ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি : দুই বাঙালি শহীদের গল্প



যাকওয়ান সাঈদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি

ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯০৮ সালে মাত্র আঠার বছর বয়সে যে কিশোর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে আরোহণ করেছিল, তাঁর নাম ক্ষুদিরাম বসু। ক্ষুদিরাম বসুর সহযোগী ছিল প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরামের ফাঁসির মাস তিনেক আগেই যে পুলিশের হাতে ধরা দেবে না—তাই রিভলবারের গুলি নিজের দিকে তাক করে করেছিল আত্মহত্যা। প্রফুল্ল চাকির আত্মহত্যার দিনটি ছিল ২ মে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ, আর ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল একই বছরের ১১ আগস্ট। এ দুই বিপ্লবীরই মৃত্যু হয়ে হয়েছিল একটি বিশেষ ঘটনা বা অপারেশনকে কেন্দ্র করে।

এ লেখাটি ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকি আর তাঁদের সেই অপারেশনটিকে কেন্দ্র করে। কয়েকটি উপ-শিরোনামের মধ্যদিয়ে আমরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সেইসব দিনের গৌরবান্বিত ইতিহাসে কিছুক্ষণের জন্য বিচরণ করে আসতে পারি।

ক্ষুদিরামের জন্ম এবং বাল্যকাল

ক্ষুদিরামের জন্ম ১৮৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক বিকেলে, মেদেনীপুরের হবিবপুরে। বাবা ত্রৈলক্ষণাথ বসু জমিদারদের কাছারিতে কাজ করত। মায়ের নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী।

পরপর দুই পুত্রসন্তানকে অল্প বয়সে হারিয়ে ত্রৈলক্ষণাথ বসু ও লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর সংসার-জীবনে একটি গভীর কষ্টের জায়গা তৈরি হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই, ক্ষুদিরামের যখন জন্ম হলো তখন তাকে নিয়ে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। যদি না এই সন্তানটিও আবার মারা যায়! এমন অবস্থায়, তৎকালীন একটি সংস্কার, যা শিশুর প্রাণরক্ষার ক্ষেত্রে প্রচলিত ছিল, সেটিই প্রয়োগ করতে হলো ক্ষুদিরামের ওপর। উপাচার অনুযায়ী অল্প কিছু খুদ বা কড়ির বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল ক্ষুদিরামকে। অবশ্য কিনে নিয়েছিল তাঁরই সদ্যবিবাহিত বড়বোন। যেহেতু খুদের বিনিময়ে প্রাণরক্ষা হয়েছিল তাই তাঁর নামকরণ করা হয়েছিল ক্ষুদিরাম বসু।

দুঃখজনক বিষয় এই যে, ক্ষুদিরামের আর মা-বাবার কাছে ফেরা হয়নি, বা তাদের সান্নিধ্য পাওয়াও সম্ভব হয়নি। ক্ষুদিরামের সাত বছর বয়সে, ছয় মাসের অল্প ব্যবধানে তাঁর বাবা-মা মারা গিয়েছিলেন। বড় বোনের সংসারেই বেড়ে উঠেছিলেন ক্ষুদিরাম।

শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল হাটগাছিয়ার গিরিশ মুখার্জী পাঠশালায়। বোনের স্বামী চাকরিসূত্রে হাটগাছিয়ায় থাকতেন। পরবর্তী সময়ে চাকরি বদলি হলে তারা তমলুকে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে ক্ষুদিরাম বসুকে হ্যামিল্টন স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। তাঁর বয়স যখন বারো, তখন তমলুকে দেখা দিয়েছিল কলেরা। ক্ষুদিরাম সেই কলেরা-রোধে নেমে পড়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে। স্বভাবচরিত্রে ছিল ডানপিটে ধরনের, আর এই ডানপিটে স্বভাব বদলাতে না-বদলাতেই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।

ক্ষুদিরামের বিপ্লবীজীবনের সূত্রপাত

১৯০৪ সালে বয়স যখন চৌদ্দ, ক্ষুদিরামের চিন্তা-চেতনায় বিপুল পরিবর্তন আসে। এসময় পুনরায় বোনের স্বামীর বদলির কারণে তাঁদের মেদেনীপুর চলে আসতে হয়। ক্ষুদিরামকে ভর্তি করে দেওয়া হয় মেদেনীপুর কলিজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীতে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঋষি রাজনারায়ণ বসু—তিনিই ক্ষুদিরামসহ আরো অনেক স্কুলছাত্রের মনে স্বাধীনতার চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।

