রাঙামাটিতে ১৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে, নিহত ২

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাঙামাটি
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

৬ জুলাই থেকে রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

৬ জুলাই থেকে রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

অব্যাহত বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার অন্তত ১৫ হাজার মানুষ ভিটে-মাটি ছেড়ে প্রশাসনের নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। পুরো রাঙামাটি জেলায় প্রায় দুই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে জেলার লংগদুতে বোট থেকে কাপ্তাই হ্রদে পড়ে পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে মো. রুবেল (২৭) নামে এক বোট চালক মারা গেছেন। বুধবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কাপ্তাই হ্রদের কাট্টলি বিল নামক এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, বুধবার বিকালে বরকলের ভুষণছড়া ইউনিয়নের অজ্যেংছড়ি এলাকায় পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে বিজুরাম চাকমা (৬৭) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। স্থানীয়রা জানান, ছড়ার পাশে খুঁটিতে বাাঁধা গরু বাাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন বিজুরাম চাকমা। তখন ছড়ার পানির তোড়ে ভেসে যান। পরে ভাটি এলাকার পাহাড়ি ছড়ায় থাকা পাথরে আটকা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী।

গত কয়েকদিনের অব্যাহত বর্ষণে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠে কর্মরত রয়েছেন। জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদকর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ তদারকি করছেন। আশ্রিতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/11/1562848134281.jpg

তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ মজুদ আছে। এছাড়াও জেলার সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’

এদিকে, রাঙামাটির সাথে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সংযোগ সড়কগুলোকে ভারী বর্ষণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে এসব সড়ক দিয়ে ভারী যান-বাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করেছে রাঙামাটির সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৬ জুলাই থেকে প্রবল বর্ষর্ণের ফলে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের বিভিন্ন সড়ক, বিশেষ করে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়ক, রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাশালহালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ভারী যান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সড়কগুলো সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত সড়কগুলোতে ভারী যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে, টানা ছয়দিনের হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত আছে। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়েছে ৮৩ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় প্রতিনিয়ত পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

টানা বর্ষণে রাঙামাটি সদর, বাঘাইছড়ি ও কাপ্তাই, কাউখালী উপজেলার খালগুলোসহ কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় চার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে রাঙামাটির সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/11/1562848161214.jpg

রাঙামাটির পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ তাদের মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বৃষ্টির গতি কিছুটা কমে আসলে যেসব স্থানে সমস্যা হয়েছে, সেগুলোতে কাজ শুরু করা হবে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আহসান হাবিব জিতু বলেন, ‘দ্রুতগতিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে, বৃষ্টি না কমলে আরও অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে।’

তিনি জানান, তুলাবান, বারিবিন্দুঘাট, মধ্যম ডেবার পাড়া, মুসলিম ব্লক, পুরান মারিশ্যা, মাস্টার পাড়া বটতলী এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদীতে স্রোতের কারণে এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করছেন। পৌর এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বাজার থেকে খাবার কিনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকাগুলোতে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।