ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আব্দুল মঈন খানের

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ড. আব্দুল মঈন খান, ছবি: সৈয়দ মেহেদী

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ড. আব্দুল মঈন খান, ছবি: সৈয়দ মেহেদী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ে না আসার পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস প্রণয়ন, পাঠদান, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষকদের যোগ্যতা ও গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা দায়ী।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৯ মে) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মঈন খান বলেন, সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন পরিচালিত র‌্যাংকিং ব্যবস্থা এশিয়া ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত আমাদের সবার গর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারেনি। নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে থাকলেও ৪১৭ তালিকায় কেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই সেটা আজ জাতির কাছে বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, এই র‌্যাংকিংয়ের জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান, গবেষণা, জ্ঞান আদান-প্রদান এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এই চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠে এসেছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিংগাপুর এবং হংকং ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির নাম।

সিলেবাস নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সারাবিশ্বে যেসব বই পড়ানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তা পড়ানো হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকে ছাপা নামীদামি প্রকাশকদের পাঠ‍্য বইয়ের পরিবর্তে অখ‍্যাত ভারতীয় বা অনুন্নত প্রকাশকদের পাঠ‍্যবই বেছে নেওয়া হয় পাঠদানের জন্য। এসব দিয়ে তো বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে স্থান পাওয়া যায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব আজ চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা মূল্যায়ন না করে নিছক রাজনৈতিক কর্মী অর্থাৎ ছাত্রলীগের কর্মীকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে ভোটার তৈরির চেষ্টা করা হয়, যাতে রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রাখা সম্ভব হয়।

রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের যোগ্যতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তাকে দিয়ে মানসম্মত গবেষণাকর্ম কতটুকু সম্ভব তার উত্তর সবারই জানা। সাম্প্রতিক কালের রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের প্রশ্নবিদ্ধ যোগ্যতার কারণে গবেষণা কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণের আগ্রহের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়, যোগ করেন আব্দুল মঈন।

Abdul Moin Khan

তিনি আরো বলেন, যে কোনো মানসম্মত মৌলিক গবেষণা প্রকাশের মাধ্যম হল- আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত ও স্বীকৃত একাডেমিক জার্নাল। সেসব জার্নালে মৌলিক গবেষণাপত্রগুলো কঠোরতম পিয়ার রিভিউয়ের নানা ধাপ পেরিয়ে ছাপানো হয়ে থাকে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য গবেষণাপত্র কোথায় কোন জার্নালে প্রকাশ হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে কোনো বিশেষ মর্যাদা বা ইনসেনটিভ দেওয়া হয় না। যে কোনো জার্নালে বা পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রকে একই পাল্লায় মাপা হয়। ফলে যে জার্নালে মৌলিক গবেষণাপত্র ছাপাতে বেশ কষ্ট স্বীকার করতে হয় এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে, সেসব জার্নালের পেছনে না ছুটে খুব সহজেই ছাপা যায় এমন জার্নালে গবেষণাপত্রের নামে কিছু একটা ছেপে নিয়োগ বা পদোন্নতি বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলে।

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে একটি কাজ করতে হয়, তা হল- ওই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া। আমরা সে ধ্বংসের খাদের কিণারায় আছি, বলেন আব্দুল মঈন।

তিনি আরও বলেন, আজ যদি কেউ বলে, অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও নকল দিয়ে সরকার এই কাজটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে করছে। তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।