বঙ্গবন্ধু : এক সূর্যবংশীর কথা

  • চন্দন চৌধুরী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘বন্ধুবান্ধবরা বলে, “তোমার জীবনী লেখো।” সহকর্মীরা বলে, “রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখো, কাজে লাগবে।” আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, “বসেই তো আছো, লেখো তোমার জীবনের কাহিনী।” বললাম, লিখতে যে পারি না; আর এমন কী করেছি যে লেখা যায়!’ - বঙ্গবন্ধু

‘একদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি...। আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেণু—আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরো একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।’ - বঙ্গবন্ধু

বিজ্ঞাপন

১৯৬৬-৬৯ সালে কারাবন্দি অবস্থায় নিজের জীবনের ঘটনাগুলি চারটি খাতায় লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই লেখাগুলো নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। কিন্তু সেই খাতাগুলো পাওয়া গেল অনেক ঘটনার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন জীবনের ১৯৫৫ সালের ঘটনা পর্যন্ত। জেলে বসে লেখা জীবনের অনন্য দিনগুলোর দলিল এনে রেখেছিলেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। বঙ্গবন্ধুর শোবার ঘর লাগোয়া ছিল ড্রেসিরুম। এতে একটি আলমিরা। তার এক কোণে রাখা ছিল খাতাগুলো। গুছিয়ে রেখেছিলেন স্ত্রী বেগম ফজিলাতুননেছা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মতো ২৬ মার্চ রাতেও হানাদার বাহিনী বাড়িটিতে হানা দেয়, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। দখলে নেয় বাড়িটা। খাতাগুলো তখন বাড়িতেই ছিল। আলমিরাতে এগুলোর সঙ্গে ছিল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা, ডায়েরি, ভ্রমণ কাহিনী ও বেগম ফজিলাতুননেছার হিসাবের খাতাও। বাড়ি তো লুটপাট হলো। কিন্তু এই খাতাগুলো নেবে কে? যুদ্ধের দিনে সের দরে বেচলেও যে লাভ হবে না! আর তাই বুঝি আসল রত্নগুলো ফেলে গেল মাথামোটা লুটেরার দল। যুদ্ধের মাঝেও খাতাগুলো থেকে গেল অক্ষত।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে ৩২ নম্বর বাড়িটাও আরেকদফা খুন হয়। রক্তেভেজা বাড়িটিকে সিল করে দেয় সরকার। তারপর কয়েকটি বছর ঘুমিয়ে কাটায় বাড়িটি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রবাস থেকে ফেরেন বঙ্গবন্ধুর বেঁচে যাওয়া মেয়ে শেখ হাসিনা। কিন্তু তাঁকেও ঢুকতে দেওয়া হলো না বাড়িতে। প্রায় একমাস পর ১২ জুন বাড়িটিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। নিজের বাড়িটা তখন খাঁ খাঁ করছিল। শেখ হাসিনা খুঁজে দেখেন সবকিছু। পেয়ে যান বাবার লেখা স্মৃতিকথা, ডায়েরি ও চীন ভ্রমণের খাতাগুলো। কিন্তু আত্মজীবনীর খাতাগুলো কোথাও দেখতে পান না। তবে কি এগুলো খুনীদের হাতে চলে গেছে! কিছু ফুলস্কেপ কাগজ পেয়ে যান। টাইপ করা। কাগজগুলোর কিছু ইতোমধ্যেই পোকার অধিকারে চলে গেছে। অনেকগুলোরই অর্ধেকের বেশি নেই। দু’ একটা শব্দ পড়ে বোঝা যাচ্ছিল এগুলোতে টাইপ করা ছিল আত্মজীবনীটি! কিন্তু এগুলোর মর্মার্থ উদ্ধার করা যাবে না। শেখ হাসিনা অনেক খুঁজলেন। কিন্তু খোঁজ পেলেন না সেই চার খাতার।

