মধুমতির ভাঙনে বিলীন স্কুল, ফসলি জমি, সড়ক

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ফরিদপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

ফরিদপুরে মধুমতি নদীর ভাঙনে আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুরিয়া, গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের তিনটি স্কুল, একটি মাদরাসা, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, পাকা সড়ক, বসতবাড়িসহ নদীর গর্ভে চলে গেছে একটি গুচ্ছ গ্রাম। গত ১৫ দিনে ওই এলাকার তিন শতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও অর্ধশতাধিক স্থাপনা।

বিজ্ঞাপন

আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনাম হাসান শিপন জানান, তার ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে দুই কিলোমিটার জুড়ে নদীর এই ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে শিখাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দারুল সালাম দাখিল মাদরাসা, একটি মসজিদ ও বড় গোরস্তান (কবরস্থান) নদীর গর্ভে চলে গেছে। এছাড়া এই ইউনিয়নের একটি গুচ্ছ গ্রাম ও আশ্রয়ন প্রকল্পের ৬৫টি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। আংশিক ভাঙনের শিকার হয়েছে শিকারপুর সড়ক ও চরডাঙ্গা-চরআজমপুর সড়কটি।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১১৮টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হাসান জানান, মধুমতি নদী বাজড়া গ্রামে বেশি পরিমাণ ভেঙেছে। বাজড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ নদীর গর্ভে চলে গেছে। এ এলাকার অর্ধশত বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমার সরদার জানান, দক্ষিণ পাঁচুড়িয়া পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। পঞ্চিম চর-নারানদিয়া গ্রামের প্রাইমারি সরকারি স্কুল ভবন থেকে মাত্র ২০ হাত দূরে অবস্থান করছে নদী। যে কোনো সময় ভেঙে যাবে বিদ্যালয়টি। উত্তর চর-নারানদিয়া গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর, ফসলি জমি, বাঁশতলা বাজার থেকে বোয়ালমারী উপজেলার যাতায়াতের পাকা সড়কের তিন কিলোমিটার নদীগর্ভে চলে গেছে। দক্ষিণ চর-নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পঞ্চিম চর-নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাব খাতুন বলেন, ‘আমার বিদ্যালটি চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী থেকে ২০ হাত দূরে স্কুলের ভবন। আতঙ্কে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ঠিক মতো স্কুলে পাঠাচ্ছে না।’

এদিকে, ভাঙন কবলিত এলাকার একাধিক মানুষ অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয় বোর্ডের (পাউবো) নিযুক্ত ঠিকাদার কোম্পানি নিলয় ট্রেডাস ঠিক-ঠাক বালুর বস্তা ফেলছে না, মাঝে মাঝে কাজ করে আবার থেমে যায়। ঠিকাদারা সঠিক কাজ করলে হয়তো কিছু সম্পদ রক্ষা করা যেত।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি আসাদুজ্জামান ভাঙন কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো কথা জানিয়ে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ভাঙন রোধে পাউবোর মাধ্যমে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, এরই মধ্যে ২২৬টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে, আরও সহায়তা দেওয়ার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’

ভাঙন কবলিত ২০ গ্রামে মানুষের অসহায়াত্বের কথা উল্লেখ করে আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদ হাসান বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় মধুমতির পানি বৃদ্ধির ফলে এ উপজেলা তিনটি ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন কবলিত মানুষগুলো অসহায়ের মতো বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।’

তিনি এই ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।

এই উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা সড়কের অধিকাংশ এবং টগরবন্দ এলাকার দুটি পাকা সড়কের আংশিক নদীর গর্ভে চলে গেছে।

ফরিদপুরের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমাদ বলেন, ‘নদীতে প্রচুর স্রোত। এর মধ্যে জরুরি কাজ করা কঠিন। স্রোত না কমলে কাজ করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মধুমতির ভাঙন রোধে স্থায়ী বাধ করতে ব্যয় হবে প্রায় তিনশ কোটি টাকা। কিন্তু প্রয়োজন মতো অর্থ বরাদ্দ আমরা পাচ্ছি না। এটাই সমস্যা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, জেলার পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁ ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে। তবে আগামী শুকনো মৌসুমে স্থায়ীভাবে যাতে কাজ করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে।’