কুড়িগ্রামে বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট
কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭৫ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে করে জেলার ৯ উপজেলার ৪ শতাধিক চরও দ্বীপচরসহ নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় দুই লাখের বেশি মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। লোকজন আশ্রয় নিতে শুরু করেছে পার্শ্ববর্তী উঁচ বাঁধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এসব এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
নদ-নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের পানিবন্দি কিছু পরিবার নৌকার অভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু জায়গায় যেতে পারছেন না। অনেক পরিবার অন্যের নৌকা ধার নিয়ে উঁচু স্থানে আসতে শুরু করেছেন।
চরাঞ্চলগুলোতে শুকনো জায়গার না থাকায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষজন।
তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুড়া এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের টি বাঁধের দেড়শ ফুট পানিতে ভেসে গেছে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর এলাকার মিজানুর রহমান জানান, এই চরে যাদের নৌকা আছে তারা জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে উঁচু স্থানে চলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের নৌকায় উঁচু জায়গার চলে যাচ্ছে। কিন্তু যাদের নৌকা নেই বিপাকে পড়েছে তারা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মহির উদ্দিন জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে পেতে ঘরের ভিতর এক কোমর পর্যন্ত পানি হয়েছে। ঘরের চৌকি ইট দিয়ে ভাসিয়ে কোন রকমে কষ্ট করে ছিলাম যে পানি কমা শুরু হলে আর অন্যত্র যেতে হবে না। কিন্তু পানি কমার পরিবর্তে শুধু বাড়তেছে। বাড়িতে আর থাকার উপায় নাই।
উলিুপর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নটি ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থিত। এখানে চরাঞ্চলসহ প্রায় ২ হাজার পরিবার পানি বন্দি জীবন যাবন করছে। কিছু পরিবার উঁচু সড়কে আশ্রয় নিচ্ছে। সরকারী ভাবে এখনও কোন ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রামের অতিারিক্ত জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন থেকে ২৮০ মেট্রিক টন জিআর চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা আজ (১৪ জুলাই) বিতরণ শুরু হয়েছে। এছাড়াও নতুন করে ১ হাজার মেট্রিক টন চাল, ২০ লাখ টাকা ও ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার সকল সরকারী দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গত ৩০ ঘন্টায় দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।