সেইসব মেয়েদের কথা
মেয়েদের কথা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এর আগে আমি বহুক্ষেত্রে বহুবার লিখেছি কিন্তু এখানে কিছু অন্যপ্রসঙ্গ তুলে ধরতে চাই। পৃথিবীর বড় বড় বহু কাজে মেয়েদের এমন এমন ভূমিকা নিতে হয়েছে যে গোটা মানব সমাজের মাথা ঘুরে গেছে। যারা এই সব ভূমিকা নিয়েছেন তাদের কথা বলে শেষ করা যাবে না। মাদার টেরেসা এর মতো নারীর উপমা কি আমরা কখনো ভুলতে পারব? ভুলতে পারব ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের কথা, ক্রিমিয়ার সেই ভয়ঙ্কর যুদ্ধে যেসমস্ত সৈনিকেরা তার সেবায় বেঁচে উঠেছিলেন। আনা ফ্রাংকের ডায়েরী --- যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক সাড়া জাগানো সেই নথি কেউ কী ভুলতে পারবে! আনা এর পরেও লিখেছিলেন “আমি এখনো বিশ্বাস করি প্রত্যেকটি মানুষই মনের দিক থেকে ভাল” । এছাড়া হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাউলিং, কোকো চেনাল, হেলেনা রুবিন্সটেইন, মেরী কুরি, কবি সাপ্পোহ এরকম আরো আরো কত নারী। দেশের মুক্তিযোদ্ধা নারীরা, স্বাধীনতার জন্য লড়াকু মেয়েরা কিনা করেছে জীবনকে উৎসর্গ করে। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী লেখা বই “নিন্দিত নন্দন” পড়ে চমকে উঠেছি , এত এত নির্মমতার সঙ্গে একটি মেয়ে কিভাবে লড়েছে। আজ এতদিন পরেও একটা মেয়ের একা লড়াইকে সংকেত দিতে কঙ্গনাকে ঝাঁসির রাণীর ভূমিকা অভিনয় করতে হয়। একের পর এক যুদ্ধ নারীকে অপমানের পর অপমান করে গেছে। তারা তবু লড়ে গেছে। সম্মান বাঁচাতে রানি পদ্মাবতীর সেই সম্মান রক্ষার্থে আগুনের “জহরব্রত” পালন।
স্বাধীনতার যুদ্ধে, রোষানলের বিজাতীয় রাগে বারবার সবকিছুর সঙ্গে মেয়েদের অপমান করা হয়েছে যুগে যুগে তা আমরা জানি, তা নতুন কিছু নয় কিন্তু সেগুলোকে সহ্য করে অতিক্রম করে তারা বেঁচে থেকেছে বলেই সভ্যতা আজও সভ্যতা। মধ্য এশিয়ার মোঙ্গল আক্রমণ, ভারতবর্ষে তৈমুরের আক্রমণ, বাংলার মারাঠা আক্রমণ, শোনা যায় মারাঠারা বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেয়েদের নিয়ে গণধর্ষণ করত। সেইসব ভয়ঙ্কর বর্ণনা প্রলে ঘেন্নায়, ভয়ে মনুষ্য সমাজকেই স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছে করবে না। মুখে মেয়েদের বালি ভর্তি করে, হাত বেঁধে তাদের গণধর্ষণ করা হত। বর্গিরা মনে করত এগুলো তাদের এগুলোই বীরত্বের প্রকাশ। ভারতে যখন আফগান আক্রমণ হয় তখনও এরকম অন্যায় কর্ম হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নে জার্মানরা যখন আক্রমণ করেছিল তখন এই অন্যায় কর্মের জন্য ১০ লাখের মতো যুদ্ধশিশুর আগমন হয়েছিল। যাদের পরবর্তীতে বেঁচে থাকাও অসম্মানের হয়ে উঠেছিল। এরকমী কোরীয় যুদ্ধে, আলজেরীয় যুদ্ধে, সাইপ্রাসের তুর্কী আক্রমণে, চট্টগ্রামের সংঘাতে ১৯৮১ সালে, ইরাক-ইরান যুদ্ধে এরকম অজস্র সব যুদ্ধে নারীরা বিভিন্ন ভাবে বারবার চূড়ান্ত, বিকৃত অপমানের স্বীকার হয়েছে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সরোজিনী নাইডু এদের কথা জানা যায় কিন্তু জানা যায়না অথচ অপূর্ব সব দক্ষতা সম্পন নারীদের জন্যি দেশজ সভ্যতা আজও বজায় আছে। ২০১২ সালের ১৮ ই নভেম্বর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মতে ২০৩ জনের মতো মেয়েরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভাবে যোগদান করেছিলেন। পরিসংখ্যান বলে পৃথিবীর যে কোনো বড় যুদ্ধে নারীদের অবদান সবচেয়ে বেশি এবং তাদের ক্ষতির পরিমাণও সবচেয়ে বেশি। বলা হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাসে ১৪ লাখ বাঙালি মেয়েদের বিভিন্ন ভাবে বিপর্যস্ত হতে হয়েছে। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের “যুদ্ধ” উপন্যাসে এর অনেক খানি ধরতে পারা যায়...।
আগামীতেও কোনো এক পর্বে এই ধারাবাহিকের এই আলোচনা করা হবে...