বিজ্ঞাপন

প্রকাশিত হয় বঙ্গবন্ধুর লেখা স্মৃতিকথা, নয়া চীন ভ্রমণ ও ডায়েরি। এর মাঝে আমেরিকার জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এনায়েতুর রহিম বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তখন বঙ্গবন্ধুর জীবন, স্মৃতিকথা ও ডায়েরি নিয়েও কাজ করেন। এগুলোকে বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদের কাজটিও শুরু করেন তিনি। তবে তার মৃত্যুতে সাময়িকভাবে থেমে যায় কাজটি। পরে এটি এগিয়ে নিয়ে যান প্রফেসর সালাহউদ্দীন আহমদ ও শামসুল হুদা হারুন। সঙ্গে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বেবী মওদুদ ও শেখ হাসিনা সম্পাদনার কাজগুলো করেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। মারা যান তার দলের ২৪ জন। এই দুঃখের মাঝে উঁকি দিলো তাঁর বাবার হস্তাক্ষর। সেই চারখান খাতা! এত বছর তবে কোথায় জীবিত ছিল এগুলো! এনে দিলেন শেখ হাসিনারই এক ফুফাত ভাই। এই খাতাগুলো পাওয়া গিয়েছিল বাংলার বাণী সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণির অফিসের ড্রয়ারে। শেখ হাসিনা ধারণা করেন সম্ভবত আত্মজীবনীটি কম্পোজ করার জন্য দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। হতে পারে ছাপানোর জন্যই কম্পোজ করতে দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ আগস্টের দুঃখজনক ঘটনায় থমকে গিয়েছিল সবকিছুই। খাতাগুলো হাতে পেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা কাঁদলেন। এ যে তাঁদের বাবার লেখা। হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে অনুভব করলেন প্রিয় বাবাকে। খাতাগুলোর পাতা হলুদ, জীর্ণ ও নরম হয়ে গেছে। অনেক জায়গার লেখাগুলো ঝাপসা। একটা খাতার মাঝখানের কয়েকটা পাতা নষ্ট, পাঠোদ্ধার কঠিন। তাই শেখ হাসিনা একটা বুদ্ধি করলেন। তিনি আর বেবী মওদুদ পালা করে রিডিং পড়তেন, কম্পোজ করতেন আরেক জন। এসময় কোনো কোনো লেখা বোঝার জন্য তাঁরা ম্যাগনিফাইং গ্লাসও ব্যবহার করেছেন। এসব কাজে সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন শেখ রেহানা। অতঃপর প্রকাশনী সংস্থা ইউপিএল প্রকাশ করল এই অসামান্য বইটি। যা সমকালীন বাংলা আত্মজীবনী সাহিত্যে সবচেয়ে আলোচিত বই।

এই আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধুর বংশ পরিচয়, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা। সেখান থেকে তুলে ধরা কয়েকটি গল্পের সঙ্গে যোগ করা হলো কবিদের কাব্যস্বর :

জন্মেছিলেন টিনের ঘরে!
টুঙ্গিপাড়ার শেখ বংশের এক সময় বেশ নাম ডাক ছিল। এই বংশের গোড়াপত্তন করেছিলেন শেখ বোরহানউদ্দিন নামে এক ধার্মিক ব্যক্তি। মুঘল আমলে এই বংশের লোকজন বেশ শানশওকতের সঙ্গেই ছিলেন। কারণ সেই প্রমাণ এখনো মেলে। মুঘল আমলের দালানগুলোর ভগ্নদশা এখনো টুঙ্গিপাড়ায় আছে। বাড়ির চার ভিটে চারটি দালান। যেহেতু সেগুলো বাসের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল তাই তাদের বংশধরেরা এ বাড়ির চারপাশে টিনের ঘর তুলে বসবাস করতে শুরু করেন। এই টিনের ঘরেই জন্মেছিলেন মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। টুঙ্গিপাড়া নিয়ে তাই লেখালেখিরও অভাব নেই:

“ঘুম পাড়ানি বনকা পিসি ঢ্যাপের মোয়া খেও
আমার বাড়ি টুঙ্গিপাড়া একটু বসে যেও।
শালুক দেব ইছন বিছন নেইকো শীতল পাটি,
দস্যুসেনা ঘর লুটেছে করছে খাঁ খাঁ গাঁটি।

ইকড়ি মিকড়ি চাম চিকড়ি কুতুর কুতুর ছা,
টুঙ্গিপাড়া শেখের বড়ি উইড়া সেথায় যা।”
[রাখাল রাজার জন্যে/ খালেক বিন জয়েন উদ্দীন]

