ভূতের দখলে রূপদিয়ার ভিটা!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আধুনিকতার এই যুগেও একটি গ্রামে এখনো ভূতের আতঙ্ক রয়েছে। ভূতের ভয়ে শত শত বছর ধরে কেউ ওই গ্রামে প্রবেশ করে না। ভূত কী জিনিস তা কিন্তু এখনো চোখে দেখেনি তারা। তবে ভূতের বিভিন্ন আজব কর্মকাণ্ড দেখেছেন বলে দাবি করেন তারা।
প্রায় ৫০০ বছর ধরে যে গ্রামটি এখনো ভূতের দখলে রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে তার অবস্থান রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জঙ্গল ইউনিয়নের সীমান্তে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার আড়পারায়। গ্রামটি রূপদিয়ার ভিটা বলে পরিচিত।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ভূতের দখলে থাকা রূপদিয়ার ভিটাটিতে গিয়ে জানা যায়, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় প্রায় তিন একর জমির উপর গড়ে ওঠে রূপদিয়ার ভিটাটি। সেখানে কয়েক শত পরিবার বাস করত বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেটি রাজা সীতারাম রায়ের দখলে ছিল। হঠাৎ করে একদিন ওই গ্রামে মহামারি দেখা দেয়। আর সেই মহামারিতে প্রাণ হারায় বেশির ভাগ মানুষ।
আর যারা বেঁচে গিয়েছিল তারা ভয়ে তখন ওই ভিটা থেকে পালিয়ে অন্য গ্রামে আশ্রয় নেয়। তারপর থেকে আর কেউ ভয়ে ওই ভিটাতে বসতি গড়ে তোলেনি। শত শত বছর ধরে মানুষ প্রবেশ না করার কারণে অনেক গাছপালা ও জঙ্গলে ঢাকা রয়েছে ভিটাটি।
রূপদিয়া ভিটার পার্শ্ববর্তী গ্রাম ডুমাইনের মৃত জগবন্ধু শীলের ছেলে কিরণ চন্দ্র (৬৫) ও রতন কুমার মণ্ডলের ছেলে শত কুমার (৪৫) বার্তা২৪.কমকে জানান, এখানে ভূতের আস্তানা রয়েছে। দিন-দুপুরেও এই ভিটার আশপাশে কেউ একা যেতে পারে না। ভিটার কাছে গেলেই সাঁ-সাঁ শব্দ আর তীব্র বাতাসের সৃষ্টি হয়।
তারা বলেন, ‘বছর দশেক আগে আমাদের গ্রামের পূর্ণ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে ননী বিশ্বাস একবার এই ভিটার একপাশ পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ দিয়েছিলেন। প্রথম দিন চাষ দেয়ার পর দ্বিতীয় দিন থেকে সেই পাওয়ার টিলারটি আর চালু হয়নি। এখন পর্যন্ত সেটি বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া ভিটাটি চাষ দেয়ার পরই ননী বিশ্বাস প্যারালাইসিসে পঙ্গু হয়ে এখন পর্যন্ত ঘরে পড়ে আছেন।’
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলীম-আল রাজী বার্তা২৪.কমকে জানান, বাস্তবে ভূতের কোনো ভিত্তি নেই। এটা কাল্পনিক। ভূত সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যাখ্যা নেই।
তাহলে রূপদিয়ার ভিটার মূল রহস্য কী এমন প্রশ্নে তিনি জানান, যখন ওই অঞ্চলে কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন সে তার চারপাশের পারিপার্শ্বিকতায় বেড়ে ওঠে। মূলত কাল্পনিক গল্প শুনতে শুনতে তার মন-মানসিকতাও সেভাবে গড়ে ওঠে। এভাবেই ওখানে যুগের পর যুগ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাধ্যমে কুসংস্কার চলে আসছে।