কেউ কী কাঁদছে...
আজ পুনরায় একটি নতুন অলৌকিক গল্প পাঠকদের জন্য রাখা হল। গল্পের নাম ‘কেউ কী কাঁদছে’।
নেহা ও ঈশান আজ প্রায় পাঁচ বছর পূর্ণ করল তাদের দুজনের প্রেমের। গার্লফ্রেন্ড তার একটু আলাদা। বেশি স্টাইলিশ উপহার আর ইদানিং পছন্দ করে না নেহা। একটা নিরিবিলি জায়গা, বই, আর ঈশানের সঙ্গ পেলেই নেহা দারুণ খুশি। তাই নেহাকে অবাক করার জন্য অন্যরকম একটা প্ল্যান কষেছে ঈশান।
ঈশান একটা বাড়ির খোঁজ পেয়েছে। একটা গ্রাম পেরিয়ে জনবসতি থেকে অনেক দূরে , প্রায় ভাঙ্গাচোরা একটা বাড়ি। বাড়ির মধ্যেও কিছুই নেই। এরকম একটা ভাঙ্গা বাড়িতে কেমখাট পেতে, বেলুন লাগিয়ে,কেক রেডি করে, ওয়াইন সাজিয়ে ঈশান নেহাকে ফোন করে।
ঈশান বলে, ‘রেডি তো? দুটো দিন আমার জন্য মনে আছে তো? আমি এখনি তোমাকে আনতে যাব। একঘন্টার মধ্যে গিয়ে যেন রেডি পাই’। নেহা বলে, ‘জায়গাটা কোথায় তো বলো?’। ঈশান কিছু না বলে ফোন রেখে দেয়। ঈশান বাইকে চেপে বাড়িটা থেকে বেরোতেই এক ভদ্রলোককে অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। লোকটা সাইকেল নিয়ে এগিয়ে আসে আর বলে ‘এখানে কী করছেন ভাই?’ ঈশান ভাবে এই লোকটাকে কী বলা ঠিক হবে যে তারা দুজনে প্রেমিক-প্রেমিকা থাকবে! এমনি এখন যা অবস্থা কদিন আগে মেট্রোতে হল। চুম্বনের জন্য কিনা মার! একটু ভেবে ঈশান বলে ‘কিছুই না দাদা শহরের ভিড় থেকে দূরে বন্ধুরা আড্ডা দেব একটু’।
লোকটা বলে ওঠে ‘যাই করো বাবা এখানে রাতে থেকো না। জায়গাটা অভিশপ্ত । বাপ-দাদুর থেকে শুনে আসছি। এদিক দিয়ে বিকেলের পর লোকজনও যায় না। বাপ-মায়ের ছেলে কেন বিপদ টানবে?’ ঈশান একটু গম্ভীর হয়ে বলে ‘দেখুন দাদা, প্রথমত আমি এসব মানি না। আর দ্বিতীয়ত, খারাপ যদি হয় বাড়িতেও হতে পারে। দয়া করে আপনি আসুন’ বলে বাইকে স্টার্ট দেয় ঈশান।
বিকেলে তারা প্রেমিক-প্রেমিকা দু’জনে এই বাড়িতে এসে পৌঁছোয়। দরজা খুলেই আয়োজন দেখে, জঙ্গলের মধ্যে এই বাড়ি দেখে আনন্দে পাগল হয়ে যায় নেহা। এর চেয়ে ভালো সারপ্রাইজ আর হয়না! একটা অজানা জঙ্গলের মধ্যে নামগোত্রহীন বাড়িতে তারা আজ থাকবে এর থেকে ভাল অ্যাডভেঞ্চার কী আর হয়! বিদেশি বহু ছবিতে সে দেখেছে কর্মব্যাস্ত জীবনের থেকে মুক্তি নিতে বিদেশের ছেলেমেয়েরা কিরকম একা একা বেরিয়ে পড়ে তারপর জঙ্গলের মধ্যে তাবু খাটিয়ে সে এক অনিশ্চিতের স্বপ্ন। আজ পুরো না হলেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয় কিছুটা নেহার।
ভাঙা বাড়ির মধ্যে একটাই ঘর। ঘর থেকে বেরোলে একটা সরু লন দিয়ে গেলে মেন গেট। আর ঘর থেকে বেরোলে বামপাশে লাগোয়া বাথরুম। একদম টুটে-ফুটে যাওয়া ভাঙ্গা বাড়ি। বহুদিনের পুরোনো।কিছুটা শিক-বার করা । একটা প্রাচীনের গন্ধ! নেহার ঘোর লাগে।নেহা ঈশানকে জড়িয়ে ধরে। তারা ঘনিষ্ঠ হয়। নেহা ঈশানকে কবিতা পড়ে শোনায়। দুজনে গান গায়। তারপর কেক কেটে , ওয়াইন খেয়ে রাতে শুতে যায়।
(ক্রমশ, আগামী রোববার বাকি অংশ)