লাখাইয়ের কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস আজ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবসের স্মৃতিস্তম্ভ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবসের স্মৃতিস্তম্ভ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

আজ ১৮ সেপ্টেম্বর। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে একসঙ্গে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাজাকারের সহযোগিতায় ১২৭ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছিল পাকহানাদার বাহিনী। আহত হয়েছিলেন শতাধিক নারী-পুরুষ। সেই সময় এতো মরদেহ এক সঙ্গে সৎকারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পাশের নদীতে মরদেহগুলো ভাসিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় নারীরা। সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে করে আজও কেঁপে ওঠেন অনেকে।

একাত্তরের ভয়াবহ স্মৃতির এ দিনটি প্রতি বছর নীরবেই কেটে যায়। প্রশাসন কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না এই দিন। শুধুমাত্র গ্রামবাসীর উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে দিবসটি পালন করা হয়। ওই ঘটনায় শহীদ কিংবা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ঠাঁই হয়নি কোনো তালিকায়।

বিজ্ঞাপন

লাখাই উপজেলার লাখাই ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামটি জেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত। যোগাযোগের তেমন ভালো মাধ্যম নেই। বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হেটে চলাচল করতে হয়। গ্রামে শতকরা ৯৫ ভাগ লোকই হিন্দু-ধর্মাবলী। ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় রাজাকারের সাহায্যে পাকহানাদার বাহিনী ভোর বেলায় হঠাৎ আক্রমণ চালায় ওই গ্রামে। এ সময় গ্রামের শতশত নারী-পুরুষ স্থানীয় একটি পুকুরের পানিতে ডুব দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। তবুও রক্ষা পাননি দুই শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসী। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে পালিয়ে থাকা গ্রামবাসীর মধ্যে ১২৭ জন ধরা পড়ে। এদের সবাইকে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলা হয়।

প্রতিবছর ১৮ সেপ্টেম্বর আসলেই যুদ্ধাহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা স্থানীয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে দিনটি পালন করে থাকেন। তবে দীর্ঘদিন পর এবার স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে দিবসটি পালন করবেন শহীদ পরিবারগুলো। সামান্য পরিমাণ সরকারি সহযোগিতা আর গ্রামবাসীর চাঁদায় সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরাসহ গ্রামবাসী। তাদের দাবি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধী মামলাটি যেন দ্রুত রায় ও কার্যকর করা হয়।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী হরিদাশ রায় বলেন, ‘রাজাকার আলবদরের সহযোগিতায় আমাদের গ্রামে ১২৭ জনকে হত্যা করেছে আর অনেক লোক সে সময় আহত হয়েছেন। সরকার সুযোগ তৈরি করেছে বলেই আমি মামলা করেছি। আশা করি বিচার হলেই ১২৭ জনের আত্মা শান্তি পাবে।’

একই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অমলেন্দু লাল রায় বলেন, ‘বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলেও এখানকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার কেউই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম নেই। এতে আমরা হতাশ।’

জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী পাঠান বলেন, ‘এলাকার কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম সরকারের তালিকায় না থাকার বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা ইতোমধ্যে একটি তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। কৃষ্ণপুরে গণহত্যার মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। আমরা এর দ্রুত রায় চাই।’