একই স্কুলের ইতিহাস শিক্ষক—জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু, ক্ষুদিরামকে দেখেই টের পান এই ছেলের মধ্যে স্বদেশচেতনা অত্যন্ত গভীরভাবে প্রোথিত আছে। এবার শুধু ছেলেটিকে জাগিয়ে তোলাই কাজ। কাজটি জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু নিজ দায়িত্বে করলেন। ক্ষুদিরামকে তিনি নিজের একজন কাছের ছাত্র করে তুললেন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল মেদেনীপুর। জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসুর সান্নিধ্যে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম একটি বিপ্লবী দলে যোগদান করে। এরই মধ্যদিয়ে কিছু রণকৌশলও রপ্ত হয়ে যায় তাঁর। এখানেই লাঠি খেলা, তলোয়ার চালানো, বন্দুক অথবা রিভলবারের ব্যবহার শিখে নেয় ক্ষুদিরাম। যুদ্ধাহত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারেও এখান থেকেই ধারণা নেওয়া। বন্যাকবলিত মানুষের আশ্রয়স্থল তৈরিতে এসময় দলের সঙ্গে থেকে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করে ক্ষুদিরাম।

প্রথম জেলে যাওয়া

মেদেনীপুরের বিপ্লবীদের দলপতি ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁর সঙ্গে ক্ষুদিরাম বসুর প্রথম জেলে যাবার ঘটনায় একটি প্রাসঙ্গিকতা আছে। ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস, ক্ষুদিরামের বয়স তখন ১৬ বছর।

মেদেনীপুরের পুরনো জেলে একটি কৃষি ও শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যেমন, এসেছিল অনেক সাধারণ মানুষও। হঠাৎ সেই প্রদর্শনীতে দেখা গেল এক কিশোর লিফলেট বিলি করছে। কর্তাব্যক্তিদের নজরে এলে দেখা গেল লিফলেটটি মূলত ‘সোনার বাংলা’ নামক একটি পুস্তিকা যা ব্রিটিশবিরোধী প্রচারপত্রগুলোরই একটি। তাৎক্ষণিক ক্ষুদিরামকে গ্রেফতার করে তার নামে রাজদ্রোহের মামলা দিয়ে দেওয়া হয়। কাঠগড়ায় উঠিয়ে তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কে তোমাকে এই পুস্তিকা বিলি করবার দায়িত্ব দিয়েছে?’ উত্তরে ক্ষুদিরাম বসু যেন কিছুই জানে না, এরকম ভাব করে। বলে, ‘তার নাম বলতে পারি না।’ তারপর তাকে আদালতের পুরো কক্ষ ইঙ্গিত করে বলা হলো, ‘দেখো তো এই কক্ষে সেই ব্যক্তিটি আছে কিনা?’ সত্যেন্দ্রনাথ বসু কক্ষেই ছিলেন, মানে তিনিই তাকে পুস্তিকা বিলির কাজটা দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষুদিরাম বসু কম বয়সসুলভ অভিব্যক্তি দিয়েই সত্যেন্দ্রনাথকে সারা আদালত ঘরের কোথাও খুঁজে পেল না। বলল, ‘নাহ, এই ঘরে তো সেই লোককে দেখতে পাচ্ছি না।’ আদালত ভাবল, ছেলেটি হয়তো আসলেও এতটা ভুলমনা, বা বিশেষ ‘ঘাওড়া’ প্রকৃতির, সুতরাং তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো।

তবে হ্যাঁ, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে ক্ষুদিরাম কিছুটা হলেও সন্দেহজনক চরিত্র হয়ে উঠল। চিন্তিত হয়ে পড়লেন ক্ষুদিরামের বোনের স্বামী, কেননা পুলিশ যে কোনো সময়ই ঘরে হানা দিতে পারে। যদিও ঘটনার পরপর ক্ষুদিরামকে অন্য এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু তবুও ক্ষুদিরামকে কেন্দ্র করে নিজের চাকরিটি হঠাৎ হাতছাড়া হবার আশঙ্কা কাটল না। এমন পরিস্থিতিতে যদিও বোনের স্বামী ক্ষুদিরামকে সরাসরি কিছু বললেন না, কিন্তু কিশোর ক্ষুদিরাম নিজেই যা বোঝার বুঝে নিল আর একদিন না বলে-কয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।

