ভাঙা ঘরে জীবন-যাপন রোকেয়া মেম্বারের

  • হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টে, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, লক্ষ্মীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এই ভাঙা ঘরেই থাকেন রোকেয়া মেম্বার, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

এই ভাঙা ঘরেই থাকেন রোকেয়া মেম্বার, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

জগত সংসারের একা এক নারী রোকেয়া বেগম। ৫ বছর ইউপি সদস্যের দায়িত্বে থেকেও ভাঙা ঘরটি এখন তার আশ্রয়স্থল। দায়িত্বে থাকাকালীন তার সততা ও উন্নয়নমূলক কাজ এখনো স্থানীয়দের মনে তার প্রতি ভালোবাসা টিকিয়ে রেখেছে। এখনো তিনি সবার কাছে রোকেয়া মেম্বার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তার ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। ভাগ্যের পরিহাসে তাকে এখন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভিজিডি চাল নিতে হচ্ছে।

এক সময় যিনি অন্যকে সহযোগিতা দিতে এগিয়ে যেতেন, সেই রোকেয়া এখন বসবাস করছেন জরাজীর্ণ একটি কুঁড়ে ঘরে। যার চারপাশ থেকেই ঘরের ভেতরে কি আছে সব দেখা যায়। বড় বড় ছিদ্র হয়ে আছে টিনের চাল। যে কারণে রোদ-বৃষ্টি তার নিত্যদিনের সঙ্গী। যেকোনো সময় ঘরটি ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। তবুও ঝুঁকিপূর্ণ ঘরটিতে তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567170664744.jpg

রোকেয়া বেগম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের আবিরনগর গ্রামের আমজাদ মিঝি বাড়ির মৃত আব্দুল হামিদের মেয়ে ও সাবেক ইউপি সদস্য। তার বয়স ৪৫ বছর।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, অসুস্থ থাকায় বিয়ে করেনি রোকেয়া। তার ভাইয়ের মেয়ে তাহমিনাকে লালন পালন করে বিয়ে দিয়েছেন। তাকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছেন। এখন একটি ঘরের জন্য স্বামীসহ ভাইয়ের মেয়েকে ঘরে আনতে পারছেন না এই জনপ্রতিনিধি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567170677376.jpg

জানা গেছে, অভাব-অনটনের সংসারে রোকেয়া বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেনি। তবে তিনি দক্ষিণ লাহারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাস করেন। কিশোরী বয়সে তিনি দর্জির কাজ শেখেন। পরে গ্রামের গৃহবধূ ও তরুণীদের দর্জির কাজ শেখাতেন। হঠাৎ তার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়ায় আর বিয়ে করেননি। এজন্য বড় ভাইয়ের মেয়ে তাহমিনাকে লালন-পালন করে বিয়ে দিয়েছেন।

এরআগে তিনি ১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত আবিরনগর এলাকার নারী মেম্বার নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন করলেও তিনি তার ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি যে ঘরে বসবাস করেন ঘরটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়-তুফানের মধ্যেও রোকেয়া ঘরটি ছেড়ে কোথাও যান না। এ ঘরটি তার শেষ ঠিকানা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567170732778.jpg

কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, সরকারের ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে রোকেয়া বেগমকে এক ঘর দিলে ভালো হবে। তার পালিত ভাইজিকেও ঘরে আনতে পারবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তারা।

রোকেয়া বেগম বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া ভিজিডি কার্ডের রেশন ও ছয়টি ছাগল পালন করে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করছি। ঘরটি ভাঙা থাকার কারণে ভাইয়ের মেয়ে ও জামাইকে আনতে পারছি না। একটি ঘর পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাইছেন তিনি।’

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, ‘রোকেয়ার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে পরিদর্শনে যেতে বলা হবে।’