রাজনীতির সংস্পর্শে এলেন যেভাবে
সেটা ১৯৩৮ সালের কথা। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক তখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী শ্রমমন্ত্রী। তাঁরা গোপালগঞ্জে এলেন। সভা হলো। সব কিছু হলো শান্তিপূর্ণভাবে। হক সাহেব গেলেন পাবলিক হল দেখতে আর সোহরাওয়ার্দী সাহেব মিশন স্কুল। শেখ মুজিবুর তখন মিশন স্কুলের ছাত্র। তাই তাঁকে সম্বর্ধনা দিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্কুল পরিদর্শন করে হাঁটতে হাঁটতে লঞ্চের দিকে চললেন। শেখ মুজিবও চললেন সঙ্গে সঙ্গে। তিনি বঙ্গবন্ধুকে কাছে ডেকে বললেন, ‘তোমাদের এখানে মুসলিম লীগ করা হয় নাই?’ শেখ মুজিব বললেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান নাই। মুসলিম ছাত্রলীগও নাই।’ একথা শুনে সোহরাওয়ার্দী আর কিছুই বললেন না। পকেট থেকে নোটবুক বের করে লিখে নিলেন শেখ মুজিবুরের নাম ও ঠিকানা। তারপরের ঘটনা শুধু ইতিহাস। আর তাই তিনি বঙ্গবন্ধু। আর তাঁকে ছাড়া আজ যেন ইতিহাসও হয় না, হয় না জাতির পরিচয়ও :

“এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ, আমি কি তেমন সন্তান?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তাঁরই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলার পথ চলি—
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস, পায়ে উর্বর পলি।”
[আমার পরিচয়/ সৈয়দ শামসুল হক]

কিংবা—
“বাঙালি কি বাঙালি হয় শাড়ি, ধুতি, লুঙ্গি ছাড়া?
থাকে না তার বর্গ কিছুই না থাকলে টুঙ্গিপাড়া।
সুর অসুরে হয় ইতিহাস, নেই কিছু এ দু’জীব ছাড়া
বাংলাদেশের ইতিহাসে দেবতা নেই মুজিব ছাড়া।”
[বঙ্গবন্ধু : আদিগন্ত যে সূর্য / অজয় দাশ]

চোখের অপারেশন করতে যাওয়ার সময় পালাতে চেয়েছেন খোকাবাবু
চশমা ছাড়া বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন, সেটা খুবই কম। অধিকাংশ ছবিতেই দেখা যায় তিনি চশমা পরে আছেন। কিন্তু এই চশমা পরার পেছনেও আছে এক কাহিনী। চোখের অপারেশনের জন্য তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল কলকাতা মেডিকেল কলেজে। ডাক্তাররা তাঁর চক্ষু অপারেশনের কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন দেরি করলে অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্ধারণ করা হয়, অপারেশন করা হবে ভোর ন’টায়। শেখ মুজিবুরের বয়স তখন ষোল। তবুও তিনি ভয়ে কাত। করলেন কী, চেষ্টা করলেন পালানোর। কিন্তু ধরা পড়ে গেলেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো অপারেশন থিয়েটারে। দুই চোখ অপারেশন হলো দশ দিনে। এবং ভালো হয়ে গেলেন তিনি। তবে শর্ত ছিল, কিছুদিন লেখাপড়া বন্ধ রাখতে হবে, পরতে হবে চশমা। সেই থেকে, মানে ১৯৩৬ সাল থেকেই চশমা পরছেন বঙ্গবন্ধু। সেই চশমা নিয়ে হলো কবিতা :

“আমাদের ঘরে চশমাপরা এক ভদ্রলোকের ছবি। মোটা ফ্রেমে চশমায় তাকে ঠিক কবি কবি লাগে। বাবাকে জিজ্ঞেস করলে বলেন—‘তিনি সাত কোটি জনতার কবি। তাঁর হাতের স্পর্শ আছে আমাদের পতাকায়।’ সেদিন স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছবিটিকে দেখি আর ভাবি ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করা যায় কী করে! একদিন আমি যখন ভাবছিলাম ছবিটিই আমাকে দেখে বলে—‘শোনো, সারা জীবনে আমি একটিই কবিতা লিখেছি—বাংলাদেশ।’ সেদিন থেকে স্কুল যাবার পথে প্রতিদিন আমি তাঁর চশমার গ্লাস পরিষ্কার করে দিই, তিনিও হেসে পরে নেন।”
[বালকের চশমাপরা বন্ধু/ চন্দন চৌধুরী]

