও শেষ নেই। অন্যের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়ার মতো সাহস কজনেরই-বা হয়?

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছিলেন কুষ্টিয়ার খোকসার মাহবুবুর রশিদ। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট দুর্বৃত্তদের ছোড়া গ্রেনেড থেকে নেত্রীকে রক্ষায় যে কজন মানববর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের একজন ছিলেন এই মাহবুবুর।

বিজ্ঞাপন

গ্রেনেড হামলা করেও শেখ হাসিনার মৃত্যু নিশ্চিত করতে না পারায় পরে গুলি করে হামলাকারীরা। সেই গুলি আর শেখ হাসিনার মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মাহবুবুর। নিজের বুকে আঘাত নিয়ে নেত্রীকে বাঁচিয়ে রাখেন তিনি।

প্রতি বছর এই দিনটি আসলে কষ্টের সাগরে ভাসে মাহবুবুরের বাবা-মা। তাদের দুইজনই এখন বার্ধক্যে। ১৪ বছর হয়ে গেল, ছেলে হত্যার বিচার দেখতে পারলেন না। জীবনের বাকি সময় আর পারবেন কিনা এ নিয়ে এখন সংশয় দানা বেঁধেছে মনে।

বিজ্ঞাপন

মাহবুবুরের বাবা হারুন অর রশিদের আজকের দিনটি শুরু হয় ফজরের নামাজের পর মোনাজাত করে ছেলের খুনিদের বিচার আর দুই নাতির মঙ্গল কামনা করে।

সোমবার (২১ আগস্ট) সকালে কুষ্টিয়ার খোকসার জয়ন্তিহাজরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামে নিজ বাড়িতে কথা হয় হারুন অর রশিদের সঙ্গে। ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার বিচার না হওয়ার আক্ষেপের কথাগুলো বেরিয়ে আসছিল তার মুখ দিয়ে।

হারুন জানান, ফুলবাড়ি স্কুলের পাশে তার ছেলের কবর স্থানের সমাধি স্থলটি পাকা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এখন সেখানেই অবসর সময় কাটান তিনি। কিন্তু রাস্তা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে সেখানে নিয়মিত যেতে পারছেন না।

কথা হয় গ্রেনেড হামলার বিচার নিয়েও। বলেন, ‘ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হামলা এটি। কিন্তু বিচার হচ্ছে না।’

মামলাটির দ্রুত বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখেই মরতে চান বলে জানান মাহবুবুরের বাবা।

তবে শত কষ্ট ও হতাশার মধ্যেও নিহত ছেলেকে নিয়ে ভীষণ গর্বিত এই বাবা। শেখ হাসিনাকে ঘাতকদের বুলেট থেকে রক্ষায় তার ছেলের জীবন উৎসর্গ করার ঘটনাটি এখনো গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করেন হারুন অর রশিদ।

মাহবুবুরের মা হাসিনা বেগম তার মেয়ে আবিদাকে নিয়ে যতটুকু দুশ্চিন্তা করেন তার থেকে বেশি ভাবনা তার দুই নাতি ও পুত্রবধূর (মাহবুবুরের স্ত্রী) ভবিষ্যৎ নিয়ে।

এক সময়ের বিড়ি তৈরির কারিগর বাবা হারুন অর রশিদের দ্বিতীয় ছেলে ছিলেন মাহবুবুর। বাড়ির পাশের ফুলবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার লেখা পড়ার হাতে খড়ি। পাশের উপজেলা পাংশার বাহাদুরপুর শহীদ খবির উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন।

চাকরি পাওয়া পর পাঁচ বোনের তিন বোনকে বিয়ে দেন মাহবুবুর। ছোটদের লেখা পড়ার খরচও চালাতেন তিনি। পরে ২০০০ সালের দিকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে ইস্তফা নেয়ার পর শেখ হাসিনার গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন মাহবুবুর। বিশ্বস্ততা অর্জন করায় অল্প সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর দায়িত্ব পান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মাহবুবুরের সমাধিস্থল ও কবর স্থানের উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। নিহতের ভাই বোনদের চাকরি, বৃদ্ধ বাবার নামে আজীবন ভিজিডি কার্ড ও বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হয়েছে।