এরপর ক্ষুদিরাম বসু যার কাছে আশ্রয় পেল ইতিহাসে তার পরিচয় হিসেবে উল্লেখ আছে, তিনি আবদুল ওয়াহেদ সাহেবের স্ত্রী। এ মহিলা ছোটভাইয়ের মতো স্নেহ ভালোবাসায় ক্ষুদিরামকে গ্রহণ করেছিলেন।

যাই হোক, একটি আঠার বছরের জীবনে আর কতই বা ঘটনা থাকবে! তাই ছোট ছোট এসব বাঁকবদল বাদে ফাঁসির ঘটনাই মূলত ক্ষুদিরাম বসুর জীবনকে অধিকার করে রেখেছে। কেন ও কী কারণে ক্ষুদিরামের ফাঁসি হলো, বরং সেই আলাপেই প্রবেশ করা যাক।

প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরামের সহযোদ্ধা

এই পর্বে ক্ষুদিরামের সহযোদ্ধা প্রফুল্ল চাকিকেও পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। আমরা আগেও উল্লেখ করেছিলাম প্রফুল্ল চাকির কথা, পুলিশের কাছে ধরা না পড়ে যে আত্মহত্যাকেই বেছে নিয়েছিল।

অপারেশনকে কেন্দ্র করেই প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে ক্ষুদিরামের প্রথম সাক্ষাত হয়। মানিকতলা আখড়ার এই সাক্ষাতের দিনই অপারেশনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ক্ষুদিরামকে। আর ক্ষুদিরামের সহযোগী হিসেবে উত্তরবঙ্গ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল প্রফুল্ল চাকিকে। অপারেশনটির স্বার্থে দুজনকেই দেওয়া হয়েছিল ছদ্মনাম—ক্ষুদিরামের নাম হয়েছিল দুর্গাদাস সেন, আর প্রফুল্ল চাকির নাম দীনেশচন্দ্র রায়।

তাহলে কী ছিল সেই অপারেশন?

তাহলে কী ছিল সেই অপারেশন? আঠার বছর বয়সী ক্ষুদিরামকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, এবার সেই প্রসঙ্গে আসা যাক।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তুমুল আকার ধারণ করেছিল, ঠিক সেই সময় ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ‘বন্দে মাতরম’ বলা নিষিদ্ধ করে দেয়। আর যখন ‘বন্দে মাতরম’ নিষিদ্ধ হলো, সেসময় কলকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ছিল মি. কিংসফোর্ড। এমনকি অন্য অনেক ব্রিটিশদের চেয়েও কিংসফোর্ড ছিল একটু বেশি মাত্রারই বেপরোয়া। ‘বন্দে মাতরম’ আইনকে কেন্দ্র করে তখন তার জেলখানায় তিল ধারণেরও ঠাঁই ছিল না।

ইংরেজ-শাসনের নির্যাতন তো ছিলই, সঙ্গে কিংসফোর্ডের বাড়তি নিষ্ঠুরতা যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছিল এক অতিশয় নির্দয় পরিস্থিতির। ফলশ্রুতিতে মেদেনীপুরের বিপ্লবীদের বৈঠকে একদিন সিদ্ধান্ত হলো, মি. কিংসফোর্ডকে শাস্তি দিতে হবে। আর সেই উপযুক্ত শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু এই মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নে এমন কাউকেই খুঁজে পেতে হবে যে একই সঙ্গে বুদ্ধিদ্বীপ্ত এবং তেজি। সম্ভবত ১৯০৮ সালের মেদেনীপুরে অবস্থানকারী সব বিপ্লবী নেতাদেরই ক্ষুদিরামকে কাজটির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে হয়েছিল।

ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীও টের পেয়েছিল, যে কোনো সময় কিংসফোর্ডের ওপর হামলা হতে পারে। তাই এরইমধ্যে কিংসফোর্ডকে বদলি করে মুজফফরপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল চাকি প্রথমে কলকাতা গিয়ে, তারপর সেখান থেকে মুজফফরপুরে রওনা হবে—এমনই প্ল্যান আগে থেকে ঠিক করা ছিল। সে অনুযায়ী তারা দুজন প্রথমে কলকাতায় এসে বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর বাসায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে গুলিভর্তি রিভলভার আর টিনের বাক্সে একটি বোমা নিয়ে মুজফফরপুরে চলে গেল। পরিকল্পনামতোই তারা প্রথমে একটি ধর্মশালায় আশ্রয় নেয়।

