ঝুঁকির মুখে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধ

  • ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিতে পড়েছে সদ্য নির্মিত শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধ।

আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। এলাকার অনেকে বাঁশ দিয়ে পাইলিং করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। এতে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দী গ্রামের পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু বাড়ি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক কর্মকর্তা জানান, পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে সদ্য নির্মিত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের দুই মুখ ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা পানির তীব্র স্রোতে বাঁধের মুখের ভেতর দিয়ে মাটি ভেঙে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাঁধ নির্মাণের সময় এলাকার কয়েকজন মানুষ জমি দেয়নি। সেখানে বাঁধ পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। সেই সব স্থানও ভাঙতে পারে।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/24/1535093516216.jpg

পাউবো সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের দিকে কুঠিবাড়ি সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। সেই ভাঙন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠিবাড়ির দিকে আসতে শুরু করে। এরপর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুঠিবাড়িসহ কয়া ও শিলাইদহ ইউনিয়নের গ্রাম রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করে। পরে চলতি বছর ১৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ বাস্তবায়ন করে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর থেকে শুরু করে শিলাইদহ খেয়াঘাট পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৫ হাজার ২২০ মিটার। এর মধ্যে কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর, শ্রীকোল, কোমরকান্দী ও শিলাইদহ গ্রাম পড়েছে। সুলতানপুর থেকে শ্রীকোল পর্যন্ত ২ হাজার ৭২০ মিটার ও কোমরকান্দী পূর্বপাড়া থেকে শিলাইদহ খেয়াঘাট পর্যন্ত এক হাজার মিটার বাঁধের কাজ হয়। এতে ব্যয় হয় ১৪৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যে কাজ করতে না পারায় ২২ কোটি টাকা ফেরত যায়। কিন্তু সে সময় বাঁধের নকশায় কোমরকান্দী পশ্চিমপাড়া থেকে পূর্বপাড়া পর্যন্ত ১ হাজার ৫৩০ মিটার এলাকা রাখা ছিল না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/24/1535093538351.jpg

এখন বন্যা দেখা দেয়ায় এ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুঠিবাড়ি রক্ষা প্রকল্পের যে বাঁধ রয়েছে তার একটি অংশের সামনের দিকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে ব্লক বসানোর জন্য যে মাটি তোলা হয়েছে, তার বেশির ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। পানি বাড়লে এ অংশের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কোমরকান্দী পূর্বপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন,‘বাঁধের মাথায় আমার বাড়ি। খুব ভয়াবহ অবস্থা। ভাঙনে অসুবিধা হচ্ছে।’

আরেক বাসিন্দা বলেন,‘ঢেউয়ে নদী পাড়ের মাটি সরে যাচ্ছে। সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। বাঁধ নির্মাণ বাদ রাখায় এ অংশ এবার ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। সরকারের কাছে দাবি যেন দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করে দেয়।’

স্থানীয় শিলাইদহ ইউপি চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন তারেক বলেন,‘ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়বোধ থেকে প্রকল্প নির্মাণ কাজ দেখতে মাঝে মধ্যে গিয়েছি। সেখানে কিছু কিছু অনিয়মও দেখেছি। বিষয়গুলি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নজরে নেয়ার অনুরোধ করেছি।’

শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কর্মরত কাস্টোডিয়ান মুখলেচুর রহমান জানান, বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক হেরিটেজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সাহিত্য চর্চার তীর্থ শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এখানে যে কাজ হয়েছে তাতে কুঠিবাড়ি রক্ষার কাজ হয় নাই। নির্মাণ কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত না করেই প্রকল্পটি ক্লোজ করে দেয়া হয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/24/1535093558750.jpg

পাউবোর এক কর্মকর্তা মনে করেন, যে ২২ কোটি টাকা ফেরত গেছে তার সঙ্গে আরও কিছু টাকা দিয়ে কোমরকান্দী এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা গেলে এ বিপদ এড়ানো সম্ভব হতো।

ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের সমন্বয়ক মোফাজ্জেল হক জানান, যে অংশে বাঁধ নেই, সেখানে ভাঙনের ফলে বাঁধের সমস্যা হতে পারে। এ জন্য ওই অংশটুকুতেও বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশল আরিফুজ্জামান খান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়নে ‘কুষ্টিয়া জেলায় কুঠিবাড়ী সংলগ্ন এবং পাশের এলাকায় পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্পের সুলতানপুর অংশে ২ হাজার ৭২০ মিটার এবং শিলাইদহ অংশে ১ হাজার মিটার সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু দুই অংশের মাঝখানে ১ হাজার ৫৩০ মিটার কাজ হয়নি। ফলে নতুন করে সৃষ্ট নদী ভাঙনে নির্মিত বাঁধ এবং শিলাইদহ কুঠিবাড়িকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। সে কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, আরও দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা গেলে আপাতত গ্রামসহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধ পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত থাকত।