কুড়িগ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কুড়িগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম।

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম।

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে দুর্ভোগ কমেনি বানভাসি মানুষদের।

ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের ঘর-বাড়ি এখনো বন্যার পানিতে ডুবে আছে। বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বরসহ নানা পানিবাহিত রোগ। দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে এ পরিস্থিতি আরও করুণ।

বিজ্ঞাপন

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ৮৫টি মেডিকেল টিম বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে কাজ করার কথা বললেও দুর্গম এলাকার অনেক চরেই গত ১০-১২ দিনেও তাদের দেখা মেলেনি বলে বানভাসিরা অভিযোগ করেছে।

এ অবস্থায় ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার পরিবার ১০ থেকে ১২ দিন ধরে নৌকায় বসবাস করছে। ঘরে ফিরতে পারছে না উঁচু এলাকায় আশ্রয় নেয়া বানভাসি মানুষরাও। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগে পড়েছে তারা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের নামাচরের কাশেমের স্ত্রী সাহিদা বেগম বলেন, ‘আমার ৪ বছরের মেয়ে মনোয়ারার দুদিন থেকে ডায়রিয়া। পাশের বাড়ির একজনের কাছ থেকে ৪টি স্যালাইন নিয়ে এসে খাইয়েছি। এখনো ডায়রিয়া ভালো হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/21/1563721341094.jpg

উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চেরাগীর আলগা চরের মানিক মিয়া বলেন, ‘আমার সাড়ে ৩ বছরের বাচ্চার দুই দিন থেকে ডায়রিয়া। সেখানে কোনো মেডিকেল টিম নাই। ওষুধও পাওয়ার উপায় নাই। দুইদিন থেকে কাঁচা কলা সিদ্ধ করে খাওয়াচ্ছি।’

একই এলাকার সিরাজুলের স্ত্রী কাজলী বেগম বলেন, ‘আমার বাচ্চার ৩ দিন ধরে জ্বর আর কাশি। বাড়ির চারদিকে পানি। নৌকার অভাবে বাজারে গিয়ে ওষুধ আনতে পারছি না। এখানে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে, কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি ওঠায় সেখানে কোনো ডাক্তার আসে না। আমাদের বাড়িতেও কোনো স্বাস্থ্যকর্মী আসে নাই।

বানভাসিরা জানায়, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় এবং হাতে কাজ না থাকায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে দিনমজুর শ্রেণির মানুষরা।

অন্যদিকে চিলমারী উপজেলা শহরের রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনা এখনো তলিয়ে আছে।

সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা জেলার ৯ উপজেলার ৮ লক্ষাধিক বানভাসি মানুষের জন্য অপ্রতুল। জেলা প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত ৮শ মেট্রিক টন চাল, ৬ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগেও স্বল্প পরিসরে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ বানভাসি মানুষের ভাগ্যে জুটছে না তা।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।