মি. কিংসফোর্ড ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল, যে কোনো সময় তার ওপর হামলা হতে পারে। সবসময় তাই সাথে বন্দুকধারী নিয়ে চলাফেরা করত। কোর্টে কাজের সময় বাদে প্রায় পুরাটা সময় থাকত বাসায়। মাঝেমধ্যে সন্ধ্যার পরে ক্লাবে গিয়ে তাশ খেলে আসা। বলা চলে বন্দুকধারী-বেষ্টিত দিনাতিপাত করছিল কিংসফোর্ড।

দুই কিশোরের জন্য ব্যাপারটা কঠিনই হয়ে পড়ছিল। একটানা ১৯/২০ দিন সুযোগ-সন্ধানের পরও কোনোভাবেই কিছু ঘটাতে না পেরে ভেতরে ভেতরে কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে তারা। এই অস্থিরতা থেকেই ২৯ তারিখ তারা সিদ্ধান্ত নেয়, পরের দিন অপারেশন বাস্তবায়ন করবেই, যা হবার হবে। ১৯০৮ সালের এপ্রিল মাস।

পরদিন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকেই কিংসফোর্ডের বাড়ির আশেপাশে গিয়ে তারা দুজন অবস্থান নেয়। প্রথমে একজন প্রহরী ব্যাপারটি লক্ষ করে তাদের চলে যেতে বলে। তারা সে নির্দেশ অগ্রাহ্য করে আরেকটু গোপনীয়তা যোগ করে একটি গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। কিংসফোর্ড কখন বাসা থেকে বের হয়, সেটাই তাদের দেখার বিষয়। কিংসফোর্ডকে একবার হত্যা করতে পারা গেলে তাদের ভোগ্যে যা হয় হবে।

তবে সবশেষ ক্ষুদিরাম তার হাতের মুঠোয় থাকা বোমাটি ছুড়ে মারলেও সেই বোমায় কিংসফোর্ড নয়, মারা গিয়েছিল দুজন নির্দোষ ব্রিটিশ নাগরিক। এ দুজন ছিল ব্যারিস্টার কেনেডি নামক এক ব্যক্তির স্ত্রী এবং কন্যা।

রাত সাড়ে আটটার দিকে ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের বাসা থেকে একটি গাড়ি বেরিয়ে আসতে দেখেছিল। মূলত, এই দেখার বিষয়টিতেই তাদের আরো পরিপক্বতার, মনোনিবেশের ও অপেক্ষার প্রয়োজন ছিল। তারা গাড়ির মধ্যে কে আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই গাড়ি উদ্দেশ্য করে বোমা ছুড়ে মারে।

যদিও কে মারা গেল, কিংবা কিংসফোর্ড যে মারা যায়নি এসব ব্যাপারে জানবার কোনো সুযোগ তাদের রইল না। তারা বোম্বিং করবার সাথে সাথেই সেখান থেকে প্রস্থান করে।

ঘটনার পরে কেউ কেউ বলল এখানে তারা দুজন কিশোরকে দেখেছে। কে কীরকম দেখতে ছিল, সেসবও বলাবলি হলো। ফলত সব জায়গায় ঘোষণা করে দেওয়া হলো, এরকম কাউকে দেখলেই তাকে যেন পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ঘোষণার ফলস্বরূপ সর্বত্র নিরাপত্তা জোরদার করে ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্লকে ধরতে সচেষ্ট হলো পুলিশ এবং পরদিন সকালেই ক্ষুদিরাম ধরা পড়ে গেল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567077539571.jpg
◤ ক্ষুদিরাম, ধরা পড়ার পরে ◢


প্রফুল্ল চাকির আত্মহত্যা

প্রফুল্ল জামাকাপড় পাল্টে সমস্তিপুর এলাকার দিকে যাচ্ছিল। এসময় একজন তাকে ডেকে জানতে চাইল, ‘কোথায় যাও?’ প্রফুল্ল জানালে রেলস্টেশনে যাচ্ছে, লোকটি বলল, এখন তো কোনো ট্রেন নেই। লোকটি প্রফুল্লকে তার বাসায় বিশ্রাম নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায় আর যখন ট্রেন আসবে তখনই স্টেশনের দিকে যেতে বলে। প্রফুল্লও এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।

