হঠাৎ গড়াই নদীতে ভাঙন, বিলীন হচ্ছে গ্রাম

  • সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম

গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ও নারুয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গড়াই নদীর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। অসময়ে নদী ভাঙনের ফলে নদীর তীরবর্তী বসত-ভিটা ও আবাদি কৃষি জমিসহ বিভিন্ন পাকা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হতে চলছে।

বাপ-দাদার বসত ভিটা ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না নদীপাড়ের মানুষগুলো। নদীগর্ভে সব কিছু চলে যাওয়ার পরেও তাদের স্মৃতি বিজড়িত ভিটাতেই ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন তারা। অনেকেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ভিটেয় বসে। তাদের সবার একটাই দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত নদী ভাঙনের হাত থেকে তাদের রক্ষা করে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গড়াই নদীতে খুব একটা পানি নেই। কিন্তু নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের কবলে পড়েছে জঙ্গল ইউনিয়নের প্রায় ২০-৩০টি বসত বাড়ি। এরই মধ্যে নদীর কূল থেকে নিরাপদ জায়গায় সরে গেছে আরও প্রায় অর্ধশত পরিবার। অনেকেই বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে যেতে চাচ্ছে না। অনেক পরিবারের সদস্যরা সারা রাত জেগে রয়েছেন নদীর পাড়ে। সাজানো ঘর-বাড়িগুলো চোখের সামনে চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে।

গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম

স্থানীয় বাসিন্দারা বার্তা২৪.কমকে জানান, গড়াই নদীর পানি বৃদ্ধির সময়ও নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। আবার পানি কমে যাওয়ার সময়ও ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। উভয় সময়েই নদী ভাঙন দেখা দেয়। বেশি ভাঙনের কবলে পড়ে নারুয়া ইউনিয়নের মরাবিলা, কোনাগ্রাম, জামসাপুর, বাকসাডাঙ্গী, নারুয়া, সোনাকান্দর ও জঙ্গল ইউনিয়নের পোটরা, আখপোটরা, পুষআমলা, বিজয়নগর, সমাধিনগর, হাবাসপুর, বাঙ্গরদাহ ও তারালিয়া গ্রাম।

বিজ্ঞাপন

গড়াই নদী তীরবর্তী জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা গ্রামের কুমারেশ, নিমাই ও মাখন বাড়ই বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতি বছরই গড়াই নদীর ভাঙনে কবলে পড়তে হয় আমাদের। নদী ভাঙনের ফলে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। আমাদের বসত ভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেকেই এখন মারাত্বক ঝুঁকিতে রয়েছে।

গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম

এ সময় তারা আরও বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই জায়গায় বাস করত। এখন এটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি দ্রুত স্থায়ী কোন পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।

নদীর কূল থেকে সরে যাওয়া কালীপদ বিশ্বাস বলেন, রাতের অন্ধকারে নদীর মধ্যে ঘর-বাড়ি ভেঙে চলে গেছে। উপায়ন্তর না দেখে নিঃস্ব হয়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আমরা চাই সরকার নদী ভাঙন থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্য একটি স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম

জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, গড়াই নদীর অব্যাহত ভাঙনে এলাকার কৃষি জমি প্রতি বছরই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ফলে কৃষক নিজ নামীয় জমি হারিয়ে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাছাড়া হঠাৎ করে নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীপাড়ের বসত ভিটাগুলো চোখের সামনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি এবং নদী ভাঙনের হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করার জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, যেভাবে নদীর পাড় ভাঙছে তাতে এক সময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে অনেক গ্রাম।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শফিকুল ইসলাম শেখ বার্তা২৪.কমকে বলেন, নদী ভাঙনরোধে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গড়াই নদীর অসময়ের ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে দ্রুত যোগাযোগ করা হবে।