পিতা পুত্রের ফুটবল খেলা
শেখ মুজিব ও তাঁর বাবা দুজনেই ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। বাবা ছিলেন অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি। আর শেখ মুজিবুর মিশন স্কুলের ক্যাপ্টেন। তাঁদের দুজনের টিমে যখন খেলা হতো তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করত। হবেই না কেন? এমন ঘটনা তো খুবই বিরল। সেই বিরল ঘটনার কথা শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন এভাবে :
‘১৯৪০ সালে আব্বার টিমকে আমার স্কুল টিম প্রায় সকল খেলায় পরাজিত করল। অফিসার্স ক্লাবের টাকার অভাব ছিল না। খেলোয়াড়দের বাইরে থেকে আনত। সবই নামকরা খেলোয়াড়। বৎসরের শেষ খেলায় আব্বার টিমের সঙ্গে আমার টিমের পাঁচ দিন ড্র হয়। আমরা তো ছাত্র; এগারজনই রোজ খেলতাম, আর অফিসার্স ক্লাব নতুন নতুন প্লেয়ার আনত। আমরা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আব্বা বললেন, “কাল সকালেই খেলতে হবে। বাইরের খেলোয়াড়দের আর রাখা যাবে না, অনেক খরচ।” আমি বললাম, “আগামীকাল সকালে আমরা খেলতে পারব না, আমাদের পরীক্ষা।” গোপালগঞ্জ ফুটবল ক্লাবের সেক্রেটারি একবার আমার আব্বার কাছে আর একবার আমার কাছে কয়েকবার হাঁটাহাঁটি করে বললেন, “তোমাদের বাপ ব্যাটার ব্যাপার, আমি বাবা আর হাঁটতে পারি না।’

সে খেলায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হেরে গিয়েছিলেন বাবার দলের সঙ্গে। পুত্র হয়ে পিতার কাছে হারাটা লজ্জার কিছুও ছিল না। পরে সেই পুত্রই হয়ে গেলেন জাতির পিতা:

“হঠাৎ জানতে চাইলেম
‘খোকা’
লোকটির বসবাস কোথা!

প্রথম জন
দ্বিতীয় জন
শেষ জন
এক বাক্যে উচ্চারণ করলেন,

লোকটির বসবাস
বাঙালির হৃদয়পুরে।

জাতির জনকের ডাক নাম ‘খোকা’।”
[হৃদপুরে/ মাকিদ হায়দার]

মনে ছিল এক কবির বাস
বঙ্গবন্ধু ছিলেন সৌন্দর্যের পূজারী। আর তাই দেখা যায় শৈশব থেকেই তিনি তাজমহল দেখার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। আর এটা দেখার জন্য একটা সুযোগও বের করে ফেলেছিলেন। তরুণ মুজিব যখন তাজমহল দেখলেন তখন তার প্রকাশ ছিল এরকম : “সূর্য যখন অস্ত গেল, সোনালি রঙ আকাশ থেকে ছুটে আসছে। মনে হলো, তাজের যেন আরেকটা নতুন রূপ। সন্ধ্যার একটু পরেই চাঁদ দেখা দিলো। চাঁদ অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে আর সাথে সাথে তাজ যেন ঘোমটা ফেলে নতুন রূপ ধারণ করেছে। কী অপূর্ব দেখতে! আজও একুশ বৎসর পরে লিখতে বসে তাজের রূপকে আমি ভুলি নাই, আর ভুলতেও পারি না।”
[অসমাপ্ত আত্মজীবনী/ শেখ মুজিবুর রহমান]

শুধু কি তাই! একবার আব্বাসউদ্দিনের সঙ্গে নৌকায় এক জায়গায় যাচ্ছিলেন। নৌকায় গান গাইছিলেন আব্বাসউদ্দিন। সেই গান শুনে শেখ মুজিবুর লিখেছিলেন, ‘পথে পথে গান চলল। নদীতে বসে আব্বাসউদ্দিন সাহেবের ভাটিয়ালী গান তাঁর নিজের গলায় না শুনলে জীবনের একটা দিক অপূর্ণ থেকে যেত। তিনি যখন আস্তে আস্তে গাইতেছিলেন তখন মনে হচ্ছিল, নদীর ঢেউগুলিও যেন তাঁর গান শুনছে।’

একজন কবি না হলে কি তিনি এমন সুন্দর করে লিখতে পারতেন। তাঁর অন্তরে ছিল এক কবি। আর তাই বুঝি ৭ মার্চের সেই মহান কবিতা তিনি লিখেছিলেন সাত কোটি বাঙালিকে সামনে রেখে : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।...’

বিচিত্র ঘটনার অসংখ্য রঙ আমরা পাই এই মহানায়কের জীবন থেকে। তাঁর লেখায়, ছবিতে, ইতিহাসে...আমাদের মনের স্বপ্নের বুননে।

লেখক : কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রকাশক-বেহুলাবাংলা