যে ব্যক্তি প্রফুল্লকে এ সহযোগিতা করেছিল, তার পরিচয় জানা যায়নি। হয়তো তিনি প্রফুল্লের আসন্ন বিপদ বুঝতে পেরেই দয়াপরবশ হয়েছিলেন। এমনকি হয়ে থাকবে, তিনি বুঝতেও পেরেছিলেন এই ছেলে সেই দুজনেরই একজন, যারা গতকাল কেনেডির স্ত্রী আর কন্যাকে হত্যা করেছে। যখন এই ব্যক্তির আশ্রয়স্থল রেখে প্রফুল্লকে ট্রেনে উঠে পড়তে হলো, তখন থেকেই ঘটতে শুরু করে বিপত্তি।

প্রফুল্ল চাকি যেই কামরায় ওঠে, একই কামরায় সাদা পোশাকে একজন পুলিশসদস্য উঠেছিল। নাম নন্দলাল ব্যানার্জী। সাদা পোশাকে তাকে দেখেও বোঝার উপায় ছিল না সে একজন পুলিশ। কিন্তু প্রফুল্লকে দেখেই তার সন্দেহ হলে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করার মধ্যদিয়ে তাঁকে নিজের নজরদারিতে আটকে রাখে ওই পুলিশসদস্য।

ট্রেন যখন স্টেশনে পৌঁছায় তখন ভোর। আশেপাশে কোনো কুলি ছিল না। প্রফুল্লই নন্দলালের ব্যাগপত্র মাথায় নিয়ে কুলির কাজটি করছিল। মাথা থেকে ব্যাগ নামিয়ে রাখতেই প্রফুল্ল টের পেল নন্দলাল ব্যানার্জী সেখানে নেই। এদিক ওদিক তাকাতে একটু পরে দেখা গেল, তিনি পাঁচজন পুলিশসদস্যকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। আর প্রফুল্ল চাকিকে জানানো হচ্ছে—‘আপনাকে আমরা গ্রেফতার করলাম।’

পকেটে থাকা রিভলভারটি বের করে সঙ্গে সঙ্গেই প্রফুল্ল নন্দলালকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল। উত্তেজনায় গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হয়। পরক্ষণেই, যখন ধরা পড়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই, রিভলবার গলায় ঠেকিয়ে নিজেকেই গুলি করে দিলেন প্রফুল্ল চাকি।

ক্ষুদিরামকে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর ফাঁসির নির্দেশ

ফাঁসির মঞ্চ এবং তার আগে আদালতের জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও ক্ষুদিরাম বসু নিতান্ত স্বাভাবিক আচরণ করছিল। এ দেখে তখন কারোরই আশ্চর্যের কোনো সীমা ছিল না। যেহেতু ক্ষুদিরাম জানত না তাঁর সহযোগী প্রফুল্ল আত্মহত্যা করেছে, কাজেই প্রফুল্লকে বাঁচাবার জন্য শেষপর্যন্ত পুরো অপারেশনটির দায়ভারও নিজের কাঁধেই রাখছিল। এর বাইরে কোনো সংগঠন বা ব্যক্তির নাম বলা দূরে থাক।

মামলাটি শুরু হয়েছিল মে মাসের ২১ তারিখ। ক্ষুদিরামকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল জুন মাসের ১৩ তারিখ। ফাঁসির রায় শুনেও ক্ষুদিরাম যথাস্বাভাবিক আচরণেই বহাল থেকেছিল। আদালত কর্তৃক তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তুমি কি বুঝতে পেরেছো তোমাকে কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে?’ ক্ষুদিরাম বসু বলল ‘হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি, এবং আমি আবার আসব।’

১৯০৮ সালের আগস্ট মাসের ১১ তারিখ ভোর ছয়টায় ক্ষুদিরামের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল।

   

কবে পাবো শীতের দেখা?



আহসান জোবায়ের, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে

বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘গুড়ি গুড়ি বায়, হিমের কাঁথা গায়, দাঁড়িয়ে কুয়াশায়, পাতা ঝরা শীতের ছোঁয়া, কাঁপিয়ে দিয়ে যায়’- আবহমান বাংলার প্রকৃতিতে শীতকে ব্যাখ্যা করতে এর চেয়ে সুন্দর অভিব্যক্তি আর কী হতে পারে! সবুজ ঘাসের ডগায় জমা হয় শিশির বিন্দু। সকালবেলা সূর্যের সোনালি আলো যখন জমে থাকা শিশির বিন্দুর উপর এসে পড়ে, তখন তাতে সোনালি আবহ তৈরি হয়। মৌমাছিরা ব্যস্ত হয়ে যায় ফুলের মধু সংগ্রহ করতে। শীতের কুয়াশা ভেজা সকালে মায়ের হাতের পিঠাপুলি, বন্ধুদের সাথে খোলা মাঠে দাঁড়িয়াবান্ধা কিংবা গোল্লাছুট, উঠোন ভর্তি ধান মাড়ানো; এ যেন তীব্র আকাঙ্ক্ষা গ্রামীণ শৈশবের স্মৃতিচারণ। 

