আমন ধান কাটা উৎসব
মৌলভীবাজারে শুরু হয়েছে আগাম জাতের রোপা আমন ধান কাটার উৎসব। আমন ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকরা। সোনালি ধান হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে। এর ফলে একই জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষকরা।
করোনার এই সময়ে দেশের মানুষকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আক্রান্ত হয়েছে কৃষক-কৃষানিরা। এর মধ্যেও মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর, বড়লেখাসহ সব উপজেলার বিভিন্ন জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে আগাম জাতের রোপা আমন ধান। সোনালি ধানের ঘ্রাণে ভরে আছে মাঠ।
খাদ্য নিরাপত্তায় চলতি মাসে ব্রি ৪, ব্রি ৭৫, ব্রি ৭১ সহ অন্যান্য আগাম ও উফশী জাতের ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। হাওরাঞ্চলে বোরো ব্যতীত অন্য কোনো ফসল হতো না, অনুকূলে থাকায় সেসব জমিতে এখন রোপা আমন ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে বাজারে ধানের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা।
জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৪২৫ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে ব্রি ধান-৭৫ সহ অন্যান্য আগাম ও উফশী জাতের ধান ১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। কম সময়ে ফলন এবং কম খরচে এই নতুন জাতের ধান চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মৌলভীবাজারের অনেক কৃষক।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া, উত্তর উত্তরসূর হাওর এলাকার নিম্নাঞ্চলে কোনো বছরই বোরো ছাড়া অন্য কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব হয় নাই। এবার হাওরে পানি কম থাকায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে হাইব্রিড ব্রি ধান ৭৫ চাষ করে লাভবান হয়েছে এখানকার প্রান্তিক কৃষকরা।
উত্তর ভাড়াউড়া এলকার মো. আসাদ মিয়া জানান, এ জাতের ধান চাষে সময় কম লাগে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় বালাইনাশক স্প্রে করতে হয় না। ফলে ফলন ভালো হয়েছে।
রাজনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে বাস্তবায়িত খরিদপুর গ্রামের জিলু মিয়ার প্রদর্শনী প্লটে ধান কর্তন করা হয় ২৮ আশ্বিন। কর্তনকৃত এক বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ১৮ মণ। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ ধান ৯০০ টাকা। ধানের খড় বিক্রয় হয়েছে ৩ হাজার টাকা। জমিতে খরচ হয়েছে ১২ হাজার ৫শ’ টাকা। এতে এক বিঘা জমিতে কৃষকের ৬ হাজার ৭শ’ টাকা লাভ হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ ইফফাত আরা ইসলাম জানান, আমন মৌসুমে ব্রি ধান ৭৫ একটি উচ্চফলনশীল জাত। ২০ হতে ২৫ দিনের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। এতে মাত্র ১শ’ ১০ থেকে ১শ’ ১৫ দিনের মধ্যে এ ধান ঘরে তোলা যায়। এ ধানের কাণ্ড শক্ত বলে গাছ হেলে পড়ে না। শীষ হতে ধান ঝরে পড়ে না। জাতটি আগাম হওয়ায় রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী জানান, এ ধানের চাল মাঝারি চিকন এবং সামান্য সুগন্ধি। রান্নার পর ভাত হতে সুগন্ধি ছড়ায়। এ কারণে চালের চাহিদা রয়েছে। এই ধানের জাতটি স্বল্পকালীন হওয়ায় কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিসহ সরিষা ও আগাম শাকসবজি চাষ করে লাভবান হবে। কৃষকদের মাঝে ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগামীতে জেলায় এই জাতের ধানের চাষ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।