জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধা
অমৃতা প্রীতমের কবিতা
৩১ আগস্ট ছিল বিশিষ্ট পাঞ্জাবি কবি ও কথাসাহিত্যিক অমৃতা প্রীতমের জন্মশতবার্ষিকী।
অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালাতে ৩১ আগস্ট ১৯১৯ তাঁর জন্ম। সুন্দরী ও মেধাবী অমৃতার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অমৃত লেহরান’ (অমর ঢেউ) যখন প্রকাশিত হয় তাঁর বয়স মাত্র ১৬ বছর। তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অমৃতা হিন্দি ও পাঞ্জাবি দু’ ভাষাতেই লিখেছেন। কবি ও গীতিকার সাহির লুধিয়ানভি এবং চিত্রশিল্পী ইমরোজের সাথে তাঁর প্রেমের কাহিনী বহুল শ্রুত ও পঠিত। তাঁর প্রকাশিত উপন্যাস ২৪টি, পিঞ্জর বিখ্যাত এবং অনেক ভাষায় অনূদিত উপন্যাস। তাঁর কাব্যগ্রন্থ ২৩টি, গল্প সংকলন ১৫টি, তিনি ভারতের সর্বাধিক অনূদিত সাহিত্যিকদের একজন। জ্ঞানপীটে, পদ্মবিভূষন, আকাদেমিসহ ভারতের সকল শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। মৃত্যু ৩১ অক্টোবর ২০০৫। - অনুবাদক
আমার ঠিকানা
আজ আমি আমার বাড়ির নম্বর
মুছে ফেলেছি
আমার রাস্তার কপালের যে চিহ্ন দিয়ে
সনাক্ত করা হয় আমি মুছে ফেলেছি
আর আমি সব রাস্তার দিক নির্দেশক
তুলে ফেলেছি
তুমি যদি সত্যিই আমার সাথে
দেখা করতে চাও
তাহলে সব দেশের সব শহরের
সব রাস্তার সব দরোজায় টোকা দিও
যেখানে স্বাধীন আত্মার এক ঝলক
দেখতে পাবে
সেটাই হবে আমার বাড়ি।
নেড়ে কুকুর
ব্যাপারটা অতীত থেকে আনা
যখন কোনো খেদ ছাড়াই
তুমি আর আমি ছাড়াছাড়ি করছিলাম
মাত্র একটা ব্যাপার তখন ঠিক বুঝতে পারিনি...
আমরা যখন পরস্পরের কাছ থেকে
বিদায় নিচ্ছিলাম
বাড়িটাও বেচে দিতে তৈরি
শূন্য পাত্র বাসন কোসন আঙিনায় ছড়িয়ে ছিল
সম্ভবত ওরা আমাদের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল
যেগুলো উপুড় হয়ে পড়েছিল
সম্ভবত আমাদের কাছ থেকে মুখ লুকোচ্ছিল।
দরজার ওপর একটি মলিন আঙ্গুরলতা
হয়তো আমাদের কিছু বলতে চেয়েছে সঙ্গোপনে
কিংবা মেজাজ খারাপ করেছে পানির নলের ওপর
এ ধরনের কোনো কিছু
আমার মনে আসেনি
কেবল একটা কিছু বারবার মনে পড়েছে
একটি নেড়ে কুকুর ঘ্রাণ পেয়ে
কেমন করে শূন্য কক্ষে ঢুকে পড়ল
তার পেছনে তালা পড়ল।
তিনদিন পর
যখন বাড়ি হাতবদল হলো
নগদ টাকার জন্য আমরা চাবি তুলে দিই
নতুন মালিকের কাছে আমাদের প্রত্যেকের তালার
তাকে দেখাই একটার পর একটা কক্ষ
একটি কক্ষের ঠিক মাঝখানে পাই
সেই কুকুরের গলিত শব...
একবারও তাকে ঘেউ ঘেউ করতে শুনিনি।
আমি কেবল তার দুর্গন্ধটা পেয়েছি
এবং এখনো হঠাৎ সেই দুর্গন্ধ শুঁকি
বিভিন্ন জিনিস থেকে গন্ধটা আমার কাছে উঠে আসে।
হস্তপাঠ
বিশ্বস্ততার রেখা
কেমন করে পাঠ করতে হয় কেউ জানে না
আমি জানি আমার হাতে
বিশ্বস্ততার একটি রেখা আছে
বিশ্বস্ততার রেখা।
আমি জানি না কেমন করে এর সংজ্ঞা দেব
কেমন করে বলব
এর সীমাবদ্ধতা কী
চিন্তা কতদূর স্বাধীন হবে, বেপথু হবে
এবং কোথায় বিপদ লুকিয়ে আছে।
অন্যের ঠোঁটের কতটা কাছাকাছি
কথাবার্তার আন্তরিকতার কতটুকু
বিশ্বস্ততার ধারণার সাথে যায়,
বিশ্বস্ততার রেখা।
কেমন করে একে গভীর করে
এবং শক্তিশালী
যখন কারো ওষ্ঠ থেকে
এত প্রতিশ্রুতি বেরোয়
যেন শব্দ তাকে মাপতে পারে।
আমি জানি বিশ্বস্ততার রেখা আছে
আমার হাতে
এটা অদৃশ্য হতে পারে
কিন্তু আমি রেখাটা দেখি
সবচেয়ে লম্বা ও সবচেয়ে গভীর রেখাটাই
আমার ছোট্ট হাতে ওপর।
আর এই হচ্ছে পাঁচ আঙুল
পাঁচটি অনুভূতি
পাঁচটি ঈশ্বর
সাক্ষ্য দেয়
বিশ্বস্ততার রেখার।
মিলন ও বিচ্ছেদ
সাদা পাথুর উপত্যাকার ওপর দিয়ে
আমাদের চোখ থেকে অশ্রুর ঝর্ণা বয়ে যায়
এই উপত্যকায় কোনো কিছু জন্ম নেয় না।
সকল প্রেমিক অভিশপ্ত
কোনো সৌন্দর্য বিজয়ী হয় না
সকল রাত সাক্ষী থাকে
অপেক্ষমান চোখ, তারাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এই নাটকের অভিনেতা বদলায়
নতুন করে বলা নাটক মঞ্চে নিয়ে আসে।
গল্প কিন্তু একই
অতীতের ট্র্যাজিক কাহিনী।
এটা আমি জানি তবুও আমি চাই
অজীবন টিকে থাকুক তোমার প্রেম
ভাগ্যক্রমে পেয়ে যাক কিছু ঐশ্বর্য
পাছে তোমার শব্দ হারিয়ে যায়।
কাউকে এমন সেবা দেওয়া হয়নি
এমন কারো সাথে দেখা হয়নি, মনে হয়
মিলন ও বিচ্ছেদ... দুটো একসাথে
অশ্রু আলিঙ্গন করে অশ্রুকে।