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে গাছি 

বাঙালির জীবনে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শীতকালে। কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে চারপাশ। বাঙালি মেয়েরা আয়োজন করে চড়ুইভাতি আর শহরের মানুষেরা মাতে বারবিকিউতে। গ্রামে-শহরে চলে ব্যাডমিন্টন খেলার আসর। কৃষকের জমিতে ফলে নানান শীতকালীন সবজি। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আগুন পোহানো যেন এক শীত-সংস্কৃতি। গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস পেড়ে গুড় বানায়। 

বাংলার প্রকৃতিতে পৌষ-মাঘ মাসে শীত ঋতু হলেও অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই রাতে ও ভোরে কুয়াশার সাথে শীত অনুভূত হয়। কিন্তু এ বছর অগ্রহায়ণ মাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেলেও দেখা নেই শীতের। রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রাত ও ভোরের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও পুরোদমে শীত অনুভূত হচ্ছে না। সকালে সূর্য ওঠার পরপরই বাড়ছে তাপমাত্রা। আগে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শীত পড়তে শুরু করত। অথচ ডিসেম্বর এসে গেলেও মিলছে না শীতের দেখা। কোথায় সেই সময়, কোথায় সে অনুভূতি? তবে কি হারিয়ে গেলো শীতকাল!

শীতে কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে চারপাশ 

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর শীতকাল শুরু হবে কিছুটা দেরিতে। পাশাপাশি শীতের প্রকোপও থাকবে কম। কবে থেকে শীত নামবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে বলেননি।

দ্য ওয়েদার চ্যানেলের তাপমাত্রা সূচক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম থেকেই ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই তাপমাত্রা চলমান থাকবে। তবে সমুদ্র সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ৬ ও ৭ ডিসেম্বর হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মোঃ বজলুর রশিদ বার্তা২৪.কম'কে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই বৃষ্টির পরই শীত নামবে। মধ্যদিন পর্যন্ত শীতের দেখা মিলবে। রাত ও ভোরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার চেয়ে ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিগার সুলতানা বার্তা২৪.কম'কে বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে একদিকে যেমন বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের (বন্যা, ঘন ঘন নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস) তীব্রতা, অন্যদিকে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, স্বল্প বৃষ্টিপাত, অনাবৃষ্টি, অসময়ে ভারী বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা এবং সর্বোপরি মৌসুমি বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ঋতুচক্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যথাসময়ে শীত না আসা, শরৎ-এ বর্ষার রূপ, বর্ষায় কম বৃষ্টিপাত ইত্যাদির ফলে ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে দিন দিন ঋতু হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৪ বছরের তুলনায় শুধু নভেম্বর মাসেই এই তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

;

শীতের শুরুতে তিস্তার চরে দাগি রাজহাঁস



বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শীতের শুরুতেই ভিড় জমায় রকমারি অতিথি পাখি। তারমধ্যে দাগি রাজহাঁস একটি। মনের সুখে সহজেই হিমালয় পারি দিয়ে অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যায় রংপুরের তিস্তা চরে। এই সুশ্রীর চেহারার রাজহাঁস পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। শীতকালে এরা মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিথি হয়ে আসে। শীতের শেষে আবার সেখানে চলে যায়। এরা খুব সহজেই হিমালয়ের মত উঁচু পর্বতমালা পাড়ি দিতে পারে। সেই ধারাবাহিকতায় শীতের শুরুতে এই পাখিটি রংপুরের তিস্তার চরে দেখা মেলে।

জানা গেছে, শীতের সময় এই পাখিগুলো মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিথি হয়ে আসে। বসন্ত কালে আবার নিজ গন্তব্যে চলে যায়। সেখানকার পার্বত্য অঞ্চলে ও জলাশয়ে বিচরণ ও প্রজনন করে। এ জন্য তাদের সাত হাজার মিটার উঁচু হিমালয় অতিক্রম করতে হয়। আট ঘণ্টায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত হিমালয় পার হতে পারে তারা অনায়াসে। প্রায় ২০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এদের আবাস হলেও বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। 

