কুড়িগ্রামে বাঁধ সংস্কারের অভাবে ২০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা

  • হুমায়ুন কবির সূর্য্য, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, কুড়িগ্রাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কুড়িগ্রামে বাঁধ সংস্কারের অভাবে ২০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা / ছবি: বার্তা২৪

কুড়িগ্রামে বাঁধ সংস্কারের অভাবে ২০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা / ছবি: বার্তা২৪

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কুড়িগ্রাম-ফুলবাড়ী সড়কের সারডোব এলাকার বাঁধটি ২০১৭ সালের বন্যায় ভেঙে যায়। দু’বছর পার হলেও বাঁধটি সংস্কার করা হয়নি। ফলে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রাম প্লাবিত হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

বাঁধের সংস্কার বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ আলী (৬০), নুর হোসেন (৫৫), নজির হোসেনের (৫৮) সঙ্গে। তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাহে হামাকগুলাক কাইয়ো দ্যাখে না। অপিসারগুলা আইসে আর যায়। কয়বার যে মাপজোক করছে তার ইয়ত্তা নাই। এপাকে বান আসি যাবার নাগচে, এমরাগুলা কাজের কাম কিছুই করবের নাগছে না। হামারাগুলা এবারতো সউগ শ্যাষ হয়া যামো।

বিজ্ঞাপন

ছাটকালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার স্কুলে ১৯৫ জন শিক্ষার্থী আছে। এবার বড় বন্যা হলে স্কুল ভবন দুটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে। এতে সরকারের কোটি টাকা নষ্ট হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।’

স্থানীয় চায়ের দোকানদার ফয়েজ উদ্দিন (৬০) বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘চা বিক্রি করেই ছওয়াগুলাক নিয়া কোনো মতোন বাঁচি আছি। নদী গিলি খাইলে যামো কই? হামরাওতো শ্যাষ হয়া যামো।’

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/25/1558790124335.jpg

সারডোব-ছাটকালুয়া এলাকার সাবেক মেম্বার আশরাফ আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গত দু’বছরের বন্যায় ধরলা নদীর তীরবর্তী সারোডোব ও বড়ভিটা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পরে গ্রামবাসীর উদ্যোগে বাঁধ মেরামত করে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা হয়। বাঁশের পাইলিং দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা দিয়ে সহায়তা করে। তাতেও রক্ষা পায়নি গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে বাঁধ মেরামত না হওয়ায় আমরা ভীষণ চিন্তায় আছি। কারণ বর্ষা মৌসুমে বাঁধ সংলগ্ন ছাটকালুয়া স্কুল ও ২০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আশঙ্কা করছে বন্যা ও ভাঙনের কবলে পড়ার। আর এতে ফসলহানি হবার পাশাপাশি বালু জমে আবাদী জমি অনাবাদী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

চর সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাঁধটি মেরামত না করায় ছাটকালুয়া ও সারডোব স্কুলসহ সারডোব আরডিআরএস বাজার ও বেশকিছু ঘরবাড়ি ভাঙনে বিলিন হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত দু’বছরে এলাকাবাসীসহ স্কুলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও বাঁধ ও সড়ক মেরামত হয়নি।’

এ ব্যাপারে সারডোব মৌজার ইউপি সদস্য বাহিনুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড বারবার বাঁধটি রক্ষার আশ্বাস দিলেও বরাদ্দ না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তারা হাত গুঁটিয়ে বসে আছে।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সারডোবের বাঁধ মেরামতে অস্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ করতে ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বর্ষার আগে বরাদ্দ পেলে বাঁধ মেরামত সম্ভব।’