গৃহ নির্যাতনের ৭টি নীরব লক্ষণ!

  • ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গৃহ নির্যাতনের প্রতীকী ছবি।

গৃহ নির্যাতনের প্রতীকী ছবি।

আপনার খুব কাছের ও প্রিয় বন্ধুটিই সময়ে সময়ে গৃহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিদিন। অথচ আপনি কিচ্ছুটি জানেন না, বুঝতেও পারছেন না।

যে বান্ধবীটি তার সঙ্গে হওয়া প্রতিদিনের সব ঘটনা আপনার কাছে বলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন, সেও খুব যত্নের সাথে এড়িয়ে যান তার সাথে ঘটা নির্যাতনের ঘটনাগুলো। হাসিমুখে থাকা প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে দেখে বোঝার কোন উপায়ই নেই, গতরাতে তার সঙ্গে কী হয়েছে!   

অস্বীকার করার কিছু নেই, আমাদের দেশের বেশিরভাগ নারীই কোনো না কোনভাবে গৃহ নির্যাতনের শিকার হন এবং সেই বিষয়টিকে লুকিয়ে রাখেন মিথ্যে হাসির আড়ালে। আপনার অবস্থান থেকে ভাবতেই পারেন- কেন নির্যাতনের শিকার হয়েও মুখ বন্ধ করে থাকবে, কেন প্রতিবাদ করবে না, কেন নিজের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেবে না নির্যাতিতা!

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, সব নারী মানসিকভাবে দৃঢ় ও শক্ত নয়। হয়তো পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে সে শক্ত কোন অবস্থান নিতে পারছেন না। এমন সব ক্ষেত্রে বোঝার চেষ্টা করতে হবে, কাছের ও প্রিয় মানুষটি এমন বিপদজনক পরিস্থিতিতে আছেন কিনা।

লুকিয়ে রাখার পরেও কীভাবে শনাক্ত করবেন, পরিচিত ও কাছের কোন নারী গৃহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন কিনা? কিছু আচরণ স্পষ্টতই প্রকাশ করে গৃহ নির্যাতনের বিষয়টি।

বিজ্ঞাপন

স্বামীর আশেপাশে থাকলেই চুপ হয়ে যাওয়া

সাধারণত সে খুবই হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত থাকেন। কিন্তু তার স্বামী আশেপাশে আসলে এবং স্বামীর সঙ্গে থাকলে একেবারেই চুপচাপ হয়ে থাকেন। খুব একটা কথাও বলতে চান না। কারণ তিনি ভয়ে থাকেন, কখন কোন কথার জের ধরে সমস্যা শুরু হয়!

নিজের বিষয়ে খুবই নিচু ধারণা পোষণ করা

যারা প্রতিনিয়ত গৃহ নির্যাতনের শিকার হন, তারা ধীরে ধীরে নিজের সম্পর্কে খুব নিচে ধারণা পোষণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। সকল কিছুতেই নিজেকে দোষী ভাবেন। কারণ নির্যাতক স্বামী প্রতিটি কারণে তাকেই দোষারোপ করেন। যা তার মনের উপরে দাগ ফেলে দিয়েছে। এমন আচরণ খুব গভীর ভাবে মানসিক নির্যাতনের লক্ষণ প্রকাশ করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/10/1536566266505.jpg

বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া

খেয়াল করুন, হুট করেই আপনার বন্ধুটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে সরে গিয়েছেন কিনা! এমনকি ফোনে তাকে খুব একটা পাওয়াও যায় না। এমনটার পেছনে হাজারো কারণ থাকতেই পারে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্বামীর বাধ্য হতে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে হয়েছে নারীকে।

আঘাতের চিহ্নের কোন ব্যাখ্যা দিতে না পারা

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/10/1536566224805.jpg

চোখের পাশে কীভাবে ব্যথা পেয়েছে জানতে চাইলে বন্ধু জানালেন, দরজায় বাড়ি খেয়ে ব্যথা পেয়েছেন। কিংবা হাতের এমন স্থানে কালশীটে দাগ যেখানে সচরাচর ব্যথা পাওয়ার কথা নয়। প্রশ্ন করলে উত্তরে জানলেন, তিনি নিজেও জানেন না কীভাবে ব্যথা পেয়েছেন! খটকা লাগছে কি এমন কথা শুনে? সেটাই স্বাভাবিক। জেনে রাখুন, এমন ব্যাখ্যাহীন আঘাতের চিহ্ন বহন করে নীরব গৃহ নির্যাতনের লক্ষণ!

একদম শেষ সময়ে অকারণে পরিকল্পনা ক্যান্সেল করা

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একসাথে ঘোরার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু ঘুরতে বের হবার আগের দিন অকারণে মন খারাপের সাথে পরিকল্পনা ক্যান্সেল করে দিলেন আপনার বন্ধু। কারণ জানতে চাইলে সঠিক ও নির্দিষ্টভাবে কোন কারণও দেখাতে পারলেন না। হয়তো তিনি স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি পাননি বের হবার, হয়তো শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখাতে চাননি তিনি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/10/1536566246103.jpg

নিজের পছন্দ, মতামত ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর কোন নিয়ন্ত্রন না থাকা

খুব সামান্য বিষয়েও তিনি সিদ্ধান্ত নিতে দোনামনা করেন, অর্থনৈতিক দিকেও কোন নিয়ন্ত্রন নেই নিজের হাতে। এমনকি নিজে কী পরবেন, কোথায় বেড়াতে যাবেন, কি রাঁধবেন- এই সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া তার হাতে থাকে না। সকল সিদ্ধান্ত নিতে স্বামীর মুখাপেক্ষী হতে হয় তাকে। কারণ তার নিজের নেওয়া কোন সিদ্ধান্ত যদি স্বামীর মনঃপুত না হয়, তবেই শুরু হবে নির্যাতন!

মনের ভুলে নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বসলেও কথা ঘুরিয়ে নেওয়া

গল্পচ্ছলে কিংবা কথায় কথায় হয়তো নির্যাতনের বিষয় তুলে ফেলবেন তিনি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই অন্য কোন কথায় বিষয়টিকে চাপা দিয়ে দিতে চাইবেন। কথা ঘুরিয়ে ফেলবেন। লুকাতে চাইবেন নির্যাতনের বিষয়টি। কারণ এখনও আমাদের দেশে ও সমাজে গৃহ নির্যাতনের বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা, আলোচনা করাকে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখা হয়।

ভয়ানক এই সামাজিক সমস্যা ও ব্যাধি প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সচেষ্ট হতে হবে সবাইকে। যার উপর নির্যাতন চলছে, তিনি নিজের স্বপক্ষে দাঁড়াতে না পারলেও, তার কাছের ও প্রিয় মানুষদের উচিৎ নির্যাতিতার পাশে গিয়ে দাঁড়ানো, তাকে সাহস দেওয়া ও সাহায্য করা।