আট ঘণ্টায় পর্বত হিমালয় পার হতে পারে এই পাখি 

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। দাগি রাজহাঁসের অন্য কোনো উপপ্রজাতি নেই। অনেক উঁচু দিয়ে এরা উড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে দাগি রাজহাঁস পৃথিবীর সর্বোচ্চ উড্ডয়নকারী পাখিদের মধ্যে একটি।

দাগি রাজহাঁস বড় আকারের জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৭৩ সেন্টিমিটার ডানা ৪৫ সেন্টি মিটার, ঠোঁট ৫ দশমিক ৫ সেন্টি মিটার, লেজ ১৪ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার, পা ৭ দশমিক ১ সেন্টি মিটার এবং ওজন দেড় কেজি থেকে সাড়ে ৩ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্ক পাখিগুলো দেখতে ধূসর। সাদা মাথা থেকে সাদা একটি লাইন ধূসর গলার নীচ পর্যন্ত চলে গেছে। মাথায় দুটি স্পষ্ট কালো ডোরা থাকে। ওড়ার সময় এদের সাদা মাথা, ফিকে দেহও ডানার কালো আগা স্পষ্ট চোখে পড়ে। এদের চোখ বাদামি। ঠোঁট হলুদ এবং ঠোঁটের আগা ও নাক কালো। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ হাঁসের চেহারা প্রায় একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় ডোরা নেই। কপাল, গাল ও গলা ভারী। মাথায় ধূসর-বাদামি। পিঠ ও পেটের রং একই রকম। কাক, দাঁড়কাক, শিয়াল, গাঙচিল, ঈগল এদের প্রধান শত্রু।

পাখিটির ছবি তোলার কারিগর বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন এই পাখিটির ছবি চারদিন আগে রংপুরের তিস্তা নদী থেকে তুলেছি। দুর্লভ এই প্রজাতির পাখিটি সহজে বাংলাদেশে দেখা যায় না। এই পাখি হিমালয় পর্বতের মতো উচ্চতা সহজেই পাড়ি দিতে পারে। তিনি বলেন, গবেষকদের মতে এই পাখির রক্তের লোহিতকণিকা কিছুটা ভিন্ন ধরনের। অক্সিজেন শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। ফলে অনেক উঁচুতে এরা সহজেই উড়তে পারে।

;

২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার

২য় বিশ্ব যুদ্ধের ৫০০ পাউন্ডের বোমা উদ্ধার

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাই জানে। সে সময়কার ক্ষয়ক্ষতি পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করেছিল। তার রেশ কাটেনি যুদ্ধ পরবর্তী কয়েক বছরেও। জাপান তো তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ। এখনো প্রায়শই তৎকালীন বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিস্ফোরক জিনিসপত্র। আবারও ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে পুতে রাখা বোমা উদ্ধার হলো। এবার গ্রিক সৈনিকরা এক উন্নয়নের খননকালে একটি বোমা খুঁজে পায়। তারা দ্রুত বোমাটি ধ্বংসের কাজ শুরু করে সফলও হয়েছে।

এই ঘটনা গত ৩০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবারের। গ্রীসের দক্ষিণে সমুদ্রতীরবর্তী গ্লাইফাদা এলাকার কাছে গ্রীক সেনা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। এথেন্সের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় একটি বিলাসবহুল প্রকল্পে কাজ করেন্ তারা। নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সময় তারা আবিষ্কার করে এই বোমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই অবিস্ফোরিত বোমা অবশেষে তারা ডিস্পোজ করতে সক্ষম হয়। ৫০০ পাউন্ডের বোমাটি কোনো ক্ষতি ছাড়াই ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।

এজন্য দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এলাকাবাসীর নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত সতর্কতাও অবলম্বন করা হয়। আশেপাশের বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক দ্রুত খালি করিয়ে নেওয়া হয়।

নগর উন্নয়ন প্রকল্পে একটি পার্ক, শপিং মল, হোটেল, একটি ক্যাসিনো এবং রাজধানীর দক্ষিণে একাধিক অবসর সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কাজটি গত বছর শুরু হয়েছিল এবং২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা।

"সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে, এবং আমরা জড়িত সমস্ত সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই: বিশেষায়িত সেনা ইউনিট, ফায়ার বিভাগ এবং ট্রাফিক পুলিশ," গ্লাইফাডা মেয়র জিওরগোস পাপানিকোলাউ সাইটের কাছাকাছি সাংবাদিকদের বলেছেন।

"খননকার্যের অগ্রগতির সাথে সাথে আরও অবিস্ফোরিত অস্ত্র আবিষ্কৃত হতে পারে।"

উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০০১ সালে বন্ধ হওয়ার আগে এবং একটি নতুন স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে এথেন্সের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জায়গাটি ব্যবহার করবে। সাইটটি ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকের সময় বেশ কয়েকটি ক্রীড়া স্থানের আয়োজন করেছিল এবং ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সংকটের সময় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে একটি শিবির স্থাপন করেছিল।

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি সমর্থন করার জন্য কয়েক দশক ধরে এয়ারফিল্ড ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং গ্রিসের নাৎসি-নেতৃত্বাধীন দখলের সময়, মিত্রদের দ্বারা বিমানঘাঁটি বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল।

;

মানুষের আশেপাশে থাকতে পছন্দ করে যে পাখি



বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
মাটিতে খাবারের সন্ধানে ‘পাকরা-শালিক’। ছবি: বিভোর

মাটিতে খাবারের সন্ধানে ‘পাকরা-শালিক’। ছবি: বিভোর

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের প্রকৃতিতে নানান প্রজাতির পাখির সমারোহ। নানা রকমের চরিত্র তাদের। কোনটা বনের পাখি। কোনোটা শহরের পাখি। কোনোটা আবার বিল-হাওরের পাখি। স্বভাব-চরিত্র ভেদেই তাদের জীবন সম্পূর্ণ হয় পরিপূর্ণতার দিকে।

আজ যে পাখির কথা বলছি- সে মানুষের আশেপাশে থাকতেই খুব বেশি পছন্দ করে। মানুষকে ভয় পায় না। প্রায় প্রতিদিনই চা বাগানের নির্জন পথে তার সাথে দেখা হয়ে যায়! হয় চোখাচোখিও! ও থাকে ওর মতো! চা গাছেদের নিচে খাদ্য অনুসন্ধানে ব্যয় করে বেড়ায় দিনের অনেকটা সময়ে।

এ পাখিটির নাম ‘পাকরা-শালিক’। ইংরেজি নাম Asian Pied Starling বৈজ্ঞানিক নাম Sturnus contra. তবে কেউ কেউ ‘গো শালিক’ বা ‘গোবরে শালিক’ বলে পাখিটিকে কিছুটা হলেও অসম্মান করেন। বহুকাল ধরে ভাবি, ভাবতেই থাকি- সুন্দর এই পাখিটির ‘এমন নাম’ পাখিটির আপামর সৌন্দর্যকে অনেকটাই হনন করেছে। যিনি এই সুন্দর পাখির সাথে ‘এমন নাম’ জুড়ে দিয়েছেন তিনি এর প্রতি গভীর অবিচার করেছেন। এই অবিচারই আমাকে ব্যথিত করে। নিঃশব্দ-নীরবে!

পাকরা-শালিক পাখিটির দৈর্ঘ্য ২৩ সেন্টিমিটার। পাখিটির দেহের রং সাদা-কালো। গাল, পেট ও লেজতল সাদা রঙের। দেহের অবশিষ্ট অংশ কালচে। চোখ সাদা, তবে চোখের পাশে রয়েছে কমলা রঙের চামড়ার পট্টি। এ পট্টিতেই ফোটে আছে তার মুখশ্রীর আসল সৌন্দর্য।

গৃহপালিত ষাঁড় বা গাভীর গোবরে থাকে ছোট ছোট পোকা। সেগুলোই মূলত পাকরা-শালিকের অন্যতম প্রধান খাবার। চা বাগানের সেকশনের ভেতরে অসংখ্য গরু চষে বেড়ায়। সেখানেই পতিত হয় তাদের মল। সূর্যোলোকের আলোয় সেই মল কিছু শুকিয়ে গেলে তাতেই বাসা বাঁধে এক ধরণের পোকা। পাখিটি সেই অর্ধশুকনো গোবর পা দিয়ে টেনে টেনে পোকাগুলোকে বের করে খায়। সেইটাই ওর খাদ্য অনুসন্ধানের চারিত্রিক প্রধান প্রক্রিয়া।

সেই গোবরে পোকাগুলোই খাবার হয়ে শালিক প্রজাতির এই সুন্দর পাখিটাকে বহুকাল ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা ক্রমশই দেখে চলেছি পাখিটির প্রাকৃতিক গতিময় সৌন্দর্য।

;